এখনকার সময়ে তরুণদের স্বপ্নের ক্যারিয়ারের মধ্যে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যতম। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা এবং এখানে ক্যারিয়ার কেমন এ সম্পর্কে জানতে অনেকেই আগ্রহী থাকেন। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে মেধাবী হওয়া সত্যেও অনেকে স্বপ্নের এ ক্যারিয়ার থেকে ছিটকে পড়েন।
আজ কোর্সটিকায় আমরা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সকল তথ্য জানবো। একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারকে কি কি দায়িত্ব পালন করতে হয়, কিভাবে ক্যাডেট নির্বাচন করা হয়, প্রশিক্ষণাকালীন সুযোগ-সুবিধা এবং ক্যারিয়ার সম্ভাবনা ও উপার্জন থাকছে আজকের এই আলোচনায়।
বিশ্ব বাণিজ্যের বড় একটি পরিচালিত হয় বিভিন্ন দেশের নৌপথকে কেন্দ্র করে। আর এ নৌপথে পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে জাহাজ। জাহাজ পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সমস্যা সমাধানই মূলত মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ার বা সামুদ্রিক প্রকৌশলী হচ্ছেন এমন একজন পেশাদার ব্যক্তি, যিনি বিশেষায়িত এ প্রকৌশল বিদ্যায় অধ্যয়ন করেছেন এবং জাহাজে থাকা সমস্ত প্রধান যান্ত্রিক এবং প্রকৌশলী সরঞ্জামগুলোর পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের জন্য অভিজ্ঞ।
আরো পড়ুন : স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন
বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতিতে বার্ষিক আয়ের প্রায় ২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার আসে শুধু শিপিং খাত থেকে। সারাবিশ্বে প্রায় ৫ হাজার জাহাজ প্রতিদিন প্রায় ৬০০ কোটি টন পণ্য নিয়ে ১৫০ টির বেশি দেশের নৌবন্দরে নোঙড় করে।
২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ি সারাবিশ্বে প্রায় ১৩ লাখ সি ফেরিয়ার্স এই শিপিং শিল্পে কর্মরত। আর বিশাল এই কর্মযজ্ঞের মূল বিন্দু দখল করে রেখেছেন মেরিনাররা। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশ এবং বর্হিবিশ্বে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা কেমন।
একটি জাহাজের প্রতিটি পদমর্যাদার ইঞ্জিনিয়ারদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতি এবং সিস্টেম বরাদ্দ করা হয়। এসব যান্ত্রিক ব্যবস্থা মনিটরিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ করাই তাদের মূল দায়িত্ব। একজন প্রকৌশলী এটি নিশ্চিত করেন যে তার নিয়ন্ত্রণের অধীনে সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে চলছে কিনা।
এছাড়াও আরো কিছু দায়িত্ব মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের থাকে। যেমন:
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর ৪ বছর ও ২ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়। এ কোর্সগুলো করতে চাইলে আপনাকে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় যে কোনো বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবদেন করতে হবে এবং উত্তীর্ণ হতে হবে। একজন শিক্ষার্থী সাধারণত পরপর ৩ বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমীতে আবেদনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করতে হয়। উভয় পরীক্ষায় আলাদাভাবে ৩.৫০ GPA থাকতে হবে। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থ ও গণিত বিষয়ে আলাদাভাবে ৩.৫০ GPA থাকতে হবে। ইংরেজি বিষয়ে কমপক্ষে ৩.০০ জিপিএ অথবা আইইএলটিএস স্কোর ৫.৫ হতে হবে।
ক্যাডেট হওয়ার জন্য শারীরিক সক্ষমতাকে খুবই গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়। মেরিন ক্যাডেট হিসেবে ছেলেদের কমপক্ষে ৫.৪ ইঞ্চি ও মেয়েদের ৫.২ ইঞ্চি হতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে ক্যাডেট ভর্তি করা হয়। মেরিন ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য ৬/৬ এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি ৬/১৮ হতে হবে।
পাঁচটি ধাপের ক্যাডেটদের নির্বাচন করা হয়:
দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে ইচ্ছুক প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। একাডেমির নির্ধারিত ফর্ম না করা পর্যন্ত কোন আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতি বছর প্রার্থীদের নতুন করে আবেদন করতে হবে। একজনের প্রার্থিতার উদ্দেশ্যে পরবর্তী বছরের আবেদনগুলি পরবর্তী বছরে বিবেচনা করা হবে না। ক্যাডেট নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন ভ্রমণ বা দৈনিক ভাতা প্রার্থীদের তাদের ভ্রমণের জন্য বা স্থগিত বয়সের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
সমস্ত পরীক্ষাগার অত্যাধুনিক এবং অত্যাধুনিক যন্ত্র এবং সুবিধায় সজ্জিত যা ক্যাডেটদের অনুশীলন প্রদান করে। পেশাদার কর্মীরা প্রকল্প এবং পরীক্ষা -নিরীক্ষায় ক্যাডেটদের সহায়তা ও সহায়তা দিতে সর্বদা প্রস্তুত।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং মানেই স্বপ্নের এক ক্যারিয়ার। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ যেমন সিঙ্গাপুর, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় চাকরির পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব। বাংলাদেশেও শিপবিল্ডিং কর্পোরেশন, খুলনা শিপইয়ার্ড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ও বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে রয়েছে চাকরির ব্যাপক চাহিদা।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী, BIWTA ও BIWTC ইত্যাদি সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছরই দক্ষ ও অভিজ্ঞ মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেয়া হয়। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে দেশী-বিদেশী জাহাজে নাবিকসহ ভালো মানের চাকরির অপার সুযোগ রয়েছে। মোটকথা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে বহুমুখী উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের হাতছানি।
এই সেক্টরে উপার্জন প্রতিষ্ঠানভেদে এবং দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। একজন ইঞ্জিনিয়ার দেশি জাহাজ বা অন্য প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারে। পক্ষান্তরে বিদেশী প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার জন্যও থাকে মানসম্মত ব্যবস্থা।
শেষ কথা
বর্তমানে যত ক্যারিয়ার রয়েছে তার মধ্যে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যতম। আপনি যদি আগ্রহী হন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা অর্জন করে আজই লেগে পড়ুন স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়ার কাজে। এখানে পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে আপনি চাকরির সর্বোচ্চ র্যাঙ্কে যেতে পারবেন।
পাশাপাশি এখানে পাচ্ছেন অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, সঙ্গে বিদেশে ঘোরার সুযোগ। যেহেতু বিশ্ব বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের ৯০ শতাংশই পণ্য পরিবাহিত হয় শিপিং ইন্ডাস্ট্রিতে। তাই এই বিশাল এ বিশাল সুযোগকে কাজে লাগাতে আজই পড়াশোনা শুরু করে দিন।
Leave a Comment