১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ভুটান স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করে । যার ফলে স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা এখন ৪৫টি
LDCs’র পূর্ণরূপ Least Developed Countries অর্থাৎ, স্বল্পোন্নত দেশসমূহ। স্বল্পোন্নত দেশের ধারণাটি আসে ষাটের দশকে। জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে উন্নয়নশীল ও উন্নত এই দুই শ্রেণিতে বিশ্বের সব দেশকে ভাগ করে।
তবে উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে আবার যেসব দেশ তুলনামূলক দুর্বল, তাদের নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশের (LDC) তালিকা হয়। ১৮ নভেম্বর ১৯৭১ জাতিসংঘের এক প্রস্তাবের মাধ্যমে LDC গ্রুপ গড়ে ওঠে । উন্নত দেশের পক্ষ থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুবিধা দেয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে LDC-তে যুক্ত হয় দক্ষিণ সুদান । বর্তমানে বিশ্বে ৪৫টি স্বল্পোন্নত দেশ রয়েছে।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি বা উত্তরণের সূচকগুলো হলো— তিন বছরের গড় মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (GNI), পুষ্টি, স্বাস্থ্য, স্কুলে ভর্তি ও শিক্ষার হারের সমন্বয়ে তৈরি মানব সম্পদ সূচক (HAI) এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আঘাত, জনসংখ্যার পরিমাণ এবং বিশ্ববাজার থেকে একটি দেশের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি আর্থিক ভঙ্গুরতা সূচক (EVI)।
[penci_related_posts dis_pview=”no” dis_pdate=”no” title=”এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন” background=”” border=”” thumbright=”no” number=”4″ style=”list” align=”none” withids=”” displayby=”cat” orderby=”rand”]
একটি দেশ যেকোনো দুটি সূচক অর্জন করতে পারলে LDC থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করে । তবে যেকোনো দেশ মাথাপিছু জাতীয় আয় মূল্যায়নের নির্ধারিত বছরে প্রয়োজনীয় আয়ের দ্বিগুণ অর্থাৎ ২,৪৪৪ মার্কিন ডলার বা তার চেয়ে বেশি আয় করলে LDC থেকে বেরিয়ে আসার আবেদন করতে পারে ।
সুচক | অন্তর্ভুক্তি | উত্তরণ | বাংলাদেশের অর্জন |
GNI | ১,০১৮$ বা এর কম | ১,২২২$ বা এর বেশি | ১৮২৭$ |
HAI | ৬২ বা এর কম | ৬৬ বা এর বেশি | ৭৫.৩ |
EVI | ৩৬ বা এর বেশি | ৩২ বা এর কম | ২৭.২ |
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত উন্নয়ন নীতি কমিটি (Committee for Development Policy – CDP) জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ECOSOC) একটি সহযোগী স্বাধীন ফোরাম। CDP’র সদস্য সংখ্যা ২৪। কোনো দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য CDP প্রথমে ECOSOC-এ সুপারিশ করে । এরপর ECOSOC তা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে (UNGA) অনুমোদনের জন্য পাঠায় । CDP’র চূড়ান্ত সুপারিশের তিন বছর পর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেওয়া হয় ।
১৯৭১ সালের পর এই পর্যন্ত মোট ৭টি দেশ LDC থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হয় ।
দেশ | অন্তর্ভুক্তি | উত্তরণ |
বতসোয়ানা | ১৯৭১ | ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৪ |
কেপভার্দে | ১৯৭৭ | ২০ ডিসেম্বর ২০০৭ |
মালদ্বীপ | ১৯৭১ | ১ জানুয়ারি ২০১১ |
সামোয়া | ১৯৭১ | ১ জানুয়ারি ২০১৪ |
নিরক্ষীয় গিনি | ১৯৮২ | ৪ জুন ২০১৭ |
ভানুয়াতু | ১৯৮৫ | ৪ ডিসেম্বর ২০২০ |
ভুটান | ১৯৭১ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ |
দেশ | অন্তর্ভুক্তি | উত্তরণ হবে |
সাওটোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে | ১৯৮২ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ |
বাংলাদেশ | ১৯৭৫ | ২৪ নভেম্বর ২০২৬ |
লাওস | ১৯৭১ | ২৪ নভেম্বর ২০২৬ |
নেপাল | ১৯৭১ | ২৪ নভেম্বর ২০২৬ |
সলোমন দ্বীপপুঞ্জ | ১৯৯১ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৭ |
১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে । সেই সময়ে স্বল্পোন্নত দেশের শর্ত ছিল ১ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ অন্তর্ভুক্ত হবে না। বাংলাদেশে সাড়ে ৭ কোটি জনসংখ্যা থাকায় তাই সম্ভব হয়নি। ১৯৭৫ সালে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলামের একান্ত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হয় ।
২০১৮ সালে জাতিসংঘের তিনটি শর্তই পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করে। এরপর ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ CDP’র ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করে। বাংলাদেশের সাথে নেপাল এবং লাওসও উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়।
বাংলাদেশের ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করার কথা থাকলেও করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে প্রস্তুতি নিতে ১৫ জানুয়ারি ২০২১ বাড়তি দুই বছর সময় চেয়ে আবেদন করে। এখন সব কিছু ঠিক থাকলে ২৪ নভেম্বর = ২০২৬ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে।
Leave a Comment