অ্যারিস্টটল, সক্রেটিস, থিওফ্রাসটাস এবং এ রকম আরও অনেক প্রাচীন মনীষী আছেন যাদের অবদান আজকাল আমরা জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখতে পাই। আজকালকার মনীষীদের বেলায় কিন্তু এটা সম্ভব নয়। তােমাদের মনে প্রশ্ন জাগবে কেন সম্ভব নয়। এর কারণ হল প্রাচীন যুগে জ্ঞানের পরিসীমা ছিল অত্যন্ত সীমিত।
জ্ঞান সাধনায় নিয়ােজিতদের সংখ্যাও ছিল কম। এখন জ্ঞানের পরিধি বেড়েছে বহুগুণ। একাধিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা তাই আর সম্ভব নয়। আমাদের জানার এবং বুঝার সুবিধার জন্য আমাদের সঞ্চিত জ্ঞান সমগ্রকে আমরাই ভাগ করেছি নানাভাবে। এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে বিজ্ঞান, সাহিত্য, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান এ রকম আরও অনেক শাখা-প্রশাখার। মানুষের জ্ঞান সামগ্রিকভাবে অখণ্ড। শেখার ও বুঝবার সুবিধার জন্য একে নানাভাবে ভাগ করা হয়েছে।
তােমরা হয়তাে জান বিজ্ঞানের জ্ঞান খুব দ্রুত বাড়ছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষকদের প্রচুর গবেষণার ফলে তা হচ্ছে। অনেকের মতে বিজ্ঞান বিষয়ের জ্ঞান প্রতি ৮ বছরে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার কারাে পক্ষেই একা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তাই গবেষকদের দেখা যায় তারা বিশেষ কোন এক দিক নিয়েই গবেষণা করেছেন। বিজ্ঞানের সমগ্র জ্ঞানকে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন সময়ে নানান রকমভাবে ভাগ করেছেন। বিজ্ঞানের জ্ঞান যত বাড়ছে এর শাখা-প্রশাখার বিভক্তিও তত বাড়ছে।
বিজ্ঞানের প্রধান দুটি ভাগ বা শাখা হচ্ছে জড়বিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞান। জড়বিজ্ঞানের আরেক নাম ভৌতবিজ্ঞান। জড়বিজ্ঞানে জীবনহীন জড় পদার্থের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, ক্রিয়াবিক্রিয়া, বহুরূপতা এবং এ রকম আরও অনেক বিষয়ে আলােচনা এবং পরীক্ষণ করা হয়। জীববিজ্ঞানের আলােচনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা যাদের জীবন আছে তাদেরকে নিয়ে। Biology -এর বাংলা পরিভাষা জীববিজ্ঞান।
Biology শব্দটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ (bios যার অর্থ জীবন এবং logos অর্থ জ্ঞান) থেকে। অ্যারিস্টটলকে জীববিজ্ঞানের জনক বলা হয়। প্রকৃতিতে আমরা প্রধানত দু ধরনের জীবন দেখতে পাই। একটি উদ্ভিদ এবং অপরটি প্রাণী। জীববিজ্ঞানকে তাই দুটি শাখায় ভাগ করা হয়েছে : উদ্ভিদবিজ্ঞান (Botany) এবং প্রাণিবিজ্ঞান (Zoology)।
উদ্ভিদবিজ্ঞান গাছপালার বৈশিষ্ট্য এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে তাত্ত্বিক আলােচনা এবং গবেষণা করে থাকে। প্রাণিবিজ্ঞান প্রাণীদের বিভিন্ন বিষয়ে সীমাবদ্ধ। বর্তমান কালকে জীববিজ্ঞানের কাল বলা যায়। কারণ এ শতাব্দীর সত্তরের দশক হতে জীববিজ্ঞানের জ্ঞান এত ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যা অন্য কোন সময়ে হয়নি।
জীববিজ্ঞানের প্রধান শাখাসমূহ
জীবের ধরন অনুযায়ী জীববিজ্ঞানকে প্রধানত উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান এ দুটি শাখায় ভাগ করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে অণুজীবদের সম্বন্ধে অনেক বিস্তারিত গবেষণা হচ্ছে। এরা মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। তাই এদের নিয়ে আলােচনা করার জন্য একটি নতুন শাখার সৃষ্টি হয়েছে। একে অণুজীববিজ্ঞান (Microbiology) বলে। জীব ও জীবদেহের কোন দিক নিয়ে আলােচনা করা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে সামগ্রিকভাবে জীববিজ্ঞানকে নিম্নলিখিত প্রধান শাখায় ভাগ করা হয়ে থাকে।
১। মরফোলজি (Morphology) বা অঙ্গসংস্থান বিদ্যা : এ শাখায় জীবের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে আলােচনা করা হয়। অভ্যন্তরীণ গঠন বিষয়কে এনাটমি (Anatomy) বলা হয়।
