অন্যের অন্যায়, অমানবিক ও অশুভ আচরণ কখনাে মানুষের অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ হতে পারে না। কলুষময় পরিবেশের মধ্যে থাকলেও প্রকৃত মানুষের সাধনা হওয়া উচিত সত্য, ন্যায় ও মানবিকতার আদর্শে জীবন গঠন। মনুষ্যত্বের এই সাধনাতেই মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে। পরের সুকতিতে অনুপ্রাণিত হওয়া প্রশংসনীয় কিন্তু পরের স্বার্থপরতায় প্রভাবিত হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত । চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ও মানসিকতার বিচারে সংসারে সব মানুষ অভিন্ন চরিত্রের হয় না, মানুষের মধ্যে ভালােও আছে মন্দও আছে; সৎও আছে, অসও আছে। এদের মধ্যে উত্তম মানুষই হলাে সমাজের আদর্শ। তারা চিন্তা ও কর্মে সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী, এদের জীবনযাপন সহজ-সরল অনাড়ম্বর। অন্যায় পথে অর্থবিত্ত অর্জনের সব ধরনের মােহ থেকে এঁরা মুক্ত। নিজের সাধ্য ও সামর্থমতাে তারা। অন্যের কল্যাণের চেষ্টায় সচেষ্ট থাকেন। পক্ষান্তরে যারা অধম তারা স্বার্থান্বেষী, অর্থলােলুপ। সমাজের মঙ্গলের চেয়ে ছলে-বলে-কৌশলে অন্যায় পন্থায় নিজের স্বার্থ হাসিলই এদের একমাত্র লক্ষ্য। স্বভাববৈশিষ্ট্যের দিক থেকে তারা নীচ ও খল প্রকৃতির। অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ ও বিত্তের দম্ভে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে। অন্যকে শােষণ ও লুণ্ঠন করে সম্পদ বৃদ্ধিতে তাদের আনন্দ। অন্যকে অত্যাচার করে তারা পায় বিকৃত পরিতৃপ্তি। ঈর্ষা, হিংসা, জিঘাংসা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার জোরে তারা সমাজে হয়তাে সাময়িক দাপটে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে তারা নিন্দিত হয়। ইতিহাস এই শ্রেণীর লােকদের মনে রাখে না। যদি রাখে তবে তা এদের ঘৃণিত ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য, যেন অন্যেরা এদের পথ অনুসরণ না করেন। এসব নীচ ও অধম লােকের পশুস্বভাব কখনাে মানুষের অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারে না। এদের পথ সর্বদাই পরিত্যাজ্য। এদের সঙ্গে সম্পর্কও পরিহার্য। বস্তুত অধম না হয়ে উত্তম হওয়াই মনুষ্যত্বের সাধনা। উত্তম আদর্শই মানবজীবনের আদর্শ। অধমের কার্যকলাপের বিপরীতে উত্তম কার্যকলাপের আদর্শ স্থাপনই প্রকৃতপক্ষে উত্তম চরিত্রের মানুষের লক্ষণ। সেই জন্যই ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন
কুকুরের কাজ কুকুরে করেছে কামড় দিয়েছে পায়,
তাই বলে কি কুকুরকে কামড়ানাে মানুষের শােভা পায়?
প্রকৃত মানুষ হতে হলে অন্যের কদর্য ব্যবহারে প্রভাবিত হলে চলবে না। মহৎ অভিপ্রায় সফল করে তুলতে হলে এই সহষ্ণুিতা অপরিহার্য।
এই বিভাগের আরো ভাবসম্প্রসারণ :
Recent Comments