আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
রসায়ন

রসায়ন পরিচিতি | Introduction to chemistry

রসায়ন পরিচিতি (Introduction to chemistry)

বিজ্ঞানের একটি শাখা হলাে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান (Natural Science)। যুক্তি দিয়ে, পর্যবেক্ষণ করে অথবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাকৃতিক কোনাে বিষয় সম্বন্ধে বােঝা বা তার ব্যাখ্যা দেওয়া বা সে সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করাই হলাে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কাজ। রসায়ন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে পদার্থের গঠন, পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থের পরিবর্তন নিয়ে আলােচনা করা হয়। যেমন: কয়লা একটি পদার্থ, কয়লার ভেতরে রয়েছে কার্বন। এখানে কয়লার ভেতরে কার্বন পরমাণুগুলাে কীভাবে থাকে আবার কয়লা পােড়ালে কয়লা বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কীভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং তাপ উৎপন্ন করে এ ধরনের আলােচনাগুলাে রসায়নে করা হয়।

পদার্থ তা জীব হােক বা জড় হােক সবই রসায়নের আলােচনার বিষয়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদার্থবিজ্ঞান (Physics), রসায়ন (Chemistry), উদ্ভিদবিদ্যা (Botany), প্রাণিবিদ্যা (Zoology), অণুজীববিজ্ঞান (Microbiology), জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy), মৃত্তিকাবিজ্ঞান (Soil Science) ইত্যাদি শাখা রয়েছে। তুমি যে খাবার খাচ্ছ তার মধ্যে কী কী পদার্থ আছে বা তা কীভাবে আছে (পদার্থের গঠন) সেটি রসায়নের বিষয়। আবার, তােমার অনেক সাধের সাইকেলটিও যেটা কেনার সময় অনেক সুন্দর ছিল, কিছু দিন পরে সাইকেলের যেসব অংশ লােহার তৈরি ছিল তার কোথাও কোথাও কেন মরিচা পড়ে গেছে এগুলােও রসায়নেরই বিষয়।

আরো পড়ুন : Current Affairs May 2021 PDF | কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স মে ২০২১ পিডিএফ

এ বিশ্ব যখন সৃষ্টি হয়েছিল তখন থেকেই রসায়নের যাত্রা শুরু। তবে সম্ভবত প্রথম যেদিন দুটি পাথরকে ঘষে মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখল সেসময় থেকেই এই রসায়নের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছে। এরপর প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই ধাতু নিষ্কাশন, মাটি পুড়িয়ে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি, বিভিন্ন গাছের নির্যাস থেকে ওষুধ আর সুগন্ধিজাতীয় দ্রব্য তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে মানুষ রসায়নের ব্যবহার করে আসছে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রথম ব্যবহৃত ধাতু হলাে সােনা।

এছাড়া সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তামা বা কপার, রুপা, টিন এসব ধাতু ব্যবহার করছে। খ্রিস্টপূর্ব 3500 অব্দের দিকে কপার ও টিন ধাতুকে গলিয়ে তরলে পরিণত করে এবং এ দুটি তরলকে একত্র মিশিয়ে অতঃপর মিশ্রণকে ঠাণ্ডা করে কঠিন সংকর ধাতুতে (alloy) পরিণত করা হয়। এ সংকর ধাতুর নাম ব্রোঞ্জ। এ ব্রোঞ্জ দিয়ে ভালাে মানের অস্ত্র তৈরি করা হতাে। তখনকার মানুষ পশু শিকার, ফসল ফলানাে, জ্বালানি হিসেবে কাঠ সংগ্রহসহ প্রয়ােজনীয় অনেক কাজে এ অস্ত্র ব্যবহার করত।

এ ব্রোঞ্জ তখনকার মানবজাতির জন্য এক অতিপ্রয়ােজনীয় পদার্থে পরিণত হয়। ব্রোঞ্জ-এর আবিষ্কার মানব সভ্যতাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রাচীনকালের দার্শনিকেরা পদার্থের গঠন নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করেন। খ্রিস্টপূর্ব 38০ অব্দের দিকে ১ গ্রিক দার্শনিক ডেমােক্রিটাস ঘােষণা করেন যে, প্রত্যেক পদার্থকে ভাঙতে থাকলে শেষ পর্যায়ে এমন