২। সাইটোলজি (Cytology) বা কোষবিদ্যা : এক বা একাধিক কোষ নিয়ে প্রতিটি জীবদেহ গঠিত। জীববিজ্ঞানের এ শাখায় জীবকোষের গঠন ও কাজ নিয়ে আলােচনা করা হয়।
৩। হিসটোলজি (Histology) বা টিস্যতত্ত্ব : এ শাখায় জীবদেহের বিভিন্ন টিস্যুর আণুবীক্ষণিক গঠন, অবস্থান ও কাজ নিয়ে আলােচনা করা হয়।
৪। ফিজিওলজি (Physiology) বা শারীরবিদ্যা : এ শাখায় জীবদেহের বৃদ্ধি, শ্বসন , রেচন, সালােকসংশ্লেষণ ইত্যাদি নানা ধরনের জৈবনিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলােচনা করা হয়।
৫। ট্যাল্লোনমি (Taxonomy) বা শ্রেণীবিন্যাস-বিদ্যা এ শাখায় জীবদেহের শনাক্তকরণ, নামকরণ ও বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্তিকরণ নিয়ে আলােচনা করা হয়।
৬। জেনেটিক্স (Genetics) বা বংশগতিবিদ্যা : জীবের বৈশিষ্ট্য কীভাবে মাতাপিতা থেকে সন্তানে উত্তরিত হয় এবং কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন হরা যায় এগুলাে আলােচনা ও গবেষণা করাই এ শাখার কাজ।
৭। ইকোলজি (Ecology) বা বাস্তুবিদ্যা : এ শাখায় কোন জীব বা জীব সম্প্রদয়ের ওপর তার চারপাশের পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে আলােচনা করা হয়।
৮। ইভােলিউশন (Evolution) বা অভিব্যক্তি : জীববিজ্ঞানের এ শাখায় জীবের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে আলােচনা করা হয়।
ওপরে বর্ণিত শাখাগুলাে হল জীববিজ্ঞানের মৌলিক শাখা। ক্রমে মৌলিক শাখার জ্ঞানকে বিজ্ঞানীগণ মানব কল্যাণে কাজে লাগাতে শুরু করল। এর ফলে সৃষ্টি হল জীববিজ্ঞানে ফলিত শাখার। কৃষিবিজ্ঞান (Agriculture), চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical Science), সুপ্রজননবিদ্যা (Breeding) এগুলাে হল জীববিজ্ঞানের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য ফলিত (Applied branch) শাখা।
বনবিজ্ঞান, মৎস্য প্রতিপালন, ক্ষতিকর পােকা দমন, পশুপালন এগুলােও ফলিত জীববিজ্ঞানের শাখা। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে। সাধারণত একজাতীয় উদ্ভিদ বা প্রাণীকে এক একটি দলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কোন বিশেষ দলের জীব নিয়ে আলােচনা ও গবেষণা করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে জীববিজ্ঞানের কিছু বিশেষ শাখার সৃষ্টি হয়েছে; যেমন- ফাইকোলজি-তে কেবল শৈবাল সম্বন্ধে আলােচনা করা হয়; মাইকোলজি-তে কেবল ছত্রাক সম্বন্ধে আলােচনা করা হয়; ভাইরােলজি-তে কেবল ভাইরাস সম্বন্ধে আলােচনা করা হয়; হেলমিনথােলজি-তে কেবল ক্রিমি সম্বন্ধে আলােচনা করা হয়, এনটোমােলজি-তে কেবলমাত্র কীটপতঙ্গ নিয়ে আলােচনা করা হয় ইত্যাদি।
এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন :
ওপরে উল্লিখিত বিভাগগুলাের প্রতিটির মধ্যে আরও অনেক উপবিভাগ বা শাখাপ্রশাখা আছে। আগেই বলা হয়েছে। জীববিজ্ঞানে গবেষণা এখন ব্যাপকভাবে হচ্ছে। তার দরুন এর শাখা-প্রশাখাও দিনদিন বাড়ছে। জীববিজ্ঞানকে আমরা এখন যেভাবে দেখছি আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে কিন্তু এ রকম ছিল না। একসময় ধারণা ছিল যে পুরুষের ঘামে ভেজা গরম কাপড় এবং কিছু গম একটা বাক্সে যত্ন করে রেখে দিলে কিছুদিন পরে তা থেকে ইদুর জন্মাবে। জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে এ ভ্রান্ত ধারণা বহুদিন চালু ছিল।
পরবর্তীকালে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর গবেষণার ফলে জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণার বহুল পরিবর্তন হয়। যেসব গবেষকের গবেষণা ও চিন্তার ফল হিসেবে আমরা আজকের জীববিজ্ঞান পেয়েছি তাদের মধ্যে কয়েক জন জীববিজ্ঞানীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তােমাদের জানার জন্য এ অধ্যায় দেওয়া হয়েছে।
অ্যারিস্টটল (Aristotle : ৩৮৪-৩২২ খ্রি.)
