বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সৃজনশীল প্রশ্ন সমাধান পর্ব- ০২
প্রশ্ন : সৌরশক্তির বর্তমান ব্যবহার ও এর সম্ভাবনা সম্পর্কে আলােচনা করুন।
উত্তর : সৌরশক্তি দিয়ে বাতি জ্বালানাে, রান্না করা, রেডিও, টিভি, ক্যালকুলেটর প্রভৃতি চালানাে হয়। বর্তমানে মােটরগাড়ি চালানাে ও কৃত্রিম উপগ্রহে সৌরশক্তি ব্যবহার শুরু হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সৌরশক্তির উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারলে প্রাত্যহিক জীবনে তেল-গ্যাস বা জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকাংশে হাস পাবে। ফলে বৃক্ষ নিধন রােধ হবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ অনেক বেড়ে যাবে।
প্রশ্ন : বজ্রপাতের কারণ কি?
উত্তর : মেঘ তৈরি হওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের মেঘ ভিন্ন ভিন্ন চার্জে চার্জকৃত হয়ে থাকে । ঝড়-বৃষ্টির । সময় ভিন্নধর্মী দুটি মেঘ পরস্পরের সংস্পর্শে এলে চার্জের বিনিময় ঘটে। ফলে প্রচণ্ড শব্দসহ বজ্রপাত ঘটে থাকে।
প্রশ্ন : বায়ুদূষণের কারণ কি কি? বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় আলােচনা করুন।
উত্তর : মােটরগাড়ি, কলকারখানার ধোয়া, কীটনাশক, আগাছানাশক, কলকারখানার বর্জ্য, ধূলিকণা প্রভৃতি বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়। এগুলাে থেকে বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনােক্সাইড, সিসা, হাইড্রোকার্বন মিশে দূষণ ঘটিয়ে থাকে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য মােটর গাড়ির কালাে ধোয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কলকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য নির্গত হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারিভাবে আইন করে বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া কীটনাশক ও আগাছানাশকের যথেচ্ছা ব্যবহার না করে সেক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে বায়ুদূষণ অনেকাংশে কমে যাবে।
প্রশ্ন : মােটরযান কিভাবে বায়ু দূষিত করে?
উত্তর : মােটরযানের ইঞ্জিন পেট্রোল, ডিজেল বা অকটেন ও বায়ুর মিশ্রণকে প্রজ্বলিত করে বিপুল পরিমাণ তাপ শক্তি ও চাপের সৃষ্টি করে যা ব্যবহার করে মােটরযান চালিত হয়। কিন্তু এই প্রজ্জ্বলন কার্য চলার সময় যে কালাে ধােয়া বের হতে থাকে তা মূলত বায়ুমণ্ডলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনােঅক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইড ও লেড অক্সাইড প্রভৃতি যৌগের মিশ্রণ। ফলে বায়ুমণ্ডল দূষিত হচ্ছে। আর আমাদের মতাে অনুন্নত দেশে বেশিরভাগ মােটরযানই। ত্রুটিযুক্ত। ফলে এদের থেকে নির্গত কালাে ধোয়া বায়ুমণ্ডল তথা সামগ্রিক পরিবেশের জন্য এক মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এছাড়া মােটরযানের উচ্চ শব্দও পরিবেশকে দূষিত করে।
প্রশ্ন : CFC কি এবং এটা কি কাজে ব্যবহৃত হয়? CFC ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়ােজন কেন?