এক ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যাবে যাকে আর ভাঙা যাবে না। তিনি এর নাম দেন অ্যাটম (Atom অর্থ indivisible বা অবিভাজ্য)। প্রায় একই সময়ে ভারতীয় কোনাে কোনাে দার্শনিক ডেমােক্রিটাসের মতাে প্রায় একই ধারণা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এ ধারণাগুলাের কোনাে পরীক্ষামূলক ভিত্তি ছিল না। অ্যারিস্টটল এ ধারণার বিরােধিতা করেন। তখন অ্যারিস্টটলসহ অন্য দার্শনিকেরা মনে করতেন সকল পদার্থ মাটি, আগুন, পানি ও বাতাস মিলে তৈরি হয়। ফলে অ্যাটমের ধারণা অনেক দিন পর্যন্ত মানুষ গ্রহণ করেনি৷

মধ্যযুগে আরবের মুসলিম দার্শনিকগণ কপার, টিন, সিসা এসব স্বল্পমূল্যের ধাতু থেকে সােনা তৈরি করতে চেষ্টা করেছিলেন। তাদের আরেকটি চেষ্টা ছিল এমন একটি মহৌষধ তৈরি করা, যা খেলে মানুষের আয়ু অনেক বেড়ে যাবে। তারা অবশ্য এগুলােতে সফল হননি। তবে তারা অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন। ফলে সােনা বানাতে না পারলেও বিভিন্ন পদার্থ মিশিয়ে সােনার মতাে দেখতে এমন অনেক পদার্থ তৈরি করেছিলেন এবং তাদের এ পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলাে লিখে রেখেছিলেন।

মূলত এগুলােই ছিল রসায়নের ইতিহাসে প্রথম পদ্ধতিগতভাবে রসায়নের চর্চা বা রসায়নের গবেষণা। মধ্যযুগীয় আরবের রসায়ন চর্চাকে আলকেমি (Alchemy) বলা হতাে আর গবেষকদের বলা হতাে আলকেমিস্ট (Alchemist)। আলকেমি শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ আল-কিমিয়া থেকে। আল-কিমিয়া শব্দটি আবার এসেছে কিমি (chemi বা Kimi) শব্দ থেকে। এই chemi শব্দ থেকেই chemistry শব্দের উৎপত্তি, যার বাংলা প্রতিশব্দ হলাে রসায়ন। আলকেমিস্ট জাবির ইবনে হাইয়ান সর্বপ্রথম গবেষণাগারে রসায়নের গবেষণা করেন।

তাই তাঁকে কখনাে কখনাে রসায়নের জনক বলা হয়ে থাকে। জাবির ইবনে-হাইয়ান বিশ্বাস করতেন সকল পদার্থ মাটি, পানি, আগুন আর বাতাস দিয়ে তৈরি। তাই তিনি গবেষণা করলেও রসায়নের প্রকৃত রহস্যগুলাে তার কাছে পরিষ্কার ছিল না। তবে রসায়নের প্রকৃত রহস্য উদ্ভাবন করে রসায়ন চর্চা প্রথম শুরু করেন অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ে, রবার্ট বয়েল, স্যার ফ্রান্সিস বেকন এবং জন ডাল্টনসহ অন্যান্য বিজ্ঞানী। অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়েকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়।

বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থের গঠন, পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থের পরিবর্তন নিয়ে আলােচনা করা হয় তাকে রসায়ন বলে।

বিভিন্ন বিষয় রসায়নের দৃষ্টিকোণে বিশ্লেষণ

বিষয়/ঘটনা রসায়নের দৃষ্টিকোণে ঘটনার বিশ্লেষণ
কাঁচা আম টক কিন্তু পাকা আম মিষ্টি। কাঁচা আমে বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড থাকে যেমন: সাক্সিনিক এসিড,  ম্যালেয়িক এসিড প্রভৃতি থাকে, ফলে কাঁচা আম টক। কিন্তু আম যখন পাকে তখন এই এসিডগুলাের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে গ্লুকোজ ও ফুক্টোজের সৃষ্টি হয়। তাই পাকা আম মিষ্টি।
কেরােসিন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও মােমের দহন। কেরােসিন, প্রাকৃতিক গ্যাস, মােম এগুলাের মূল উপাদান হাইড্রোকার্বন।  হাইড্রোকার্বন হচ্ছে কার্বন আর হাইড্রোজেনের যৌগ। তাই যখন এগুলাের দহন ঘটে তখন বাতাসের অক্সিজেনের সাথে এগুলাের বিক্রিয়া হয় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, আলাে আর তাপশক্তির সৃষ্টি হয়।
পেটের এসিডিটির জন্য এন্টাসিড ওষুধ খাওয়া।  পাকস্থলীতে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড জমা হলে পেটে এসিডিটির সমস্যা হয়। এন্টাসিডে থাকে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড। এ দুটি যৌগ এসিডকে প্রশমিত করে।

এ ঘটনাগুলাে থেকে সহজেই বুঝতে পারছ যে, আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত রাসায়নিক পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। কাজেই বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখার একটি হলাে রসায়ন।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.
Back to top button