ন্যানোটেকনোলজি কী? ‘মানুষের চিন্তাভাবনা যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব'- ব্যাখ্যা করো।

ড. মাকসুদ দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণের নিমিত্তে দীর্ঘদিন গবেষণা করে উন্নত জাতের ধান আবিষ্কার করেন। তথ্যের যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় অন্য একজন তার গবেষণালব্ধ ফল নিজের নামে পেটেন্ট (Patent) দাবি করে।

ক. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কী?
খ. “বিশ্বগ্রামের মেরুদণ্ডই হচ্ছে কানেক্টিভিটি” – বিশ্লেষণ করো।
গ. খাদ্য ঘাটতি পূরণে মাকসুদ সাহেবের প্রযুক্তি বর্ণনা করো।
ঘ. পেটেন্ট দাবিকারীর কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করো ।

ক. যে প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যের সত্যতা ও বৈধতা যাচাই, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, আধুনিকীকরণ ও ব্যবস্থাপনা করা হয় তাকে তথ্য প্রযুক্তি বা ইনফরমেশন টেকনোলজি সংক্ষেপে আইটি (IT) বলা হয়। ডেটা কমিউনিকেশন ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কমিউনিকেশন টেকনোলজি বলা হয়। এটি একটি আরেকটির পরিপূরক। এ দুটি ব্যবস্থার সমন্বয়কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ICT বলা হয়।

খ. বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা, যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষই একটি একক সমাজে বসবাস করে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পারস্পরিক চিন্তা চেতনা, অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি কৃষ্টি ইত্যাদি বিনিময় করতে পারে ও একে অপরকে সেবা করতে পারে ।

বিশ্বগ্রাম তৈরির প্রধান কারণ হচ্ছে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ। আর এ যোগাযোগ মূলত ইলেকট্রনিক যোগাযোগ বা ইন্টারনেট। ফলে বলা হয়ে থাকে কানেক্টিভিটিই হচ্ছে বিশ্বগ্রামের মেরুদন্ড।

গ. ড. মাকসুদ সাহেবের গবেষণায় ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।

জিন প্রকৌশল বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে বংশগতির প্রযুক্তিবিদ্যা । যে পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো জীবের জিনোমের মধ্যে নতুন জিন যোগ করা বা কোনো জিন অপসারণ করা বা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়, সে পদ্ধতিকে জিন প্রকৌশল বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলা হয়।

এক্ষেত্রে ড. মাকসুদ সাহেব গবেষণায় থাকাকালীন অবস্থায় বীজের গবেষণা কাজে বায়োইনফরমেটিক্সকে কাজে লাগিয়ে বীজের জিনোম সিকুয়েন্স বা জিনোম কোড সম্পর্কে ধারনা পেয়েছেন। পরবর্তীতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে বীজের জীনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে নতুন জাতের উন্নতমানের বীজ উৎপাদন করেছেন যা বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করছে এবং কৃষক নতুন জাতের বীজ থেকে ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছে। ফলে খাদ্য ঘাটতি পূরণে ড. মাকসুদ সাহেবের ব্যবহৃত প্রযুক্তি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং খুবই ফলপ্ৰসু ।

উন্নত বীজ উৎপাদন ছাড়াও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। যেমন:

বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব থেকে তৈরি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ।

  • মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কৃষিবিজ্ঞানিরা অধিক ফলনশীল উন্নতমানের খাদ্যদ্রব্য (ধান, মটর, শিম ইত্যাদি) উৎপাদন করছে।
  • নানা ধরনের বিষাক্ত ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো নষ্ট করে ফেলা যাচ্ছে।
    ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অপরাধি সনাক্তকরণ এবং সন্তানের পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নির্ণয় করা যায়।
  • টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে পাতা থেকে গাছ তৈরি অথবা প্রাণীদেহের বিশেষ কোষগুচ্ছ থেকে কোনো বিশেষ অঙ্গ তৈরির কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
  • রিকম্বিনেট ডিএনএ তৈরি করার মাধ্যমে প্রয়োজন মতো ও পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ মানব ইনসুলিন ও মানুষের বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রনকারী হরমোন উৎপাদন করা যাচেছ ।

আরো পড়ুন :

ঘ. পেটেন্ট দাবি কারির দাবি সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক। প্রথমত এটি প্লেজারিজমের ইঙ্গিত দেয়। প্লেজারিজম হলো অন্যের লেখা বা গবেষণালব্ধ তথ্য নিজের নামে চালিয়ে দেয়া। ইন্টারনেটে পৃথিবীর প্রায় সব বিষয়েই কোনো না কোনো তথ্য আছে। এসব তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রকৃত তথ্য দাতার অবদান স্বীকার করা না হলে তা প্লেজারিজমের মধ্যে পড়বে। তথ্যসূত্র উল্লেখ ব্যতিত কোন ছবি, অডিও, ভিডিও এবং তথ্য ব্যবহার করা একটি অন্যায় কাজ।

তথ্যের অননুমোদিত ব্যবহার মারাত্মকভাবে ব্যক্তির প্রাইভেসিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। একইসাথে গবেষণালব্ধ আবিস্কারের পেটেন্ট রাষ্ট্রিয়ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে প্যাটেন্টের মেধাস্বত্ত আইনি ব্যবস্থার মাধ্যম কপিরাইট করিয়ে রাখলে পরবর্তীতে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় না।

নৈতিকতা হলো মানুষের কাজ কর্ম, আচার ব্যবহারের সেই মূলনীতি যার ওপর ভিত্তি করে মানুষ একটি কাজের ভালো বা মন্দ দিক বিচার বিশ্লেষণ করতে পারে। সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি নতুন মাত্রা থাকে যা অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। নৈতিকতা মানুষকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে। কী করা উচিত, কী করা অনুচিত তা নৈতিকতার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ব্যক্তির নৈতিকতার বিষয়ে নিম্নলিখিত নিয়মসমূহ মেনে চলা উচিত :

  • অনুমতি ব্যতিত অন্যের ফাইল, গোপন তথ্য সংগ্রহ না করা।
  • বিনা অনুমতিতে তথ্য সংক্রান্ত রিসোর্স ব্যবহার না করা।
  • অন্যের বুদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত ফলাফল আত্মসাৎ না করা।

Related Post

Leave a Comment