বিশ্বজুড়ে বিচিত্র মন্ত্রণালয়

নুরেমবার্গ বিচার বলতে কি বুঝায়? এখানে কাদের বিচার করা হয়?

উত্তর : কেউ কোনাে অপরাধ করলে তার বিচার হতে হবে সমাজের এ নিয়ম সভ্যতার বােধের অন্তর্গত। হত্যা, নির্যাতন, সম্পদ লুণ্ঠন বা সম্পদহানি প্রাচীনকাল থেকেই মানব সমাজে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতাে। এসব অপরাধের বিচার ও শাস্তির বিধান ভারত, চীন, মেসােপটেমিয়া, গ্রীস ও মিসরের প্রাচীন ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে।

নুরেমবার্গ বিচার : নুরেমবার্গ বিচার ১৯৪৫-৪৬ সালে জার্মানির ভ্যাভারেরয়া প্রদেশের নুরেমবার্গ শহরে অনুষ্ঠিত কিছু বিচার প্রক্রিয়ার নাম। তখন ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল নাৎসি বাহিনীর নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযােগ গঠন করে এবং তাদের বিচার করে। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগগুলাে ছিল মূলত চার ধরনের। যথা : এক, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ। যেমন— আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পরিকল্পনা, যুদ্ধের জোগাড় এবং যুদ্ধ শুরু করা। দুই. মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ । যেমন— মানুষকে সমূলে বিনাশ করা, বাসস্থান থেকে
বিতাড়ন করা এবং গণহত্যা। তিন, যুদ্ধাপরাধ তথা যুদ্ধের আইনসমূহ লঙ্ঘন। চার. উপরিউক্ত তিনটি অপরাধ করার সাধারণ পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র করা।

ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল : ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল নুরেমবার্গ বিচার করার অধিকার পেয়েছিল ১৯৪৫ সালের ৮ আগস্ট লন্ডনে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির মাধ্যমে। ঐ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তঙ্কালীন সােভিয়েত ইউনিয়ন এবং ফ্রান্সের প্রাদেশিক সরকারের প্রতিনিধিরা লন্ডনে মিলিত হয়ে চুক্তিটি স্বাক্ষর করে, যাতে একটি আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অক্ষশক্তির কর্মকর্তাদের দ্বারা পৃথিবীর যেকোনাে স্থানে সংঘটিত অপরাধের বিচার করতে বলা হয়। পরবর্তীতে আরাে ১৯টি দেশ। চুক্তিটিকে সমর্থন জানায়। ১৯৪৫ সালের ৩০ আগস্ট পরাজিত জার্মানির রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য যখন মিত্রশক্তির কন্ট্রোল কাউন্সিল (এসিসি) গঠিত হয় তখনও বিচারের পদ্ধতি সম্পর্কে শরিকদের ভেতর যথেষ্ট মতপার্থক্য ছিল। এসিসির নীতিমালায় বলা হয়েছে শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্মিলিতভাবে করা হলেও যারা পরে যার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ধরা পড়বে সেই দেশ তাদের বিচার করবে। ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল (আইএমটি) ২৪ জন শীর্ষ নাসি নেতার বিচার শেষ হওয়ার পর আইএমটির বিলুপ্তি ঘটে। তার স্থলে গঠন করা হয় নুরেমবার্গ মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল (এনএমটি)।

নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যক্রম : মানবজাতির ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যা, নির্যাতন, ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) সময়। জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি বাহিনী, ইতালিতে মুসােলিনির ফ্যাসিস্ট বাহিনী এবং প্রাচ্যে জেনারেল তেজোর রাজকীয় জাপানি বাহিনীর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কথা বিশ্ববাসী কখনও ভুলে যাবে না। হিটলারের নাৎসি বাহিনী এবং তাদের সহযােগী গেস্টাপাে ও অন্যান্য বাহিনী যেভাবে ইহুদি, কমিউনিস্ট ও অজার্মানদের হত্যা করেছে সভ্যতার ইতিহাসে তার কোনাে নজির নেই। যুদ্ধের ইতিহাসবিদরা নাৎসিদের এ নৃশংসতাকে আখ্যায়িত করেছেন হলােকস্ট বা শােয়াহ নামে।