মহাজ্ঞানী গ্রিক অ্যারিস্টটলকে প্রাণিবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তিনি সর্বপ্রথম প্রাণিবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের একটা শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। অ্যারিস্টটল একাধারে একজন বিজ্ঞানী, কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ছিলেন। তিনিই প্রথম প্রাণী এবং উদ্ভিদের মূল গঠনের সামঞ্জস্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি লেছবছ নামে একটা দ্বীপে একাধারে পাঁচ বছর অবস্থান করে প্রাণীদের ওপর গবেষণা করেন। প্রাণীদের সম্বন্ধে তিনি “Historia animalium” নামে একখানা জ্ঞানগর্ভ ও তথ্যবহুল পুস্তক রচনা করেন।
থিওফ্রাসটাস (Theophrastus : খ্রি. পূ. ৩৭০-২৮৫)
গ্রিক দার্শনিক থিওফ্রাসটাসের প্রকাশিত কাজের মধ্যে খুব কম কাজ আমরা পেয়েছি। যা পাওয়া গেছে তার মধ্যে ‘On the History of Plants’ এর নয়টি এবং ‘On the Causes of Plants’ এর ছয়টি ভলুম উল্লেখযােগ্য। থিওফ্রাসটাস বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটলের ছাত্র ছিলেন। তিনি সমস্ত উদ্ভিদকে Trees (বৃক্ষ), Shrubs (গুল্ম), Undershrubs (উপগুল্ম) এবং Herbs (বীরুৎ) এই চার ভাগে ভাগ করেন। তাকে উদ্ভিদবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
আল বিরুনী (ALBiruni : ৯৭৩-১০৪৮)
বিশ্বখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং বিজ্ঞানী হিসাবে পরিচিত আল বিরুনী একজন আরবীয় ছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম আবু রায়হান মােহাম্মদ ইবনে আহমদ আল বিরুনী। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। গজনীর সুলতান মাহমুদের সময়ে তিনি ভারতবর্ষে বেড়াতে আসেন এবং সে সময়ে ভাবতবর্ষের অবস্থা সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করেন।
ইবনে সিনা (Ibn Sina : ১৮০-১০৩৭)
ইনি একজন বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ও বিজ্ঞানী ছিলেন। রসায়নবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যায় এবং ভাষাবিদ্যায় তাঁর অসামান্য পারদর্শিতা ছিল। তার সম্পূর্ণ নাম ছিল আবু আলী হুসাইন ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সিনা। তিনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর একশতেরও বেশি বই লিখেন। তার মধ্যে ১৬ খানা বই চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর। তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর ‘আলকানুন’ নামক ১৪ খণ্ডাংশের একটি বই লিখেন।
আল নাফীস (AINafis) :
ইনি একজন আরবীয় বৈজ্ঞানিক ছিলেন। ইনি সর্বপ্রথম (উইলিয়াম হার্ভের ৩০০ বছর পূর্বে) মানুষের রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি সম্বন্ধে সঠিক বর্ণনা দেন। তিনি একজন সফল চিকিৎসাবিদও ছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম আবু আল হাসান আলী ইবনে আন নাফীস। ধারণা করা হয় তিনি ত্রয়ােদশ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার জন্ম তারিখ সম্পর্কে সঠিক জানা যায়নি। তিনি সুদীর্ঘকাল বিজ্ঞানের সাধনা করে প্রায় ৮০ বছর বয়সে দামেকে পরলােকগমন করেন।
উইলিয়াম হার্ভে (William Harvey :১৫৭৮-১৬৫৭)
উইলিয়াম হার্ভে একজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি ১৬২৮ সালে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া পুনরায় আবিষ্কার করেন এবং অতীতের সব ধারণার অবসান ঘটান। ১৬৫১ সালে তিনি বলেন যে, ডিম্বাণু থেকেই সকল জীবনের সূত্রপাত হয়। তাঁকে শারীরবিদ্যার জনক বলা হয়। তিনি প্রাণীদের রক্ত সঞ্চালন এবং রেচন প্রক্রিয়ার সুস্পষ্ট ধারণা দেন ও উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের নাম ‘On the motion of the heart and blood in animals,
