বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে ৫টা টিকা নিচে দেওয়া হলো। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে এরকম অনেকগুলো টিকা আপনাদের পড়তে হবে। আমরা এখানে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি টিকা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও বিসিএস পরীক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞান অংশ থেকে বাংলাদেশ বিষয়াবলী ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে বিস্তারিত পড়তে হবে। তো চলুন টিকা গুলো যত্নসহকারে পড়ে নেওয়া যাক।আসা করি লেখাটি বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি এর জন্য সহায়ক হবে।
একনজরে আলোচিত টিকাসমূহ :
নং | বিষয় |
ক | জাপানের আইনসভা |
খ | বিশ্বায়ন (Globalization) |
গ | এশিয়ান হাইওয়ে |
ঘ | এ্যামব্যাসেডর ও হাইকমিশনার |
ঙ | বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ও সহযােগিতা চুক্তি |
চ | নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য দেশের ভূমিকা |
ছ | World Economic Forum |
জাপানি আইনসভার নাম ডায়েট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে প্রণীত নতুন সংবিধান। অনুযায়ী ডায়েটের ক্ষমতা ও পরিধি অনেক বৃদ্ধি পায়। ডায়েট দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত। নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’ এবং উচ্চ কক্ষ হাউস অব কাউন্সিলরস’। হাউস অব কাউন্সিলরস’-এর সদস্য সংখ্যা ২৪২। এ সভা ৬ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। অর্ধেক সদস্য প্রতি ৩ বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’-এর মােট সদস্য ৪৮০। ৪৮০ জন সদস্য মােট ১১৮টি ‘নির্বাচনী জেলা থেকে নির্বাচিত হন।
প্রত্যেক জেলায় ৩ থেকে ৫ জন সদস্য থাকেন। সদস্যরা প্রত্যক্ষ ভােটে নির্বাচিত হন। প্রত্যেক ভােটার একটি করে ভােট দেন। যেসব সদস্য সর্বোচ্চ ভােট পান তারা জেলা থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’-এ আসেন। হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’ চার বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। তবে সরকার যে কোনাে সময় এ হাউস বিলুপ্ত করতে পারে। বিলুপ্ত হলে ৪০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন দিতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাপানি রাজনীতিতে ডায়েটের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে। বর্তমানে জাপানি রাজনীতির মূলধারা ডায়েটকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হচ্ছে।
বিশ্বায়ন মূলত একটি সর্বব্যাপী ও সার্বক্ষণিক চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানবিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসারের ফলে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষই একটি একীভূত বিশ্বব্যবস্থায় মিলিত হচ্ছে, যা বিশ্বায়নের ধারণাকে আরাে জোরালাে করে তুলছে। বিশ্বায়ন ধারণাকে অভিহিত করা হয়েছে এমন একটি প্রক্রিয়া হিসেবে, যা রাষ্ট্র ও সম্প্রদায়ের পুরনাে কাঠামাে ও সীমানাকে অবলুপ্ত করছে। এটি এমন একটি সর্বব্যাপী অভিজ্ঞতা যে আমাদের জীবনের অধিকাংশ দিকই এর আওতাভুক্ত হয়ে পড়ছে। বর্তমানে বিশ্বায়নকে অনেকে বি আঞ্চলিকীকরণ (Delocalisation) প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করেন।
এশিয়ান হাইওয়ে যােগাযােগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার এক যুগান্তরকারী কর্মপরিকল্পনা। এশিয়ার ৩২টি দেশকে যুক্ত করবে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক। এক লাখ চল্লিশ হাজার কিলােমিটার দীর্ঘ এই নেটওয়ার্কের আওতায় প্রতিটি দেশ পরস্পরের সাথে সড়ক পথে যুক্ত হবে। এশিয়ান। হাইওয়ের উল্লেখযােগ্য দিক হচ্ছে পূর্বদিকে চীন, মঙ্গোলিয়া ও ইন্দোচীনের রাষ্ট্রগুলাে এবং পশ্চিমদিকে তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার। দেশসমূহ; দক্ষিণদিকে পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার; দক্ষিণ পূর্বদিকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। বাংলাদেশের এশিয়ান হাইওয়ে সংক্রান্ত তিনটি প্রস্তাব রয়েছে।
প্রথমত, ভারত থেকে বেনাপােল-যশাের হয়ে ঢাকার ভেতর বা পাশ দিয়ে সিলেট-তামাবিল রাস্তায় পূর্বভারতে অনুপ্রবেশ সড়ক নির্মাণ। দ্বিতীয়ত, একটি সড়ক ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ হয়ে মিয়ানমারে প্রবেশ। তৃতীয়ত, রুটটি মিয়ানমার থেকে ভারতের তামু দিয়ে প্রবেশ করে ডাউকি-তামাবিল-সিলেটঢাকা হয়ে বাংলাবান্ধা-শিলিগুড়িকে সরাসরি যুক্ত করবে নেপালের কাকরভিটার সাথে। পরবর্তীতে উপরিউক্ত প্রস্তাবগুলােতে আরাে কিছু সংশােধনী আনা হয়। পরিশেষে বলা যায়, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক বাস্তবায়িত হলে এশিয়ায় যােগাযােগ ক্ষেত্রে বিপ্লব আসবে এবং এশিয়া হবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনৈতিক শক্তি।
এ্যামব্যাসেডর ও হাইকমিশনারের মাঝে মর্যাদাগত তেমন পার্থক্য নেই। দুটিই একরাষ্ট্র কর্তৃক অপর রাষ্ট্রে প্রেরিত সর্বোচ্চ শ্রেণীর কূটনীতিক দূতকে বুঝায়। তবে হাইকমিশনার বলতে কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের সর্বোচ্চ শ্রেণীর কূটনীতিকদের বুঝানাে হয়। কমনওয়েলথ হলাে ব্রিটেনসহ একসময় ব্রিটেনের অধীনে ছিল এমন রাষ্ট্রসমূহের সংগঠন। রাষ্ট্রদূতকে তখনই হাইকমিশনার বলা যাবে যখন দুটি দেশই কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হয়। যেমন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ভারতে নিয়ােগ পেলে তাকে হাইকমিশনার বলা হবে।
