100 English Essay For Juniors

‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো’ কথাটি শাহরিয়ার তুষার ছোট বেলা থেকেই গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছাত্রজীবনে ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা। দেশের প্রধানমন্ত্রী মেধাবী তুষারের গুণে মুগ্ধ হয়ে তার সাথে নিজ মেয়ের বিয়ে দেন। অনেক দামি দামি স্বর্ণালংকার দেন মেয়েকে। জনগণের ব্যাপক সমর্থনে তুষার এবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি তার স্ত্রীকে আদেশ দিলেন, তার পিতার দেয়া দামি দামি স্বর্ণালংকার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে কেননা ওগুলো জনগণের টাকায় কেনা ছিল। তবে তার গৃহীত নীতি, তার বংশের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল ।

ক. উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. কারবালার কাহিনিকে মর্মান্তিক বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে শাহরিয়ার তুষারের সাথে উমাইয়া যুগের কোন খলিফার চরিত্রের মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তিনি কি উমাইয়া বিলাত পতনের জন্য দায়ী ছিলেন? ব্যাখ্যা করো ।

প্রশ্নের উত্তর

ক. . উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা খলিফা আমির মুয়াবিয়া।

খ. কারবালার যুদ্ধে অত্যন্ত করুণভাবে মুসলমানদের হত্যা করা হয় এবং অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নবি করিম (স)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের । শিরশ্ছেদ করা হয়। তাই এ হত্যাকাণ্ডকে মর্মান্তিক বলা হয়।

৬০ হিজরির ১০ই মহররম কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেনের বাহিনী ও ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শুরু হয়। ইয়াজিদ বাহিনী ফোরাত নদীর পাড় দখল করে ইমাম হোসেনের বাহিনীকে পানি থেকে বঞ্চিত করে। ফলে পানির অভাবে ইমাম হোসেনের ভ্রাতুষ্পুত্র কাসেম মৃত্যুবরণ করেন। পরে ইমাম হোসেন নিজপুত্র শিশু আসগরকে নিয়ে ফোরাত নদীতে পানির জন্য গেলে আসগর শরবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। পরে ইয়াজিদের নির্দেশে পাপিষ্ট সীমার তরবারি দ্বারা ইমাম হোসেনের শিরশ্ছেদ করে। নবি করিম (স)-এর দৌহিত্রের এ বেদনাদায়ক হত্যাকাণ্ডকে তাই মর্মান্তিক ঘটনা বলা হয় ।

গ. উদ্দীপকের শাহরিয়ার তুষারের সাথে উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের চরিত্রের মিল পাওয়া যায়।

খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ উমাইয়া বংশের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী এক শ্রেষ্ঠ ও মহান শাসক ছিলেন। তিনি তার শাসনামলে কুরআন সুন্নাহর আলোকে সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন। তিনি অনাড়ম্বর ও সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন। উদ্দীপকে তার এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটেছে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো- এ কথাটি শাহরিয়ার তুষার গভীরভাবে বিশ্বাস করেন। তাই তিনি তার স্ত্রীকে পিতার দেওয়া সকল স্বর্ণালংকার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন। অনুরূপভাবে উমর বিন আবদুল আজিজ উমাইয়াদের বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্র ও নিষ্ঠুরতার যুগে জন্মগ্রহণ করলেও এসব কিছু তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তিনি তার শাসনামলে উমাইয়াদের সকল অনিয়ম পরিহার করে খুলাফায়ে রাশেদিনের শাসন ব্যবস্থাকে অনুসরণ করেন।

তাছাড়া তিনি অত্যন্ত অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করতেন। তিনি প্রথম ওমরের (রা) মতো তালিযুক্ত কাপড় পরিধান করতেন। তিনি তার স্ত্রী ফাতিমার যৌতুক হিসেবে প্রাপ্ত সব অলংকার বিক্রি করে সে অর্থ রাজ কোষাগারে জমা দেন। আর এ বিষয়গুলোই শাহরিয়ার তুষারের সাথে ওমর বিন আবদুল আজিজের সাদৃশ্য রচনা করেছে।

আরো পড়ুন : কাকে আরব বিশ্বের প্রথম রাজা বলা হয়? খলিফা আবদুল মালিককে ‘রাজেন্দ্র’ বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত খলিফার অর্থাৎ খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের শাসন সংস্কার উমাইয়া বংশের পতনের জন্য দায়ী বলে আমি মনে করি না।

খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের শাসন সংস্কার উমাইয়া খিলাফতের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিলেও এ বংশের পতনে তার গৃহীত নীতি সম্পূৰ্ণরূপে দায়ী ছিল না। কেননা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তার শাসনকালের প্রতিটি দিক বিবেচনা করলে উমাইয়া বংশের পতনের জন্য তাকে দায়ী করা যায় না। তাছাড়া তার উদার ও সাম্যনীতির ফলে উমাইয়া বংশের প্রতি কেউ শত্রুভাবাপন্ন ছিল না।

দ্বিতীয় ওমর (ওমর বিন আবদুল আজিজ) তার শাসনামলে উমাইয়া, হাশেমি, আরব- অনারব, হিমারীয়-মুদারীয় দ্বন্দ্ব নিরসন করার চেষ্টা করেন এবং অনেকাংশে সফল হন। রক্তপাত, ষড়যন্ত্র এবং বিশ্বাসঘাতকতার বিভীষিকার মধ্যে তার শাসনকাল উপশমের ভূমিকা পালন করেছে উমাইয়া খিলাফত পতনের দায় তার ওপর আরোপিত হওয়া ঠিক নয় কেননা তার তিরোধানের পর যদি তার নীতি অনুসৃত হতো তাহলে আলী ও আব্বাসি বংশীয়রা সহজে ক্ষুব্ধ হতো না। তাদের আন্দোলনের জন্য দায়ী পরবর্তী দুর্বল শাসকেরা, খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ নন। তার মৃত্যুর পর পূর্বের অসাম্য ও ভেদাভেদ নীতি আরব সমাজে নতুন করে আবির্ভূত হওয়ায় উমাইয়াবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে এবং উমাইয়াদের পতন হয়।

উপর্যুক্ত আলোচনার দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, উমাইয়া বংশের পতনের পেছনে ওমর বিন আবদুল আজিজের শাসন সংস্কার দায়ী ছিল না। তবে তার শাসন সংস্কার উমাইয়াদের ভিত্তিকে কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত পতন ত্বরান্বিত করেছিল তার পরবর্তী অযোগ্য শাসকগণ ।

Related Post

Leave a Comment