বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান [PDF] : বাংলা একাডেমি সূচনালগ্ন (১৯৫৫) থেকেই অভিধান রচনায় মনোনিবেশ করে এবং এই কাজে ব্রতী হয়েছিলেন স্বয়ং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। তাঁর সম্পাদনায় ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয় পূর্ব পাকিস্তানী আঞ্চলিক ভাষার অভিধান (পরবর্তীকালে বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান, ১৯৬৫)। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (১৯৭৪) প্রণয়নের সূত্রপাত করেন আরেকজন বিখ্যাত পণ্ডিত ড. মুহম্মদ এনামুল হক। এই অভিধানটি প্রকাশিত হয় অধ্যাপক শিবপ্রসন্ন লাহিড়ীর সম্পাদনায় (১৯৮৪)।
অভিধান প্রণয়নের এই সুপরিকল্পিত উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় কিছুকালের মধ্যেই বাংলা একাডেমি একগুচ্ছ অভিধান প্রণয়ন ও প্রকাশনার কাজ সম্পনন করে। এর মধ্যে রয়েছে Bangla Academy English-Bangla Dictionary (1993), Bangla Academy Bangla-English Dictionary (1994), বাংলা একাডেমি বাংলা বানান অভিধান (১৯৯৪), বাংলা একাডেমী বাংলা উচ্চারণ অভিধান (১৯৯০), যথাশব্দ (১৯৭৪) ও বাংলা একাডেমী ছোটদের অভিধান (১৯৮৩) প্রভৃতি।
বর্তমান শতকের প্রথম দশকের শেষদিকে বাংলা একাডেমি অভিধানধর্মী আরো সুবৃহৎ এবং পরিশ্রমসাধ্য কাজে আত্মনিয়োগ করে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত পণ্ডিত অধ্যাপক পবিত্র সরকার-এর সহায়তায় রবীন্দ্রনাথ-পরিকল্পিত (১৯০১) বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়।
এই প্রকাশনার পরপরই ভাষার প্রতিনিয়ত বিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রেখে বাংলা একাডেমি তিন খণ্ডে প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান (২০১৪)। এই অভিধানটি সম্পাদনা করেন অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ এবং সহযোগী সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার। উল্লেখ্য যে, বাংলা একাডেমী প্রমিত ভাষার বাংলা ব্যাকরণ (দুই খণ্ডে) এবং বাংলা একাডেমি বিবত্তনমূলক বাংলা অভিধান প্রণয়নের কাজে একাডেমির কয়েকজন কর্মকর্তাও অংশগ্রহণ করেন।
আমাদের অভিধান-অন্বেষার এক অনন্য নজির বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান। এই অভিধানটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় বর্তমানে ব্যবহৃত অনেক নতুন এবং কৃতঋণ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করা। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লবের পরে যে-সব শব্দ আমাদের দৈনন্দিন ভাষায় যুক্ত হচ্ছে তার পরিমাণ যেমন সামান্য নয়, তেমন তার গুরুত্বও অস্বীকার করার উপায় নেই।
এই বিষয়টি মাথায় রেখেই বর্তমান অভিধানটি প্রণীত হয়েছে। এই অভিধানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো বাংলা ভাষার অন্যান্য অভিধানের মতো এটি পুরোপুরি প্রতিশব্দ-নির্ভর নয়। এই অভিধানে উন্নত ভাষার অভিধানসমূহের মতো প্রায় ক্ষেত্রেই শব্দ বা শবদগুচ্ছের ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বাংলা অভিধানে অনেক সময় একটি শব্দ বা শব্দার্থ প্রতীকের মাধ্যমে আমাদের মনে বিশিষ্ট অবয়ব লাভ করে। এই ধরনটি অনেকটাই কল্পনা-সম্পৃক্ত। এতে বিষয়টির বাস্তব রূপ বহুক্ষেত্রেই পরিস্ফুটিত হয় না। সেই দিকে লক্ষ রেখেই এই অভিধানে শব্দ বা শব্দগুচ্ছ সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই অভিধান প্রণয়নের কাজে প্রধান সম্পাদক হিসেবে অভিধান, বানান ও উচ্চারণ-বিশেষজ্ঞ জামিল চৌধুরী যে প্ররিশ্রম করেছেন তা প্রায় তুলনারহিত। আমি তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গে বাংলা একাডেমির যে-সকল কর্মকর্তা অভিধান সংকলনের কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁদের সকলকেই অভিনন্দন জানাই। আশা করা যায়, তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও জ্ঞানাম্বেষীদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবে।
অভিধান একটি ভাষার সামগ্রিক চিত্রকে ধারণ করে। অভিধানের প্রধান উপজীব্য ভাষার শব্দ ও তার অর্থ। কালের পরিক্রমায় অন্য অনেক কিছুর মতো ভাষার ব্যবহারেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণমাধ্যমের প্রসার দূরকে নিয়ে এসেছে কাছে।
জিপিএস, ই মেইল, এসএমএস,সিম, সেলফি প্রভৃতি শব্দ এখন আর বিদেশি নয়। শব্দগুলো এখন বাংলা ভাষার অঙচ্ছেদ্য অঙ্গ। আধুনিক বাংলা অভিধানে শব্দচয়নের সময় এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এই অভিধানে ২০১২ সালে প্রকাশিত “বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষারুম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের উদ্যোগে ১৩৯৫ বঙ্গাব্দে (১৯৮৮) কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত সবর্জনীন প্রাথমিক শিক্ষার পটভূমিতে পাঠ্যপুক্তকে বাংলা বানানের সমতাবিধানবিষয়ক কর্মশিবির-এ গৃহীত সুপারিশ মেনে বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে যুক্তবর্ণের রূপ যতদূর সম্ভব স্বচ্ছ করা হয়েছে।
প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক বন্ধুবর আনিসূজ্জামান-কে। বানানসংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে তাঁর পরামর্শ এই অভিধান সংকলনের গতিকে তরান্বিত করেছে। যাঁর সার্বক্ষণিক সহায়তা ছাড়া এই অভিধানের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না, তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অজয় রায় ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক নারায়পচন্দর বিশ্বাসকে তাঁদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিদ্যা-বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শের জন্য দ্বিজেন শর্মা এবং নিনা শাহীন চৌধুরী-র প্রতি। এছাড়াও যাঁরা বিবিধ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে অনুগৃহীত করেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন করুণাময় গোস্বামী, যতীন সরকার, শ্রাবণী পাল, অনিন্দিতা ভাদুড়ী এবং মনোরঞ্জন দাস।
Leave a Comment