তেমনিভাবে বাংলাদেশে নিয়ােজিত ভারতের রাষ্ট্রদূতও হাইকমিশনার নামে পরিচিতি পাবেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ্যামব্যাসেডর নামে এবং বাংলাদেশে নিয়ােজিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও এ্যামব্যাসেডর নামে পরিচিতি পাবেন। কেননা বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্র কমনওয়েলথভুক্ত দেশ নয়। তাই কমনওয়েলথ বহির্ভূত দেশসমূহের সর্বোচ্চ কূটনীতিবিদ কিংবা বহির্ভূত কোনাে দেশের ক্ষেত্রে কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকদের বলা হয় এ্যামব্যাসেডর।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাত্র তিনমাসের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ঢাকাতে একটি ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ইংরেজি ভাষায় প্রণীত এই চুক্তির falcatata 16 “The Indo-Bangladeshi Treaty of Friendship, Co-operation and Peace”। বাংলাদেশের পক্ষে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। চুক্তিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযােগিতা, পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, উভয় দেশের সীমান্তকে শান্তিপূর্ণ পর্যায়ে রাখা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান প্রদর্শন প্রভৃতি।
এ চুক্তিটিতে ছিল ১২টি দফা এবং চুক্তিটি নবায়নযােগ্য ছিল। চুক্তিটির মেয়াদ ১৯৯৭ সালে শেষ হলেও উভয় দেশই চুক্তিটি নবায়ন করতে সম্মত থাকে। কিন্তু ফারাক্কা ব্যারেজের মাধ্যমে। গঙ্গার পানি নিয়ন্ত্রণ করলে চুক্তিটির সফলতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযােগিতামূলক অনেক চুক্তি হয়েছে। যেমন- ট্রানজিট ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে, করিডাের সমস্যা নিয়ে, সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে, সীমান্ত হত্যা হাসকরণে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রভৃতি বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক অনেক আলােচনাই শােনা গিয়েছে। এসবের বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরাে বন্ধুত্বপরায়ণ হবে।
নিরাপত্তা পরিষদ ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত। তার মধ্যে পাঁচটি স্থায়ী এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্য। নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলী হচ্ছে : জাতিসংঘের নীতিমালা ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, আন্তর্জাতিক সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে এমন সকল বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করা, এসব বিবাদ মিটানাের পদ্ধতি অথবা মীমাংসার। প্রশ্ন সমাধান শর্তাবলী সুপারিশ করা, সমরাস্ত্র নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা তৈরি করা, শান্তির প্রতি হুমকির বাস্তবতা বা আগ্রাসনের ঘটনা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া প্রভৃতি।
নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বেশি হলেও কার্যত এদের তেমন ভূমিকা নেই। ভেটো প্রদানের ক্ষমতা কেবল স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলাের রয়েছে। তবে পরিষদের কোনাে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে ১৫ সদস্যের মধ্যে ৯ সদস্যের সম্মতির প্রয়ােজন হয়। অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলাের মধ্যে প্রতি বছর ৫টি সদস্য তার ২ বছর মেয়াদ শেষ করে বিদায় নেয় এবং নতুন ৫টি সদস্য সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হয়। মূলত স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলাের খেয়াল-খুশির উপরই অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলাের নির্ভরশীল থাকতে হয়।
World Economic Forum বা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম একটি অলাভজনক স্বাধীন, নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান, যা আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থার সাথে সহযােগিতামূলক কাজে যুক্ত রয়েছে। এটি ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত কলগনিতে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক এজেন্ডা তৈরিতে রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, একাডেমিকসহ সমাজের নেতৃস্থানীয় লােকদের সাথে আন্তরিকভাবে এটি কাজ করে থাকে। সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করার খ্যাতি রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির।
বিশ্ব জনমত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরার চেষ্টা করে। প্রয়ােজনে অসংখ্য সম্মেলন, গবেষণামূলক কাজ, টাস্ক ফোর্স গঠন প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের চেষ্টা চালিয়ে যায়। উল্লেখ্য, World Economic Forum (WEF) নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে দু বছর আগে একটি কোটা পদ্ধতি চালু করে। বিশ্বের ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নিজেদের ৪ জন পুরুষ প্রতিনিধির বিপরীতে অবশ্যই একজন নারী প্রতিনিধি পাঠাবে। তবে সর্বশেষ সম্মেলনে ১৫ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব করে। এই ফাউন্ডেশন মূলত ১০০০টি সদস্য কোম্পানি দ্বারা অনুদানকৃত ও পরিচালিত হয়ে থাকে।
Recent Comments