বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ। একদিকে যেমন পড়াশোনার প্রস্তুতি, অন্যদিকে কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন। আবার বিষয়ভিত্তিক ভর্তির প্রক্রিয়াও ভিন্ন। তাই দেশের বাইরে পড়ালেখার পরিকল্পনা থাকলে বৃত্তিসংশ্লিষ্ট বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য জেনে বুঝে গুছিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের জন্য কিছু স্কলারশিপ রয়েছে যেমন— বাংলাদেশ সরকারের স্কলারশিপ, বিদেশি সরকারের স্কলারশিপ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার স্কলারশিপ ও ইউনিভার্সিটির নিজস্ব স্কলারশিপ। বিদেশি সরকারের স্কলারশিপ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
এছাড়াও কাতার, তুরস্ক, মিসরসহ আরও কিছু দেশ স্কলারশিপ দিয়ে থাকে।
প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ আর সেশন ঠিক করে ভর্তি সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি জেনে নিন। সাধারণত মার্চ ও অক্টোবর মাসের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে হয়। কয়েকটি সেশনে ভর্তি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করার ধরন ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে আলাদা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কার্যকর। বিভিন্ন দূতাবাসের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজেও বৃত্তির তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও প্রাথমিক ধারণা নিতে পারেন। কী কী কাগজপত্র পাঠাতে হবে, খরচ কেমন… আবেদনের শেষ সময় কবে জেনে, বুঝে, কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন বিষয়টি তোমার জন্য মানানসই তা ঠিক করুন।
বোর্ড বা কলেজ থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মূল নম্বরপত্র ও সনদ সংগ্রহ করে রাখুন। স্নাতকোত্তরে আবেদনের জন্য অনার্সের নম্বরপত্র আর সনদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। ইউরোপ- আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়-নির্ধারিত খামে সনদ পাঠাতে হয়। সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় চাকুরিরত থাকলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি জমা দিতে হয়।
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রকাশের ‘ জন্য SAT, GRE বা GMAT স্কোরকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া ভাষা-দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে IELTS ও TOEFL স্কোরের গুরুত্ব অনেক। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বৃত্তিগুলোতে বেশিরভাগ বৃত্তিতে কমপক্ষে ৬.৫ স্কোর লাগে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে Test of English as a Foreign Language (TOEFL) স্কোর লাগে। যারা ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে পড়তে চান তাদের জন্য Graduate Management Admission Test (GMAT) স্কোর গুরুত্বপূর্ণ। আর বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে পড়তে চাইলে Graduate Record Examinations (GRE) স্কোর প্রয়োজন।
কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা একাডেমিক ক্ষেত্রে খুব আলোচিত ব্যক্তির কাছ থেকে Letter of Recommendation বা LOR সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের LOR’র নির্দিষ্ট ধরন থাকে, যা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যায়। যে বিষয়ে বা বিভাগে আবেদন করবেন তা কেন আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সম্ভাব্য গবেষণার বিষয়, কীভাবে গবেষণা করতে চান, কিসে আগ্রহ এসব নিয়ে Statement of Purpose (SOP) R Letter of Interest (LOI) লিখতে হয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজের ভাষায় এই পত্র লিখতে পারলে ভালো।
শেষ সময়ের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন পাঠাতে হবে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের শেষ তারিখের প্রায় ২০- ২৫ দিন আগেই আবেদনপত্র কুরিয়ারে পাঠাতে হয়।
বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে পরে পরামর্শ বা সহযোগিতার জন্য নেটওয়ার্কিং বেশ কাজে দেয় ৷ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং তৈরি করা খুবই সহজ। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম বা গ্রুপে যুক্ত হয়েও কাঙ্ক্ষিত ক্যাম্পাসের পরিবেশ, পড়াশোনা, আবাসন, ব্যয়, বৃত্তি বা বাড়তি কাজের কথা আগে থেকেই জানা সম্ভব। সম্ভাবনার দুয়ারে পৌঁছাতে প্রস্তুতি শুরু করুন এখনই।
— লেখক, পরামর্শক ও যুগ্মপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
Leave a Comment