উত্তর : মিথেন (CH.) ও ইথেন (C,H)-এর ক্লোরােফ্লোরাে উদ্ভূত যৌগসমূহকে ক্লোরােফ্লোরাে কাবন। সংক্ষেপে CFC বলে । CFC-এর বাণিজ্যিক নাম হলাে ‘ফ্রিয়নস’। CFC-এর মধ্যে ফ্রিয়ন -11, ফ্রিয়ন-12 বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। ব্যবহার : CFC কে সামান্য চাপে তরলে পরিণত করা যায় বিধায় এদেরকে হিমায়করূপে হিমায়নযন্ত্র তথা রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার শীতল রাখার জন্য সর্বাধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এটি এরােসল ও প্লাস্টিক ফোম তৈরি করতে এবং দ্রাবকরূপে ব্যবহৃত হয়।
ব্যবহার বন্ধ করার প্রয়ােজনীয়তা : (CFC ব্যবহারের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হচ্ছে এটি উর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে। ফলে জীবজগতের জন্য অত্যধিক ক্ষতিকর আলট্রাভায়ােলেট রশি বা অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে এসে পৌঁছে। এতে মানুষের চর্ম ক্যান্সারসহ বহুবিধ মারাত্মক রােগ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া C),-এর মতাে CFCও অধিক তাপ ধরে রাখার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এতে পৃথিবীর জীবজগতের ভারসাম্যপূর্ণ শঙখল নষ্ট হবে। এসব অসুবিধা দূর করে সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্যই CPU এর বহুল ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়ােজন।
প্রশ্ন : পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরােপণ কিভাবে সাহায্য করে?
উত্তর : পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরােপণের ভূমিকা ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। বৃক্ষরােপণের ফলে পরিবেশ নিম্নলিখিত সাহায্য পায় :
ক. ভূমির ক্ষয় রােধ হয়।
খ. বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমতা ঠিক থাকে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি রােধ হয়।
গ. বৃক্ষরােপণে প্রস্বেদন বৃদ্ধি পায় ফলে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলশ্রুতিতে বৃষ্টিপাত বাড়ে।।
ঘ. গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ হাস পায়।।
প্রশ্ন : পৃথিবীর উপরের 0Zone স্তর কিভাবে তৈরি হয়? এই স্তর মানুষের কি উপকারে আসে? ইদানিং 0zone স্তর ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে কেন?
উত্তর : পৃথিবী নামক গ্রহটিকে ঘিরে আছে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর । এরই এক ধাপ ওজোনস্তর (Ozone sphere) নামে পরিচিত। ওজোন (0) অক্সিজেন (O,) নামক মৌলিক পদার্থের ভৌতিক ও জৈবিক পরিবর্তনেরই ফল। বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে ওজোনের এই আবরণই ওজোনস্তর সৃষ্টি করে রেখেছে। সূর্যের আলােতে মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর একটি উপাদান রয়েছে, যা অতিবেগুনী রশ্মি নামে পরিচিত। এই রশ্মিকে শােষণ করে সূর্যের আলােকে মানুষের জন্য নিরাপদ রাখে এই ওজোনস্তর। বায়ুমণ্ডলে ক্রমে অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনােঅক্সাইড, ক্লোরােফ্লোরাে কার্বন (CFC) ইত্যাদির আধিক্যের ফলে ওজোনস্তর ক্ষয়ীভূত এমনকি ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
প্রশ্ন : ঢাকা শহরের বাতাস শহরবাসীর জন্য ক্ষতিকর কেন?
উত্তর : মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার পয়ঃপ্রণালীর নির্গত গ্যাস, অসংখ্য গাড়ির কালাে ধোঁয়া, শিল্পকারখানার নির্গত ধোয়া, গৃহস্থালীর উপকরণ, ফ্রিজ নির্গত গ্যাস প্রভৃতি থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনােক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেনঘটিত বিভিন্ন দূষিত গ্যাস, মাত্রাতিরিক্ত সিসা প্রভৃতি ঢাকার বায়ুতে প্রতিদিনই মিশে যাচ্ছে। তাছাড়া সেখানে বাতাসে সীসার সর্বোচ্চ গ্রহণযােগ্য মাত্রা হলাে ২০০ মাইক্রোগ্রাম/ঘন মিটার, সেখানে ঢাকা শহরের বাতাসে এই মাত্রা ৪৬০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটারের বেশি। যার পরিমাণ পৃথিবীর সর্বোচ্চ অবস্থানের মধ্যে রয়েছে। তাই ঢাকা শহরের বাতাস শহরবাসীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।