২০ নভেম্বর ১৯৪৫ নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম আরম্ভ হয়। এর আগে ১৮-১৯ অক্টোবর মিত্রশক্তির আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতে যুদ্ধাপরাধের অভিযােগে ২৪ জন শীর্ষস্থানীয় নাৎসি নেতা ও সমরনায়ক এবং ৭টি সংগঠনকে সুপরিকল্পিতভাবে লাখ লাখ মানুষকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে ৬৫ পৃষ্ঠার অভিযোেগনামা পেশ করেন। বিচার শুরু হওয়ার আগে নাৎসি পার্টির প্রধান হিটলার এবং তার দুই শীর্ষ সহযােগী হিমলার ও গােয়েবলস আত্মহত্যা করার জন্য বিচার থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। অভিযুক্তদের তালিকায় ১ নম্বর আসামি ছিলেন ডেপুটি ফুয়েরার মার্টিন বােরমান। গ্রেফতারের আগেই তিনি আত্মগােপন করেছিলেন। ১৯টি তদন্ত দল অভিযুক্ত নাৎসি নেতাদের দুষ্কর্ম সম্পর্কে তদন্ত করেছেন।

নাৎসি সরকারের দলিল, আলােকচিত্র ও চলচ্চিত্র সগ্রহ করা ছাড়াও তারা অনেক বন্দি নির্যাতন শিবির পরিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভােগীদের জবানবন্দী নথিবদ্ধ করেছিলেন। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য ৭টি নীতি বা ধারা প্রণয়ন করা হয়েছিল। ৬নং ধারায় বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক আইনে যেসব অপরাধ শাস্তিযােগ্য বলে নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলাে হচ্ছে— ক. শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, খ, যুদ্ধাপরাধ ও গ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, নুরেমবার্গ নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানও অব্যাহতি পাবেন না। এই নীতিমালার ভিত্তিতেই প্রস্তুত করা হয়েছিল অভিযােগনামা।

নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের নীতি ও কার্যবিধি প্রণয়নের সময় মিত্রপক্ষের আইনজীবীরা সম্ভাব্য সকল চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। জাস্টিস জ্যাকসন তার উদ্বোধনী ও সমাপনী ভাষণে প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য সমালােচনা ও বিরুদ্ধ যুক্তি অত্যন্ত মেধা ও দক্ষতার সাথে খণ্ডন করেছেন। একটি সমালােচনা নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এটি ছিল ‘বিজয়ীর বিচার। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের উদ্বোধনী ভাষণে জাস্টিস জ্যাকসন এ বিষয়ে বলেছিলেন, দুভার্গের বিষয় এই যে, আদালত গঠনসহ আইনজীবী ও বিচারক সবই নিয়ােগ করতে হয়েছে যুদ্ধে বিজয়ী মিত্রশক্তিকে পরাজিত অক্ষশক্তির অপরাধের বিচারের জন্য।

অভিযুক্তদের বিশ্বব্যাপী আগ্রাসনের কারণে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ কেউ নেই বললেই চলে, যারা এ বিচারে আগ্রহী হতে পারে। এক্ষেত্রে হয় পরাজিতদের বিচার করতে হবে বিজয়ীদের, নয় তাে পরাজিতদের অপরাধের বিচারের ভার তাদের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছিল, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের আপিলের সুযােগ নেই, এমনকি বিচারকদের সম্পর্কে আপত্তি উত্থাপনেরও কোনাে সুযােগ কার্যবিধিতে রাখা হয়নি। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে জাস্টিস জ্যাকসনের উদ্বোধনী ভাষণের মতােই আকর্ষণীয় ছিল তার সমাপনী ভাষণ।