এনথনি ফন লিউয়েনহােক (Anthony Von leeuwenhoek : ১৬৩২-১৭২৩)
ডাচ বিজ্ঞানী লিউয়েনহােক সর্বপ্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরী করেন। তবে তাঁর অণুবীক্ষণ যন্ত্র এখনকার অনুবীক্ষণ যন্ত্রের মতাে এত উন্নত ছিল না। নিজের তৈরী অনুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে তিনি ব্যাকটেরিয়া, স্নায়ুকোষ, হাইড্রা, ভলভক্স ইত্যাদি জীবের যে বর্ণনা লিখে গেছেন তা অত্যন্ত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ক্যারােলাস লিনিয়াস (Carolus Linnaeus :১৭০৭-১৭৭৮)
সুইডিস বিজ্ঞানী লিনিয়াস জীবদের দ্বিপদ নামকরণের (Binomial Nomenclature) প্রবর্তক। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ডাক্তার, আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরতত্ত্বের অধ্যাপক। তিনি বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী সংগ্রহ করে তাদের শ্রেণীবিন্যাস ও নামকরণ করেন। জীবজগতের শ্রেণীবিন্যাসের ওপর রচিত “Systema Naturae’তাঁর বিখ্যাত গবেষণা গ্রন্থ। এ ছাড়া ‘Species Plantarum’ এবং Genera Plantarum’ নামে তাঁর আরও দুটি বিখ্যাত গবেষণামূলক উদ্ভিদবিজ্ঞানের বই রয়েছে। তাকে শ্রেণীকরণবিদ্যার জনক বলা হয়।
চার্লস রবার্ট ডারউইন (Charles Robert Darwin : ১৮০৯-১৮৮২)
ইংরেজ প্রকৃতি বিজ্ঞানী ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের (Theory of Natural selection) প্রবর্তক। গেলাপেগােস দ্বীপপুঞ্জের জীবসম্প্রদায় পর্যবেক্ষণ করে ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে বিখ্যাত গবেষণা পুস্তক ‘Origin of Species by means of Natural Selection’ এ তিনি তার মতবাদ প্রকাশ করেন।
আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস (Alfred Russel Wallace : ১৮২৩-১৯১৩)
ইংরেজ প্রকৃতিবিজ্ঞানী ওয়ালেস চার বছর আমাজন নদীর অববাহিকায় ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করেছেন। তার বিখ্যাত বই ‘Travels on the Amazon and Rio Negro’ এর অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা। মালয় উপদ্বীপে তিনি আট বছর গবেষণা করে ‘The Malay Archipelago লিখেছেন। তাঁর পােকামাকড়ের বিরাট সংগ্রহ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হােপ সংগ্রহশালায় রক্ষিত আছে। তিনি চার্লস ডারউইনের সাথে প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ তত্ত্ব ঘােষণার জন্য খ্যাতি লাভ করেন।
গ্রেগর জোহান মেনডেল (Gregor Johann Mendel : ১৮২২-১৮৮৪)
অস্ট্রিয়ার ধর্মযাজক মেনডেল তার গির্জার বাগানে মটরশুটি উদ্ভিদ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেন। এ গবেষণা থেকে তিনি বংশগতি বা জেনেটিক্স এর দুটি সূত্র প্রকাশ করেন, যা এখনও যথাযথ বলে স্বীকৃত। তাঁকে বংশগতিবিদ্যার জনক বলে আখ্যায়িত করা হয়।
জর্জ বেনথাম (George Bentham : ১৮০০-১৮৮৪)
ইংরেজ উদ্ভিদবিজ্ঞানী বেনথামের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হচ্ছে জোসেফ ড্যালটন হুকার -এর সাথে রচিত তিন ভলুম-এর ‘Genera Plantarum’। এ ছাড়া তাঁর রচিত অন্যান্য বই হচ্ছে ‘Handbook of the British Flora’, Flora Hongkongensis’, Flora Australiensis’, utishi
থমাস হেনলি হাক্সলী (Thomas Henly Huxley: ১৮২৫-১৮৯৫)
