আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
এসএসসিবাংলা রচনা সম্ভার

নদীতীরে সূর্যাস্ত

নদীতীরে সূর্যাস্ত

গােধূলির আবিরে রাঙা অস্তয়মান লাল সূর্য। দিনের শেষে থেমে আসে চারপাশের কর্মকোলাহল। প্রকৃতিতে নেমে আসে অন্যরকম এক প্রশান্তি। পশু-পাখি নীড়ে ফিরে যেতে থাকে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর শুরু হয় শ্রান্ত মানুষের ঘরে ফেরার পালা। চরাচরে সর্বত্রই বিরাজ করে এক নৈসর্গিক নীরবতা। সূর্যের রক্তিম আলাের ছটায় প্রকৃতি যেন অন্যরকম রঙে নিজেকে সাজায়।

আরো পড়ুন : বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য

নদীর তীরে দাঁড়ালে সূর্যাস্তের এক মনােমুগ্ধকর সৌন্দর্য অবলােকন করা যায়। বিস্তৃত নদীতীর, সামনে কল্লোলিত নদী, স্বর্গীয় আভায় রঞ্জিত আকাশ— এই শােভা, এই অপরূপ রূপের মাধুরী দেখে দু চোখের তৃষ্ণা যেন মেটে না। বিশ্বস্রষ্টা যেন নিজেকে আড়ালে রেখে মােহময় সৌন্দর্যের মধ্যে মানুষকে ডুবিয়ে রেখেছেন। রহস্যময় এক মায়ার জগৎ সৃষ্টি করে খেলছেন আড়ালে বসে। সূর্যাস্তের সময় নির্জন নদীতীরে দাঁড়ালে এমন অধ্যাত্ম-ভাবনা ভেসে আসে মনে। নদীতীরে সূর্যাস্ত দেখে মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার কিছু চরণ :

‘সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা
আঁধারে মলিন হল, যেন খাপে ঢাকা
বাঁকা তলােয়ার।

দিবসের অবসান আর রাত্রির আগমনের এই মাহেন্দ্রক্ষণটিতে পৃথিবী যেন মিলন-বিরহের খেলায় মেতে ওঠে। আকাশ আর মাটি যেন মুখােমুখি মৌনমুখর। সে অপার্থিব মৌনতা ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ চরাচরে নদীবক্ষে, পর্বতে, অরণ্যে। ছায়াঢাকা গ্রামের নিবিড় প্রেক্ষাপটে সূর্যাস্তের দৃশ্য ঘােমটা-টানা লাজুক বধূর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। নদীতীরে সূর্যাস্ত দেখতে গেলে বহুমাত্রিক সৌন্দর্য চোখে পড়ে। সামনে বিশাল জলরাশি, ওপরে রক্তিম উদার আকাশ, গােধূলি লগ্নে উন্মুক্ত নদীতীরে দাঁড়ালে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভােগ করা যায়।

আরো পড়ুন : বর্ষণমুখর একটি দিন

আকাশের রক্তিম রঙে নদীর পানি রঙিন হয়ে ওঠে। এ সময় দিগন্তে দ্রুত রং বদলাতে থাকে। অস্তগামী সূর্যের লাল টিপ কপালে পরে পৃথিবী যেন নববধূর মতাে সাজে। ঝিলিমিলি ঢেউখেলানাে সােনারঙের পানিতে পালতােলা নৌকা ভেসে চলার দৃশ্য অপূর্ব লাগে। নদীর তীর ঘেঁষে বাতাসের স্রোত সাঁতরে উড়ে চলে সাদা বক, গাঙচিল, বালিহাঁসের ঝক। রক্তিম সূর্য তার উষ্ণতা বিলিয়ে লাল হতে হতে নিচে নামতে থাকে।

এক সময় মনে হয় নদী আর আকাশ যেন মিশে গেছে দিগন্তরেখায়। সূর্য যেন কান পেতে শুনছে পৃথিবীর গােপন বিষাদের সুর। তারপর সেই অগ্নিগােলক যেন নদীর বুকে টুপ করে ডুবে গেল। আঁধারে কালাে চাদর আচ্ছন্ন করল চারদিক। চরাচরে ঝিঝির শব্দ, জোনাকির টিপটিপ আলাে, ঝিরিঝিরি বাতাসে সৃষ্টি হয় নতুন এক আবেশ।

আরো পড়ুন : বর্ষায় বাংলাদেশ

কখনাে সন্ধ্যাকে মনে হয় যেন গ্রামের কিশােরী মেয়েটি, লাল-হলুদ ডুরে শাড়ি কোমরে পেঁচিয়ে দাড়িয়ে আছে নদীতীরে। পর মুহূর্তেই মনে হয়, এ তাে নিছক কল্পনা মাত্র। অত্যায়মান সন্ধ্যার আবছা আঁধারে নদীর ছােট ছােট ঢেউয়ের ওপর বিচূর্ণ আলাের কারুকাজ সত্যিই বিস্ময়জাগানিয়া। ইচ্ছে হয়, সেই ঢেউয়ের কারুকাজে একটু হাত রাখি। ছুঁয়ে দেখি আলােছায়ার বিচিত্র লুকোচুরি।

ঘনায়মান সন্ধ্যার অপরূপ রূপের মাধুর্য ধরে রাখি হৃদয়ে। কিন্তু বাস্তবে তা যে হবার নয়। রক্তিম আকাশ আর বিশাল নদীর প্রেক্ষাপটে সূর্যাস্তের বিচিত্র শােভা শুধু মনের পর্দায় চিরকালের আঁকা ছবির মতাে ভাস্বর হয়ে থাকে। এক শাশ্বত অনুভূতিতে হৃদয় মন ভরে ওঠে।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.
Back to top button