২৬ জুলাই ১৯৪৫-এ প্রদত্ত এই ভাষণের উপসংহারে শেক্সপিয়রের ‘রিচার্ড দি থার্ড’ নাটকের একটি উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, অভিযুক্তরা বলছেন তারা হত্যা, হত্যার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের এই দীর্ঘ তালিকায় বর্ণিত অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন না। তারা এ বিচারের সামনে এমনভাবে নিজেদের দাঁড় করিয়েছেন যেভাবে রক্তরঞ্জিত গ্লচেস্টার দাঁড়িয়েছিলেন তার নিহত রাজার লাশের সামনে। এদের মতাে গ্লচেস্টারও বিধবা রানীকে বলেছিলেন, আমি হত্যা করিনি। রানী জবাবে বলেছিলেন, তাহলে বলাে তারা নিহত হয়নি, কিন্তু তারা মৃত। যদি এদের (অভিযুক্তদের) সম্পর্কে বলা হয় এরা নিরাপরাধ, তাহলে তা এমনই সত্য হবে যুদ্ধ বলে কিছু হয়নি, কেউ নিহত হয়নি, কোনাে অপরাধের ঘটনাও ঘটেনি।

নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে ৪টি মিত্র দেশের ৮ জন বিচারক ছিলেন যাদের একজন পূর্ণ সদস্য অপরজন বিকল্প সদস্য। বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন ইংল্যান্ডের লর্ড জাস্টিস জিওফ্রে লরেন্স, ৪টি দেশের ৫২ জন আইনজীবী ছিলেন সরকারের পক্ষে। নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের একটি সচিবালয় ছিল। বিভিন্ন বিভাগে মােট ১৮ জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম দফা বিচারকালে ৬ জন ছিলেন সচিব, ২ জন মার্শাল, অনুবাদ বিভাগের প্রধান ছিলেন ৩ জন, প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান ১ জন, সাক্ষীদের তলব ও সাক্ষ্য প্রমাণ বিভাগের ১ জন প্রধান, অভিযুক্তদের তথ্য বিভাগের প্রধান ১ জন, দলিল ও রেকর্ডের বিভাগের দায়িত্বে ১ জন, রেকর্ড সম্পাদক ১ জন এবং মুদ্রণ বিভাগের পরিচালক ১ জন। এ সচিবালয়ের বিভিন্ন বিভাগে তিন শতাধিক কর্মচারী ছিলেন।

এ বিচারকার্যের বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণের জন্য আমেরিকা থেকে ৬৪০ জন সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তি নুরেমবার্গ এসেছিলেন যাদের ভেতর ১৫০ জন ছিলেন আইনজীবী। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করলেও নুরেমবার্গ ট্রায়ালের রেকর্ড কখনও ভাঙ্গা যাবে না। বিচার চলাকালে কয়েকশ সৈন্য ৭৫ মি.মি. কামান সমেত প্যালেস অব জাস্টিসের চতুর্দিকে টহল দিত। শতাধিক মিলিটারি পুলিশ আদালত ভবনের ভেতর টহল দিত। জনশক্তির বিবেচনায় নুরেমবার্গ ট্রায়ালের দ্বিতীয় উদাহরণ বিচারের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। যাদের বিচার করা হয়। ১ অক্টোবর ১৯৪৬ নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে প্রথম পর্যায়ে শীর্ষস্থানীয় ২৪ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারে ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। ৩ জনকে যাবজ্জীবন, ২ জনকে ২০ বছর, ১ জনকে ১৫ বছর এবং ১ জনকে ১০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

অভিযােগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩ জন খালাস পায়। অভিযুক্ত বাকি দুজনের ভেতর জার্মান শ্রমিক ফ্রন্ট ডিএএফ-এর প্রধান গুস্তাভ ক্রুপকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য মেডিকেল বাের্ড বিচারের সম্মুখীন হওয়ার অযােগ্য ঘােষণা করে। অপর অভিযুক্ত ডাঃ রবার্ট লাই বিচার শুরু হওয়ার আগে ২৫ অক্টোবর ১৯৪৫ তারিখে আত্মহত্যা করেন। নাৎসি পার্টির সেক্রেটারি, ডেপুটি ফুয়েরার মার্টিন বােরমানের অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছিল এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। নুরেমবার্গ ট্রায়াল বলতে সাধারণভাবে প্যালেস অব জাস্টিসে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকে গণ্য করা হয়, যার সময়কাল ছিল ১০ মাস।

