বর্তমান ঝালকাঠি একসময় চন্দ্রদ্বীপ রাজাদের অধীনে ছিল। ১৬১১ সালে চন্দ্রদ্বীপ মুঘলদের অধিকারে গেলে ঝালকাঠি সেলিমাবাদ পরগণায় অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৯৭ সালে ঢাকা জেলার দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলা সৃষ্টি হলে ঝালকাঠি এ জেলার অন্তর্গত হয়।
১ এপ্রিল ১৮৭৫ ঝালকাঠি পৌরসভার গোড়াপত্তন হয়। ১৮৮২ সালে ঝালকাঠিতে একটি পুলিশ থানা স্থাপন করা হয়। ১ জুলাই ১৯৭২ ঝালকাঠিকে মহকুমায় উন্নীত করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ঝালকাঠিকে বরিশাল জেলা থেকে পৃথক করে পূর্ণাঙ্গ জেলায় পরিণত করা হয়।
প্রাচীনকালে কৈবর্ত সম্প্রদায় নামে জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরাই প্রথম এ এলাকায় বসবাস শুরু করে । কৈবর্ত জেলেদের ‘ঝালো’ বলা হতো এবং তাদের পাড়াকে বলা হতো ‘ঝালোপাড়া’। ঐতিহাসিকদের ধারণা এ ‘ঝালোপাড়া’ থেকেই ‘ঝালকাঠি’ নামের উৎপত্তি । বর্তমান ঝালকাঠির প্রাচীন নাম ছিল মহারাজগঞ্জ।
মহারাজগঞ্জে ভূ-স্বামী শ্রী কৈলাশচন্দ্র এ. স্থানটিতে একটি গঞ্জ নির্মাণ করেন। এ গঞ্জে জেলেরা জালের কাঠি বিক্রি করতো। এ জালের কাঠি থেকে পর্যায়ক্রমে ঝালকাঠি নামকরণ, করা হয় বলে ধারণা করা হয়।
ঢাকা-মোংলা এবং চট্টগ্রাম-মোংলা নদীপথের দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে ১৯১৮ সালে ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিষখালী ও ধানসিঁড়ি নদীর মোহনা থেকে পিরোজপুরের সন্ধ্যা নদী পর্যন্ত ১৮ কিমি দৈর্ঘ্যের একটি চ্যানেল খনন করা হয়। গাবখান নামের এ চ্যানেলটি বাংলাদেশের একমাত্র কৃত্রিম নৌপথ যা বাংলার সুয়েজখাল নামে পরিচিত। ১৯৫০ সালে মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার পর চ্যানেলটি আন্তর্জাতিক নৌপথ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ। প্রকৃতির এই কবির স্বপ্নের ধানসিঁড়ি নদী ঝালকাঠিতেই । রাজাপুর উপজেলার ধানসিঁড়ি নদীর পাশে বামনকাঠী গ্রামে তার মামা বাড়ি। কবি শৈশবে তার বাবা মায়ের সাথে মামা বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। মামা বাড়ি ছিল তার প্রিয় স্থান। এই স্মৃতিকে ধরে রাখতেই তিনি ‘আবার আসিব ফিরে এই ধানসিঁড়িটির তীরে’ লিখেছেন।
জানেন কি : ঝালকাঠি জেলা
আল্লামা আযীযুর রহমান নেছারাবাদী কায়েদ ছাহেব (ইসলামী ব্যক্তিত্ব), কবি জীবনানন্দ দাশ, কবি কামিনী রায়, আমির হোসেন আমু (সাবেক খাদ্য ও শিল্পমন্ত্রী), মো. শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম)।
২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ভাসমান পেয়ারা বাজারটি গড়ে উঠেছে। ঝালকাঠি ও পিরোজপুর সীমারেখায় অবস্থিত ছোট্ট গ্রামের নাম ভিমরুলি । এখানেই চতুর্মুখী ছোট-বড় খালের মোহনায় প্রতিদিন বিপণী শুরু হয়। তাই ভিমরুলি গ্রামটির নামই শেষমেষ বাজারটির নামের সঙ্গে স্থায়ীভাবে জুড়ে যায়। এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ভাসমান পেয়ারা বাজার। সাধারণত পেয়ারার মৌসুম শুরু হয় জুলাই মাসে, চলে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
Leave a Comment