সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

খাদ্য নষ্ট হয় জীবাণু বৃদ্ধি ও জীবাণু দ্বারা নিঃসৃত উৎসেচকের ক্রিয়ার কারণে। পানি ও উষ্ণতা জীবাণু বৃদ্ধি ও উৎসেচকের ক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য খুবই উপযােগী অবস্থা। ফলে এ অবস্থা খাদ্যকে দ্রুত পচনে প্রভাবিত করে। পচনের সাহায্যকারী এসব বিষয়কে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে খাদ্য বহুদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব। বিশেষ কিছু ব্যবস্থা অবলম্বন করে বাণিজ্যিকভাবে খাদ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাত করা হয়। আমাদের বাসায় সাধারণ সংরক্ষক দ্রব্যের ও যন্ত্রপাতির ব্যবহারে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়। এরকম কয়েকটি পদ্ধতির নাম এখানে উল্লেখ করা হলাে:

১. শুষ্ককরণ: খাদ্যবস্তুকে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা একটি প্রাচীন পদ্ধতি। শুষ্ককরণ পদ্ধতিতে খাদ্যবস্তু থেকে পানি শুকিয়ে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জন্ম এবং এনজাইম ক্রিয়াকে প্রতিহত করা যায়। খাদ্যকে অনেক দিন পর্যন্ত এভাবে সংরক্ষণ করা যায়।

২. রেফ্রিজারেশন: রেফ্রিজারেশন পদ্ধতিতে কাঁচা শাক-সবজি, ফল, রান্না করা খাদ্য, মিষ্টিজাতীয় খাবার কিছুদিন পর্যন্ত রাখা যায়। এ পদ্ধতিতে জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ও এনজাইমের ক্রিয়া, কোনােটাই দীর্ঘদিনের জন্য প্রতিরােধ করা যায় না।

৩. ফিজিং: ফ্রিজিং পদ্ধতিতে খাদ্যকে ও খাদ্যদ্রব্যকে ০° ফারেনহাইট অথবা তার নিচের তাপমাত্রায় রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে খাদ্যদ্রব্য দীর্ঘদিন ভালাে থাকে। ফ্রিজিং পদ্ধতিতে শুধু টাটকা শাক-সবজি, ফল, ফলের রস, মাছ, মাংস সংরক্ষণ করা হয় না, এ পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত খাবার, আইসক্রিম এবং বিভিন্ন রকমের তৈরি খাবারও সংরক্ষণ করা যায়।

৪. সংরক্ষক দ্রব্য: রাসায়নিক পদার্থের দ্বারা খাদ্যের পচন রােধ করা যায়। এগুলােকে সংরক্ষক (Preservative) বলে। খাদ্যকে পচন থেকে রক্ষা করা এবং খাদ্যে যেন ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে সেজন্য রাসায়নিক সংরক্ষক ব্যবহার করা হয়। এগুলাের কোনাে পুষ্টিগুণ নেই। সঠিক পরিমাণের মাত্রা জেনে খাদ্যে সংরক্ষক প্রয়ােগ করা উচিত। রাসায়নিক সংরক্ষক পদার্থগুলাে বিভিন্ন ধরনের এবং ব্যবহারও বিভিন্ন রকম। কয়েকটি উল্লেখযােগ্য রাসায়নিক সংরক্ষকের নাম নিচে উল্লেখ করা হলাে: এগুলাের সঠিক পরিমাণের মাত্রা জেনে সংরক্ষণ খাদ্যে প্রয়ােগ করা উচিত। রাসায়নিক সংরক্ষক পদার্থগুলাে বিভিন্ন ধরনের এবং ব্যবহারও বিভিন্ন রকম।

  • ভিনেগার আমাদের অতিপরিচিত। আচার, চাটনি, সস প্রভৃতিতে ভিনেগার ব্যবহার করে জীবাণুর বৃদ্ধি রােধ করা হয়। এসেটিক এসিডের ৫% দ্রবণকে ভিনেগার বলে।
  • সালফেটের লবণ যেমন sodium bisulphite অথবা Potassium-meta bisulphite ব্যবহার করে ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীবের বৃদ্ধি প্রতিরােধ করা যায়।
  • sodium benzoate, এটি Benzoic Acid এর লবণ। এটি বিশেষ করে ছত্রাক ইস্ট এর বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। ফলের রস, ফলের শাঁস ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য Sodium benzoate খুব উপযােগী।

উপরে উল্লিখিত রাসায়নিক সংরক্ষকগুলাে ছাড়া Propionic Acid এর লবণ এবং Sorbic Acidএর লবণ Sorbates ব্যবহার করে দই, মিষ্টি, পনির, মাখন ও বেকারি সামগ্রী সংরক্ষণ করা হয়। উপরে উল্লিখিত রাসায়নিক সংরক্ষকগুলাে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে ব্যবহার করতে হয়। এই রাসায়নিক পদার্থগুলােকে নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার না করে যদি যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেগুলাে মানবদেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

৫. চিনি বা লবণের দ্রবণে সংরক্ষণ: চিনি ও লবণের দ্রবণ খাদ্যসংরক্ষক হিসেবে বহুবছর পূর্ব থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবণের দ্রবণকে ব্রাইন বলে। চিনি ও লবণের ঘন দ্রবণ বহি-অভিস্রবণের দ্বারা অণুজীবগুলােকে ধ্বংস করে খাদ্যকে পচন থেকে রক্ষা করে। চিনি প্রয়ােগ করে ফলের জ্যাম, জেলি ও মারমালেড তৈরি হয়।

পেয়ারা, আপেল, আনারসজাতীয় ফলকে কেটে পরিষ্কার করে চিনির ঘণ দ্রবণে রেখে বায়ু নিরােধী করে দীর্ঘদিন রাখা যায়। সংরক্ষিত খাদ্য ব্যবহারের আগে যদি খাদ্যের রঙের পরিবর্তন ঘটে অথবা খাদ্য ফুলে উঠে, খাদ্যের উপর সাদা অথবা কালাে আন্তরণ সৃষ্টি হয় এবং খাদ্যের ওপরটা পিচ্ছিল হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে খাদ্যে পচনক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না, কারণ তাহলে ফুড পয়জনিং হতে পারে।

Related Post

Leave a Comment