বিখ্যাত ইংরেজ প্রাণিবিদ টি এইচ হাক্সলী পাখিদের ওপর অনেক কাজ করেন। তিনি পাখিকে ‘মহিমান্বিত সরীসৃপ’ বলে উল্লেখ করেন এবং প্রমাণ করেন যে, সরীসৃপ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তনের ধারায় পাখিদের উদ্ভব হয়েছে। এ ছাড়া তিনি প্রাণিবিদ্যার ওপর অনেক গবেষণা করেন। তিনি চার্লস ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের বিশিষ্ট সমর্থক ছিলেন। হাক্সলী প্রােটোপ্লাজমকে জীবনের ভৌত ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করেন।
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (Alexander Fleming:১৮৮১-১৯৫৫)
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ছিলেন একজন অণুজীববিদ। ১৯১৮ সালে তিনি দেখেন যে ব্যাকটেরিয়া কালচার পাত্রে Penicillium ছত্রাক জন্মালে তার চারপাশে কোন ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। তার এ পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি অনুসন্ধান শুরু করেন। এ অনুসন্ধান ও গবেষণা থেকে তিনি পরবর্তীকালে পেনিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়ােটিক ওষুধ আবিষ্কার করেন, যা লক্ষ লক্ষ লােকের জীবন রক্ষা করছে। অন্য দু জন বিজ্ঞানীর সাথে মিলিতভাবে তিনি ১৯৪৫ সালে নােবেল পুরস্কার লাভ করেন।
ডেভিড প্রেইন (David Prain)
ডেভিড প্রেইন একজন ইংরেজ চিকিৎসক। এবার্ডিন এবং এডিনবরা থেকে মেডিসিনে ডিগ্রি লাভ করে তিনি ভারতীয় মেডিক্যাল সার্ভিস-এ যােগদান করেন ১৮৮৩ সালে ভারতবর্ষে আসেন। তাঁর প্রথম কর্মস্থল ছিল নােয়াখালীর লক্ষ্মীপুরে। পরে তিনি এ অঞ্চলের উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৮৮৭ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা বােটানিক্যাল গার্ডেনের ডাইরেক্টর ছিলেন। বাংলাদেশ ও এর আশপাশের অঞ্চলের গাছপালার বিবরণ সংক্রান্ত তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হল দুই খণ্ডে প্রকাশিত ‘Bengal Plants’। তার আর একটি উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ হল ‘Flora of Sundribuns’।
সালিম আলী (Salim Ali: ১৮৯৬-১৯৮৭)
সালিম আলী ভারতের The Birdman of India নামে পরিচিত বিশিষ্ট পক্ষীবিদ। তিনি ভারতের সকল পাখিকে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে ‘The Indian Birds’ নামে একখানা তথ্যবহুল গ্রন্থ রচনা করেন। এ ছাড়াও তিনি পাখিদের সম্বন্ধে আরও অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তার নিজের আত্মজীবনীও বেশ বিখ্যাত গ্রন্থ। ১৯৮৩ সালে ভারত সরকার সালিম আলীকে তার গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করেন।
স্যার হ্যানস ক্রেবস (Sir Hans Krebs : ১৯০০-১৯৮১)
ইংরেজ বিজ্ঞানী ক্রেবস ১৯৫৩ সালে কোষীয় বিপাকের উপর গবেষণার জন্য E. A. Lipmann এর সাথে মেডিসিন এবং ফিজিওলজিতে নােবেল পুরস্কার পান। ১৯৫৪ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ােকেমিস্ট্রির বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হন। জীবের শ্বসন প্রক্রিয়ার ক্রেবস চক্র তাঁরই আবিষ্কার।
জেমস্ ওয়াটসন এবং ফ্রানসিস ক্ৰীক (James Watson and Francis Crick)
ওয়াটসন এবং ক্রীক দু জন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মানুষের বংশগতির ধারক ডিএনএ (DNA) অণুর আণবিক গঠন আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পি এইচ ডি ডিগ্রির জন্য গবেষণা করার সময় তারা ১৯৫৩ সালে ডিএনএ (DNA) অণুর আণবিক গঠন আবিষ্কার করেন। এ আবিষ্কারের জন্য তাঁরা ১৯৬৩ সালে নােবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। ওয়াটসন এবং ক্রীক সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন যে ডিএনএ (DNA) অণু দ্বিসূত্রক এবং হেলিক্যাল (সর্পিল)।
