ভাবসম্প্রসারণ

অনুকরণের দ্বারা পরের ভাব আপন হয় না অর্জন না করলে কোন বস্তুই নিজের হয় না

অনুকরণ ও অনুশীলনের সাহায্যে কোনাে বস্তু সাময়িকভাবে অর্জন করা যায় বটে, কিন্তু তাতে আপন বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা ফুটে ওঠে না। প্রগতিশীল এই সমাজে সকল মানুষ চায় নিজেকে প্রকাশ করতে; নিজের স্বতন্ত্র সত্তা সবার সামনে তুলে ধরতে।নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরার বাসনা মানুষের চিরন্তন।

মানুষ সর্বদা নিজেকে জাহির করার চেষ্টা চালায়। আর তাই সে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই সে অন্যকে অনুকরণ করে নিজের মধ্যে কৃত্রিম ভাবের সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু তাতে কেবলই সে ব্যর্থ হয়। কারণ পরের অনুকরণে যাই করা হােক না কেন তাতে কখনাে নিজের প্রতিভার বিকাশ হয় না। বরং এতে তার প্রতিভা সুপ্তই থেকে যায়। প্রতিভার স্ফুরণ ঘটানাের একমাত্র উপায় হচ্ছে নিজের মধ্যে আপন ভাবের সৃষ্টি করা। এতে তার সৃষ্ট ভাব নিজের ব্যক্তিত্বকে অনেকখানি ফুটিয়ে তােলে। পরের অনুকরণে। নিজের ভাবতাে ফুটে ওঠেই না, বরং তার বােকামির পরিচয় পাওয়া যায়। নিজ সৃষ্ট বস্তু যেমন একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের সাথে মিলে যায়, অন্যের অনুকরণে তা কেবলই দৃষ্টিকটু মনে হয়। নিজে সৃষ্টি করলে সে বস্তুটি তার কাছে যতটা আপন মনে হবে অন্যের সৃষ্ট বস্তুটা কখনাে তার নিজের মনে হবে না। মানুষ তার প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে যখন একটি জিনিস আবিষ্কার করে তখন সে-ই আবিষ্কারটির একচেটিয়া অধিকারী। তার আবিষ্কারের ওপর অন্য কারাে অধিকার থাকে না।

রবীন্দ্রনাথ নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে গীতাঞ্জলি’ রচনা করেছেন। এর একমাত্র স্বত্বাধিকারী তিনিই। অন্য কোনাে কবি এটাকে নিজের বলে দাবি করতে পারবে না। কাজেই অনুকরণ নয়, স্বকীয়তাই মানুষকে মহান করে; এনে দেয় যশ ও খ্যাতি। অপরের কাজের অন্ধ অনুকরণ না করে নিজের স্বকীয়তাকে বিকশিত করা ও তা জীবনে প্রয়ােগ করাই ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।

Related Post