অসি অপেক্ষা মসী অধিকতর শক্তিমান
মানুষকে বিধাতা জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি করে এই সুন্দর পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। শারীরিক শক্তি বা বল প্রয়ােগে এই পৃথিবীকে জয় করার জন্য স্রষ্টা মানুষকে জ্ঞান-বুদ্ধি দেননি, বরং সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রেখে পৃথিবীকে জয় করার জন্য জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন।
অসি অর্থাৎ তলােয়ার বা তরবারী, যার ক্ষমতা বিশাল। যে মারণাস্ত্রের সাহায্যে শত্রু দমন হয়, মুহূর্তে জীবিত জনকে মৃত অস্তিত্বে পরিণত করা সম্ভব। অন্যদিকে মসী অর্থ হলাে কলম বা লেখনী বস্তু। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে মেধার মনন ঘটিয়ে সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দেয়া। এমনকি গােটা দেশও সমূলে ধ্বংস হয়। তাই আপাতদৃষ্টিতে অসি অপেক্ষা মসীর ক্ষমতা নগণ্য মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা সত্য নয়। কারণ, অসির ক্ষমতা সাময়িক বা ক্ষণস্থায়ী। বিশ্বের ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়- চেঙ্গিস খান, নাদির শাহ, হিটলার প্রমুখ তাদের মারণাস্ত্রের সাহায্যে রক্তের বন্যা বইয়ে দিগ্বিজয়ী বীর আখ্যায়িত হলেও ইতিহাসে অক্ষয় সম্মানের আসন লাভ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ক্ষণিকের জন্য তারা পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তার করলেও, তাদের কার্যক্রম নৃশংস ও কলঙ্কিত হওয়ায় মৃত্যুর পর তারা নিন্দিত হয়েছেন, ধিকৃত হয়েছেন এবং চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছেন বিস্মৃতির অতল অন্ধকারে। পক্ষান্তরে, মসী বা লেখনীরূপী অস্ত্রের মাধ্যমে অনেক মনীষী তাদের জ্ঞানগর্ভ দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, চিকিৎসাশাস্ত্র, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে বিশ্ব-মানবতার কল্যাণে তাঁদের চিন্তাধারা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। আজ তারা মানব-সভ্যতার ইতিহাসে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন। তাঁদের অবদানের কথা মানুষ চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
কাজেই অসি অপেক্ষা মসী অধিকতর শক্তিমান। আর এজন্যই বলা হয়, ‘Pen is mightier than the sword.’ এমনকি হাদীস শরীফেও বর্ণনা করা হয়েছে, কলমের কালী শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র। পার্থিব জীবনে যা কিছু শক্তি বা বল দিয়ে জয় করা যায় না তা জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে খুব সহজেই জয় করা যায়।