মেলভিন ক্যালভিন (Melvin Calvin : জন্ম ১৯১১)
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যালভিন সবুজ উদ্ভিদে কার্বন বিজারণ পথ সক্রান্ত গবেষণার জন্য বিখ্যাত। ক্যালভিন আর একজন বিজ্ঞানী ব্যাশাম এর সহযােগিতায় উদ্ভিদে কার্বন বিজারণ এর যে প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন তা ক্যালভিন-ব্যাশাম-এর পথ নামে পরিচিত। তিনি ১৯৬১ সালে নােবেল পুরস্কার লাভ করেন।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈশিষ্ট্য
উদ্ভিদ ও প্রাণীর অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে আমরা উদ্ভিদ ও প্রাণীর তুলনা করব।
১। আকার ও আকৃতি : উদ্ভিদের নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি থাকে না কিন্তু প্রাণীদের নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি থাকে।
২। জীবনকাল : উদ্ভিদের জীবনকাল নির্দিষ্ট থাকে না। উপযুক্ত পরিবেশে বহুকাল বেঁচে থাকে। অনুকূল পরিবেশে | প্রাণী একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
৩। বৃদ্ধি : উপযুক্ত পরিবেশে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বহুকাল ধরে চলতে থাকে। প্রাণীদের বৃদ্ধি জীবনের একটা বিশেষ। সময় পর্যন্ত হয়। তারপর বন্ধ হয়ে যায়।।
৪। চলাচল : স্থলজ উদ্ভিদের বেশিরভাগ মাটিতে শিকড়ের সাহায্যে সংলগ্ন থাকে। এ কারণে মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে না। তবে কোন কোন অঙ্গ সামান্য নড়াচড়া করতে পারে। বেশিরভাগ প্রাণীই মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে। কিছু প্রাণী (যেমন- স্পঞ্জ) চলাচলে অক্ষম।
৫। খাদ্যের প্রকৃতি : উদ্ভিদ কঠিন খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। প্রাণী কঠিন, তরল সব ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
৬। পুষ্টি : উদ্ভিদ স্বভােজী, সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় প্রয়ােজনীয় খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারে। প্রাণী নিজের খাদ্য নিজের দেহে তৈরি করতে পারে না। খাদ্যের জন্য এরা মূলত উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জীবের ওপর নির্ভরশীল।
৭। কোষের গঠন : উদ্ভিদ কোষের কোষপ্রাচীর মৃত, কোষগহ্বর বড় এবং কোষে প্লাস্টিড থাকে। প্রাণী কোষে কোষপ্রাচীর থাকে না, ছােট ছােট কোষগহ্বর থাকে, সেন্ট্রিওল থাকে, প্লাস্টিড থাকে না।
৮। প্রজনন : উদ্ভিদের অঙ্গজ, অযৌন এবং যৌন প্রজনন প্রক্রিয়াতে বংশবৃদ্ধি ঘটে। প্রানীদের প্রজনন প্রধানত যৌন প্রক্রিয়ায় হয়। কিছু কিছু প্রাণীতে অঙ্গজ এবং অযৌন প্রক্রিয়ায় বংশবৃিদ্ধি হয়।
৯। তন্ত্র : উদ্ভিদ দেহে তন্ত্র থাকে না। বেশিরভাগ প্রাণীদের দেহে বিভিন্ন তন্ত্র থাকে।
সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ উন্নয়নে জীববিজ্ঞানের ভূমিকা
জীববিজ্ঞানের প্রধান দুটি শাখা উদ্ভিদবিজ্ঞান এবং প্রাণিবিজ্ঞান। এ ছাড়া জীববিজ্ঞানের আরও শাখা-প্রশাখা আছে। এদের কিছু কিছু তােমরা এ অধ্যায়ের আগের অংশে জেনেছ।
তােমাদের এ জ্ঞানের ভিত্তিতে জীববিজ্ঞানের গুরুত্ব নিয়ে আলােচনা করব। কৃষিবিদ্যার অনেক শাখাপ্রশাখা আছে। মৎসবিদ্যা, পশুপালন, কৃষি, হাঁস-মুরগি পালন, মৌমাছি পালন, রেশম পােকা পালন ইত্যাদি অন্যতম। এসব জ্ঞানের প্রয়ােগ করে অর্থনৈতিক উন্নতি সভব।
উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয়েই প্রাকৃতিক পরিবেশের অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় উপাদান। উদ্ভিদ এবং প্রাণী বিভিন্নভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল তােমরা তা জান। বাস্তুবিদ্যা আমাদেরকে উদ্ভিদ ও প্রাণীর গুরুত্ব এবং পরিবেশে এদের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করে দেয়। জ্ঞান সম্পন্ন সচেতন নাগরিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাস্তুবিদ্যার সঠিক প্রয়ােগে পরিবেশের বিপর্যয় রােধ করা যায়। আর্থিক সচ্ছলতা এবং সুন্দর পরিবেশ সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
প্রকৃতি ও জীবের উদ্ভব
প্রকৃতি কাকে বলে তােমরা তা জান। আমরা প্রকৃতিতে বাস করছি। আমাদের চারপাশে মাটি, পানি, বায়ু, নানা রকমের গাছপালা, জীবজন্তু, পােকামাকড় রয়েছে। এ সব মিলেই প্রকৃতি। প্রকৃতিকে আমরা এখন যেমন দেখছি লক্ষ লক্ষ বছর আগের চেহারা কিন্তু এমন ছিল না। লক্ষ বছর পরেও এর চেহারা এমন থাকবে না। এর অর্থ হচ্ছে প্রকৃতি পরিবর্তনশীল। প্রকৃতির পরিবর্তন নানান রকম প্রাকৃতিক শক্তি যেমন নদীর স্রোত, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ইত্যাদি কারণে হয়।
মানুষের নানান রকম কাজও প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটায়। যেমন, বনভূমি ধ্বংস, বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি। প্রকৃতির উদ্ভব হয়েছে কীভাবে এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনার অন্ত নেই। পৃথিবীর জন্ম নিয়ে নানা রকম তত্ত্ব আছে। এসব তত্ত্বের মধ্যে মােটামুটিভাবে গ্রহণযােগ্য তত্ত্ব অনুযায়ী সূর্য বা সূর্যের মতাে কোন নক্ষত্রের অংশবিশেষ অপর আর এক নক্ষত্রের টানে ছিটকে বের হয়ে আসে।
পৃথিবীসহ অন্য গ্রহ উপগ্রহগুলাে ছিটকে আসা সূর্যের অংশ থেকেই সৃষ্টি। এ তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবী প্রথমে উত্তপ্ত গ্যাসীয় অবস্থায় ছিল। পরে ঠাণ্ডা ও ঘনীভূত হয়ে বর্তমান পৃথিবীর রূপ নিয়েছে।। পৃথিবীর অভ্যন্তর এখনও অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় রয়েছে। প্রকৃতি প্রাথমিক অবস্থায় জীবন ধারণের জন্য একেবারেই উপযােগী ছিল না। পরে ধীরে ধীরে প্রকৃতি জীবন ধারণের উপযােগী হয়ে ওঠে। এখন তােমাদের প্রশ্ন হতে পারে প্রকৃতিতে জীবন এলাে কীভাবে?
উদ্ভিদ ও প্রাণী কী প্রথম থেকেই প্রকৃতিতে ছিল? জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কেও নানা ধরনের মতবাদ প্রচলিত আছে। এ অধ্যায়ের প্রথমে এ সম্পর্কে একটি প্রাচীন মতবাদের কথা তােমাদের বলেছি। তবে জীবনের উদ্ভব সম্পর্কে ওপারিন নামে রাশিয়ান বিজ্ঞানীর মতবাদই এখন পর্যন্ত গ্রহণযােগ্য রয়েছে। ওপারিনের (Oparin) মতবাদ অনুসারে জীবনের উদ্ভবের সময় প্রকৃতি অনেক গরম ছিল।
বায়ুমণ্ডলে নানা রকমের গ্যাস ছিল, যার মধ্যে অ্যামােনিয়া (NH3) হাইড্রোজেন (NH) মিথেন (CH4) হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN) ছিল। প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাত হত। এ রকম পরিবেশে বিভিন্ন গ্যাসের সংমিশ্রণে জীববিজ্ঞানীগণ যাকে জীবনের প্রথম অণু বলে থাকেন, যা অ্যামাইনাে এসিড নামে পরিচিত, তার উদ্ভব হয়।
অ্যামাইনাে এসিডকে অন্তর্ভুক্ত করেই প্রথম কোষ বা জীবনের উদ্ভব হয়। আদি প্রকৃতির জলজ পরিবেশেই প্রথম জীবনের উদ্ভব হয়। প্রথম কোষে প্রােটোপ্লাজম ছিল, অ্যামাইনাে এসিড ছিল, যার অনেকগুলাে অণু একত্রিত হয়ে ডিএনএ (DNA) অণুর সৃষ্টি হয়েছিল। নিউক্লিয়াসবিহীন এ কোষ থেকেই প্রথমে নিউক্লিয়াসসহ কোষ এবং পরবর্তীকালে বহুকোষী জীবের উদ্ভব হয়।
অনুশীলনী
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। গ্রেগর জোহান মেন্ডেল কী জন্য বিখ্যাত?
