আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
পৌরনীতি ও নাগরিকতা

আইন স্বাধীনতা ও সাম্য | আইনের প্রকারভেদ | আইনের উৎস | নাগরিক জীবনে আইনের শাসন

আইন স্বাধীনতা ও সাম্য : রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক যাতে সুখে-শান্তিতে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারে, রাষ্ট্র সে জন্য আইন প্রণয়ন করে। আইন ছাড়া সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। আইনের শাসনের মূলকথা হচ্ছে, আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের আইনের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও উৎস, স্বাধীনতার স্বরূপ, প্রকারভেদ, সংরক্ষণের উপায়, সাম্যের ধারণা, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক এবং নাগরিক জীবনে আইনের শাসনের গুরুত্ব ইত্যাদি জানা একান্ত আবশ্যক।
এ অধ্যায় পড়া শেষে আমরা

  • আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • আইনের উৎস বর্ণনা করতে পারব।
  • আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারব।
  • আইনের শাসনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারব।
  • আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করব এবং আইন মেনে চলব।

আইন

আইন বলতে সমাজ স্বীকৃত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমােদিত নিয়ম-কানুনকে বােঝায়, যা মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আইন মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রণয়ন করা হয়। আইনের দ্বারা ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, ব্যক্তির সাথে রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয়। রাষ্ট্র বা সার্বভৌম কোনাে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইন প্রণয়ন ও প্রয়ােগ করা হয়। আইন ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান আছে। আইনের কতগুলাে মৌলিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় । নিচে তা আলােচনা করা হলাে।

  • বিধিবদ্ধ নিয়মাবলি : আইন কতগুলাে প্রথা, রীতি-নীতি এবং নিয়মকানুনের সমষ্টি।
  • বাহ্যিক আচরণের সাথে যুক্ত : আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণ ও কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন: আইনবিরােধী কোনাে কাজের জন্য শাস্তি পেতে হয়। শাস্তির ভয়ে মানুষ অপরাধ থেকে বিরত থাকে।
  • রাষ্ট্রীয় অনুমােদন ও স্বীকৃতি : সমাজের যেসব নিয়ম রাষ্ট্র অনুমােদন করে, সেগুলাে আইনে পরিণত হয়। অন্য কথায়, আইনের পিছনে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব থাকে। রাষ্ট্রীয় অনুমােদন ও স্বীকৃতি ব্যতিরেকে কোনাে বিধিবিধান আইনে পরিণত হয় না ।
  • ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষক : আইন ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে কাজ করে। এজন্য আইনকে ব্যক্তিস্বাধীনতার ভিত্তি বলা হয়।
  • সর্বজনীন : আইন সর্বজনীন। সমাজের সকল ব্যক্তি আইনের দৃষ্টিতে সমান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গােত্র, নারী-পুরুষ, ধনী, দরিদ্র সবার জন্য আইন সমানভাবে প্রযােজ্য।

আইনের প্রকারভেদ

সাধারণত আইনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

১। সরকারি আইন,

২। বেসরকারি আইন ও

৩। আন্তর্জাতিক আইন।

১. সরকারি আইন : ব্যক্তির সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য যেসব আইন প্রণয়ন ও প্রয়ােগ করা হয়, তাকে সরকারি আইন বলে। সরকারি আইনকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন

  • ফৌজদারি আইন ও দণ্ডবিধি : রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কাজ পরিচালনার জন্য এ ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়। কোনাে কারণে ব্যক্তির অধিকার ভঙ্গ হলে এ আইনের সাহায্যে তার অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
  • প্রশাসনিক আইন : রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য এ ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ পরিচালিত হয়।
  • সাংবিধানিক আইন : এ ধরনের আইন রাষ্ট্রের সংবিধানে উল্লেখ থাকে। সাংবিধানিক আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।

২. বেসরকারি আইন : ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক রক্ষার জন্য যে আইন প্রণয়ন ও প্রয়ােগ করা হয়, তাকে বেসরকারি আইন বলে। যেমন- চুক্তি ও দলিল-সংক্রান্ত আইন। এ ধরনের আইন সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

আরো পড়ুন :

৩. আন্তর্জাতিক আইন : এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক রক্ষার জন্য যে আইন প্রণয়ন ও প্রয়ােগ করা হয়, তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে। বিভিন্ন রাষ্ট্র পরস্পরের সাথে কেমন আচরণ করবে, এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের সাথে কেমন ব্যবহার করবে, কীভাবে আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধান করা হবে তা আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।

আইনের উৎস

আইনের উৎপত্তি বিভিন্ন উৎস থেকে হতে পারে। আইনের উৎসগুলাে নিয়ে বর্ণিত হলাে।

১. প্রথা : দীর্ঘকাল যাবৎ কোনাে নিয়ম সমাজে চলতে থাকলে তাকে প্রথা বলে। রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে প্রথার মাধ্যমে মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ হতাে। রাষ্ট্র সৃষ্টির পর যেসব প্রথা রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমােদন লাভ করে, সেগুলাে আইনে পরিণত হয়। যুক্তরাজ্যের অনেক আইন প্রথার উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে।