১৯৪৯ সাল পর্যন্ত নুরেমবার্গের প্যালেস অব জাস্টিসে আরও ১২টি মামলার বিচার হয়েছিল যেখানে ২০০ জন নাৎসি রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা ও পেশাজীবীর বিচার হয়েছিল। এদের মধ্যে ২৪ জনকে প্রথমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল, ৩৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ৯৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩৫ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। গুরুতর অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে ৪ জনকে বিচার থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ৪ জন বিচার চলাকালে আত্মহত্যা করেছিলেন।

এ ট্রাইব্যুনালে নিম্নোক্ত ১২টি মামলা হয়েছিল ১. ডক্টর্স ট্রায়াল (৯ ডিসেম্বর ১৯৪৬ -২০ আগস্ট ১৯৪৭): ২৪ জনের বিচার হয়েছিল, ২. মিলচ ট্রায়াল (২ জানুয়ারি – ১৬ এপ্রিল ১৯৪৭) :১ জনের বিচার হয়েছিল, ৩. জাজেস ট্রায়াল (৫ মার্চ – ৪ ডিসেম্বর ১৯৪৭) : ১৬ জনের বিচার হয়েছিল, ৪. পল ট্রায়াল (৮ এপ্রিল –৩ নভেম্বর ১৯৪৭); ১৮ জনের বিচার হয়েছিল, ৫. ফ্লিক ট্রায়াল (১৯ এপ্রিল – ২২ ডিসেম্বর ১৯৪৭) : ৬ জনের বিচার হয়েছিল ৬. আই জি ফারবেন ট্রায়াল (২৭ আগস্ট ১৯৪৭-৩০ জুলাই ১৯৪৮) : ২৪ জনের, ৭. হস্টেজেস ট্রায়াল (৮ জুলাই ১৯৪৭-১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮): ১২ জনের, ৮, রুশা বা রাশিয়া ট্রায়াল (২০ অক্টোবর ১৯৪৭-১০ মার্চ ১৯৪৮):১৫ জনের, ৯. আইনসাজ গ্রুপেন ট্রায়াল (২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ – ১০ এপ্রিল ১৯৪৮) : ২৭ জনের, ১০. ক্রুপ ট্রায়াল (৮ ডিসেম্বর ১৯৪৭-৩১ জুলাই ১৯৪৮): ১২ জনের, ১১. মিনিস্ট্রিজ ট্রায়াল (৬ জানুয়ারি ১৯৪৮–১৩ এপ্রিল ১৯৪৯):২১ জনের বিচার করা হয়েছিল। ১২. হাই কমান্ড ট্রয়াল (৩০ ডিসেম্বর ১৯৪৭-২৮ অক্টোবর ১৯৪৮) : ১৪ জনের বিচার করা হয়েছিল। নুরেমবার্গ ট্রায়াল সম্পর্কে বলা যায়, আইন শাস্ত্রের ইতিহাসে এত বড় বিচার কখনও হয়নি।

এ বিচার আন্তর্জাতিক আইনকে সমৃদ্ধ করেছে। সভ্যতার ইতিহাসে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার। বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার ও শাস্তির বােধ প্রতিষ্ঠা করেছে। যার ফলে দেশে দেশে অনুরূপ অপরাধ বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর আগে বা পরে কোনাে। দেশের ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থানকারী সামরিক-বেসামরিক নেতৃবৃন্দকে কখনও আদালতের কাঠগড়ায় এভাবে দল বেঁধে দাঁড়াতে হয়নি যেমনটি হয়েছে নুরেমবার্গে। একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিমণ্ডলী কিংবা কোনাে দল বা সংগঠন যত শক্তিশালী ও ক্ষমতাসম্পন্ন হােক না কেন। কেউই ঊর্ধ্বে নয় নুরেমবার্গের বিচার এই বােধটিও প্রতিষ্ঠা করেছে।

এসব বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের রায়ে অপরাধের বৈশিষ্ট্য এবং বিচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিবেচনা। ও বিচার পদ্ধতি নিঃসন্দেহে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারণা ও মাত্রা সংযােজিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা হয়েছে সমৃদ্ধ। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল বিশাল আয়ােজনের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় বিশ্বের বিচারব্যবস্থায় তা এক নতুন অধ্যায়, অতীতে যেমনটি দেখা যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে কি না সন্দেহ।

Related Post