ক. প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের জন্য
খ. রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য
গ. পেনিসিলিন আবিষ্কারের জন্য
ঘ. বংশগতির সূত্রের জন্য।
২। বাংলাদেশের উদ্ভিদের বিশদ বিবরণ প্রদানের জন্য কোন বিজ্ঞানীর অবদান বেশি?
i. অ্যারিস্টটল
ii. থিওফ্রাসটাস
iii. ডেভিড প্রেইন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. iii
ঘ. ii ও iii
নিচের অনুচ্ছেদ অবলম্বনে ৩ নং ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও। প্রকৃতিতে জীবের উদ্ভব সম্পর্কে ওপারিনের মতবাদ অধিক গ্রহণযােগ্য। এ মতবাদ অনুযায়ী জীব সৃষ্টির শুরুতে বিভিন্ন গ্যাসের সংমিশ্রণে জীবনের প্রথম অণু অ্যামাইনাে এসিডের সৃষ্টি হয়। অতঃপর অ্যামাইনাে এসিডকে অন্তর্ভুক্ত করেই জলজ পরিবেশে প্রথম কোষ বা জীবনের উদ্ভব হয়। প্রথম কোষ নিউক্লিয়াসবিহীন ছিল। তা থেকে নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ এবং পরবর্তীতে বহুকোষী জীবের উদ্ভব হয়।
৩। ওপারিনের মতবাদ অনুযায়ী এবং প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে জীব সৃষ্টির শুরু থেকে বর্তমানের দিকে পর পর সাজালে নিচের কোনটি সঠিক?
ক. অ্যামাইনাে এসিড → এক কোষী শৈবাল → ব্যাকটেরিয়া → এক কোষী অ্যামিবা
খ. অ্যামাইনাে এসিড → এক কোষী অ্যামিবা ” ব্যাকটেরিয়া – এক কোষী শৈবাল
গ. অ্যামাইনাে এসিড → ব্যাকটেরিয়া – এক কোষী শৈবাল → এক কোষী অ্যামিবা
ঘ. অ্যামাইনাে এসিড → ব্যাকটেরিয়া – এক কোষী অ্যামিবা → এক কোষী শৈবাল
৪। ওপারিনের মতবাদ অনুযায়ী এবং প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে স্থলজ পরিবেশে নিচের কোন জীবটির আগমন সবার শেষে ঘটার কথা?
ক. পাখি
খ. মানুষ।
গ. মহিষ
ঘ. বটবৃক্ষ
সৃজনশীল প্রশ্ন :
১। সিংগুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালেই কালীদাস উদ্ভিদ ও প্রাণীদের ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে ওঠে। তার এ কৌতূহল দেখে বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তাকে বড় হয়ে জীববিজ্ঞানের ওপর পড়াশুনার পরামর্শ দেন। কালীদাস সে মােতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেন। তার পঠিত বিষয়ের মধ্যে জীববিজ্ঞানের মৌলিক শাখ; যেমন, শারীরবিদ্যা ও ফলিত শাখা উভয়ই অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ফলিত শাখার ওপর কাজ শুরু করেন এবং উচ্চ ফলনশীল বহু ফল ও ফসল উদ্ভাবন করেন। তিনি আজও এ কাজে নিয়ােজিত আছেন।
ক. জীববিজ্ঞান কাকে বলে?
খ. শারীরবিদ্যাকে জীববিজ্ঞানের মৌলিক শাখা বলা হয় কেন?
গ. কালীদাসের কাজ কেন জীববিজ্ঞানের ফলিত শাখার অন্তর্ভুক্ত তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কালীদাসের সাফল্যের পিছনে মৌলিক শাখার গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।