আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

‘কুব্বাতুস সাখরা’ কী? খলিফা আবদুল মালিক কর্তৃক আরবি ভাষা জাতীয়করন বিষয়ে ধারণা দাও।

রাজা আলমগীর তার সাম্রাজ্যে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। কেন্দ্ৰীয় টাকশাল স্থাপন করে নির্দিষ্ট মানের মুদ্রা চালু করেন। ফলে ক্রেতা- বিক্রেতা উভয়ে উপকৃত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটে। তিনি প্রচলিত ডাক ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করেন। সাম্রাজ্যের সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য সুরম্য প্রাসাদ, নান্দনিক স্মৃতিফলক প্রভৃতি নির্মাণ করেন, যা সকলের দৃষ্টি কাড়ে। এভাবে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশে তিনি অনবদ্য ভূমিকা রাখেন ।

ক. ‘কুব্বাতুস সাখরা’ কী?
খ. খলিফা আবদুল মালিক কর্তৃক আরবি ভাষা জাতীয়করন বিষয়ে ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকের রাজা আলমগীরের মুদ্রা সংস্কার খলিফা আবদুল মালিকের মুদ্রা সংস্কারের অনুরূপ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. স্থাপত্য শিল্পের উন্নয়নে উদ্দীপকের রাজার তুলনায় আবদুল মালিকের কৃতিত্ব ছিল অনেক বেশি উদ্ভিটির যথার্থতা যাচাই করো।

প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘কুব্বাতুস সাখরা’ হলো উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমে নির্মিত অষ্টাকোণাকৃতির একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যেটি ‘Dome of the Rock’ নামে পরিচিত

খ. খলিফা আবদুল মালিক রাষ্ট্রকে জাতীয়করণ এবং রাষ্ট্রে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আরবিকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দান করেন অর্থাৎ আরবি ভাষা জাতীয়করণ করেন। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের রাজত্বকাল উমাইয়া বংশের সবচেয়ে গৌরবময় যুগ। তার শাসননীতি মূলত আরব জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশের জন্য বিখ্যাত ছিল। তিনি শাসনক্ষমতায় বসে দেখলেন যে আরব মুসলিমরা রাজ্যশাসন করলে ও মূলত অনারব জনগোষ্ঠীই উমাইয়া খিলাফতের প্রশাসন ব্যবস্থাকে পরিচালিত করছে। ফলে আরব মুসলিম শাসননীতি কার্যকর হচ্ছে না । এ কারণেই খলিফা মালিক আরবি ভাষাকে জাতীয়করণ করেন।

গ. উদ্দীপকের রাজা আলমগীরের মুদ্রা স খলিফা আবদুল মালিকের মুদ্রা

সংস্কারের অনুরূপ। মুদ্রা হলো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কিন্তু আবদুল মালিকের পূর্বে আরবদের কোনো নিজস্ব মুদ্রা ছিল না। ফলে সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে খলিফা আবদুল মালিক সর্বপ্রথম মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করেন। এই সংস্কারেরই প্রতিফলন ঘটেছে রাজা আলমগীরের মুদ্রা সংস্কারের ক্ষেত্রে।

রাজা আলমগীর তার সাম্রাজ্যে কেন্দ্রীয় টাকশাল স্থাপন করে নির্দিষ্ট মানের মুদ্রা চালু করেন। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে উপকৃত হয়। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের সংস্কারের ক্ষেত্রেও এমনটি দৃষ্টিগোচর হয়। তার সময়ে সাম্রাজ্যে তিন ধরনের মুদ্রা প্রচলিত ছিল। যেমন বাইজান্টাইনে Dinarious, পারস্যে Darkmah এবং দক্ষিণ ইয়েমেনে Athene নামক মুদ্রা চালু ছিল । এতে সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল ছিল না। মুদ্রা বিনিময়ের সমস্যার ফলে ব্যবসা- বাণিজ্যে অসুবিধা দেখা দিত । এছাড়া মুদ্রার ছাপ ও মূল্য নির্ণয় একেবারে।

অনির্ধারিত থাকায় বাজারে অনায়াসে জাল মুদ্রা প্রচলিত হতো। এসব কারণে খলিফা আবদুল মালিক সর্বপ্রথম খাঁটি আরবি মুদ্রা প্রচলনের জন্য ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে জাতীয় টাকশাল গঠন করেন। তিনি দিনার, দিরহাম ও ফালুস নামের স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রার প্রচলন করেন। মুদ্রাগুলোকে জাতীয়করণ ও আরবীয়করণের জন্য মুদ্রায় ক্রুসের পরিবর্তে আরবি বর্ণমালা দেখা হয়। সুতরাং বোঝা যায়, রাজা আলমগীরের মুদ্রা সংস্কার খলিফা আবদুল মালিকের মুদ্রা সংস্কারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ঘ. স্থাপত্য শিল্পের উন্নয়নে উদ্দীপকের রাজার তুলনায় আবদুল মালিকের কৃতিত্ব ছিল অনেক বেশিড় উক্তিটি যথার্থ। ইসলামের ইতিহাসে রাজেন্দ্র নামে পরিচিত আবদুল মালিক উমাইয়া বংশের শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতা বলে উমাইয়া সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন। এ বলিষ্ঠ চরিত্রের মন ছিল শিল্পানুরাগী। তার মার্জিত রুচিবোধের সামান্য প্রতিফলন লক্ষ করা যায় উদ্দীপকের রাজার মধ্যে।

উদ্দীপকের রাজা আলমগীর সাম্রাজ্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সুরম্য প্রাসাদ, নান্দনিক স্মৃতিফলক প্রভৃতি নির্মাণ করেন। স্থাপত্য শিল্পে তার এ অবদান সকলের দৃষ্টি কাড়লেও এগুলো আবদুল মালিকের অবদানের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। আবদুল মালিক শিল্প, স্থাপত্য ও সংস্কৃতির একজন উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নির্মাতা হিসেবে তার কৃতিত্ব অপরিসীম। দজলা নদীর পশ্চিম তীরে সামরিক শহর ‘ওয়াসিত’ ও আল আকসা মসজিদ তার স্থাপত্য কীর্তির উজ্জ্বল নিদর্শন।

তবে স্থাপত্য শিল্পে তার সবচেয়ে বড় কীর্তি হচ্ছে ‘কুব্বাতুস সাখরা” বা Dome of the Rock নামক একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রতিদ্বন্দ্বী খলিফা ইবনে জুবায়েরের শাসনাধীন মক্কার কাবাগৃহের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবদুল মালিক ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমে একটি স্থাপত্য কীর্তি নির্মাণ করেন । এটি ছিল মহানবি (স)-এর মিরাজের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র পাথরের ওপর নির্মিত অক্টাকোণাকৃতির স্থাপত্য শিল্প। এছাড়া তিনি দামেস্কে মহাফেজখানা বা সরকারি দলিল-দস্তাবেজখানা স্থাপন করেন।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, উদ্দীপকের রাজা স্থাপত্য শিল্পে যে উন্নয়ন করেছেন তার চেয়ে খলিফা আবদুল মালিকের অবদান অনেক বেশি ।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button