২. ধর্ম : ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মগ্রন্থ আইনের অন্যতম উৎস। সকল ধর্মের কিছু অনুশাসন রয়েছে, যা ঐ ধর্মের অনুসারীরা মেনে চলে। এসব অনুশাসন সমাজ জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। ফলে এসব ধর্মীয় অনুশাসনের অনেক কিছুই পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে আইনে পরিণত হয়। যেমন- মুসলিম আইন, হিন্দু আইন প্রভৃতি। আমাদের দেশে পারিবারিক ও সম্পত্তি আইনের অনেকগুলাে উপরে উল্লেখিত দুটি ধর্ম থেকে এসেছে।

৩. আইনবিদদের গ্রন্থ : আমরা যখন গল্প, উপন্যাস কিংবা খবরের কাগজ পড়ি,কোনাে শব্দের অর্থ বুঝতে
সমস্যা হলে অভিধান ও বিশ্বকোষের সাহায্য নিই। ঠিক তেমনি, বিচারকগণ কোনাে মামলার বিচারকার্য সম্পাদন করতে গিয়ে আইন সংক্রান্ত কোনাে সমস্যায় পড়লে তা সমাধানের জন্য আইনবিশারদদের বিজ্ঞানসম্মত গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে এসব আইন ব্যাখ্যা করেন, যা পরবর্তীকালে আইনে পরিণত হয়। যেমন- অধ্যাপক ডাইসির ‘ল অব দ্যা কনস্টিটিউশন’ এবং ব্লাকস্টোনের কমেনটরিজ
অন দ্যা লজ অব ইংল্যান্ড।

৪. বিচারকের রায় : আদালতে উত্থাপিত মামলার বিচার করার জন্য প্রচলিত আইন অস্পষ্ট হলে বিচারকগণ
তাদের প্রজ্ঞা ও বিচারবুদ্ধির উপর ভিত্তি করে ঐ আইনের ব্যাখ্যা দেন এবং উক্ত মামলার রায় দেন। পরবর্তীকালে বিচারকগণ সেসব রায় অনুসরণ করে বিচার করেন। এভাবে বিচারকের রায়
পরবর্তীকালে আইনে পরিণত হয়। সুতরাং বলা যায়, বিচারকের রায় আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

৫. ন্যায়বােধ : আদালতে এমন অনেক মামলা উত্থাপিত হয়, যা সমাধানের জন্য অনেক সময় কোনাে
আইন বিদ্যমান থাকে না। সে অবস্থায় বিচারকগণ তাদের ন্যায়বােধ বা বিবেক দ্বারা উক্ত
মামলার বিচারকাজ সম্পাদন করেন এবং পরবর্তী সময়ে তা আইনে পরিণত হয়।

৬. আইনসভা : আধুনিককালে আইনের প্রধান উৎস আইনসভা। জনমতের সাথে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন দেশের আইনসভা নতুন আইন প্রণয়ন করে এবং পুরাতন আইন সংশােধন করে যুগােপযােগী করে তােলে।

নাগরিক জীবনে আইনের শাসন

আইনের শাসনের অর্থ হচ্ছে – কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সবাই আইনের অধীন। অন্যকথায় আইনের চোখে সবাই সমান। আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিকের সমান অধিকার প্রাপ্তির সুযােগকে আইনের শাসন বলে। সবার উপরে আইন- এর অর্থ আইনের প্রাধান্য। আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান-এর অর্থ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ -লিঙ্গ-পেশা নির্বিশেষে আইনের সমান আশ্রয় লাভ করা। এর ফলে ধনী-দরিদ্র, সবল-দুর্বল সকলে সমান অধিকার লাভ করে। আইনের শাসনের প্রাধান্য থাকলে সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে বিরত থাকবে এবং জনগণ আইনের বিধান মেনে চলবে।

আইনের শাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। আইন না থাকলে সমাজে অনাচার অরাজকতা সৃষ্টি হয়। আইনের শাসন অনুপস্থিত থাকলে নাগরিক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সামাজিক মূল্যবােধ, সাম্য কিছুই থাকে না। সাম্য, স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের শাসন অত্যাবশ্যক।

আইনের শাসনের দ্বারা শাসক ও শাসিতের সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। সরকার স্থায়িত্ব লাভ করে এবং রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর অভাবে অবিশ্বাস, আন্দোলন ও বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে। আর বিশৃঙ্খলা, অশান্তি ও হানাহানি সমাজের শক্ত ভিতকে দুর্বল করে তুলে। সমাজে ধনী-দরিদ্র, সবল-দুর্বলের ভেদাভেদ প্রকট ও আকার ধারণ করে। সুতরাং সামাজিক সাম্য, নাগরিক অধিকার, গণতান্ত্রিক সমাজ ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য আইনের। শাসন অপরিহার্য। আইনের শাসন একটি সভ্য সমাজের মানদণ্ড।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.
Back to top button