ন্যানোটেকনোলজি কী? ‘মানুষের চিন্তাভাবনা যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব'- ব্যাখ্যা করো।

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করেছে। সেজন্য প্রত্যেককে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আঙুলে ছাপ নেয়ার পাশাপাশি কণ্ঠস্বরও রেকর্ড করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিরা ঢাকায় বসেই বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গাদের ছবিসহ স্বাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ।

ক. ন্যানোটেকনোলজি কী?
খ. মানুষের চিন্তাভাবনা যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সংবাদ সংস্থার প্রযুক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে নিবন্ধন কার্যক্রমে নেয়া কৌশলের মধ্যে কোনটি বেশি উপযোগী-বিশ্লেষণপূর্বক তোমার মতামত দাও।

ক. ন্যানোটেকনোলজি হলো এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে ন্যানোমিটার স্কেলে একটি বস্তুকে বা পদার্থকে তার আনবিক পর্যায়ে রেখে নিপুণভাবে ব্যবহার করা যায় অর্থ্যাৎ এর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, ধ্বংস বা সৃষ্টি করা যায় ।

খ. মানুষের চিন্তা-ভাবনা অথবা বুদ্ধিমত্তার পদ্ধতিটাকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্র বা কম্পিউটারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাটাই হলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের MIT এর অধ্যাপক জন ম্যাককেথি সর্বপ্রথম আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স শব্দটির সাথে সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন।

ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিমত্তা শব্দটি কতগুলো বিশেষ গুণের সমষ্টিগত রূপ যেমন : কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ধারণা করতে পারা, সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষ নেয়া, কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারা, অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারা, ভাষা বুঝতে পারার সক্ষমতা এসবই বুদ্ধিমত্তার অংশ। এ বুদ্ধিমত্তা বা ইন্টেলিজেন্স এর আগে কৃত্রিম শব্দটি তখনই বসানো যায় যখন এ গুণগুলোকে কোনো সিস্টেমের মাঝে সিমুলেট করা সম্ভব হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারকে তিনটি প্রধান এলাকায় গ্রুপভুক্ত করা যায়। এগুলো হলো-বুদ্ধিভিত্তিক বিজ্ঞান (Cognitive Science), রোবোটিক্স ( Robotics), ন্যাচারাল ইন্টারফেস (Natural Interface)

গ. উদ্দিপকে উল্লেখিত সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিরা ঢাকায় বসেই বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাক্ষাৎকার গ্রহণ করছেন। এক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে স্বাক্ষাৎকার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
ভিডিও কনফারেন্সং-এর মাধ্যমে দূরে থেকেও অডিও, ভিডিও এর মাধ্যমে ছবি দেখে ও কথা বিনিময় করে আলাপ আলোচনা করা যায় । এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কিংবা এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

অধিকন্তু ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থায় টেলিভিশনের পর্দায় অংশগ্রহণকারীরা পরস্পরের সম্মুখীন হয়ে একে অন্যকে দেখে কথোপকথনে অংশগ্রহণ করেন। এ ব্যবস্থায় ক্যামেরা থেকে সংগৃহীত ছবি এবং মাইক্রোফোন ও স্পিকার থেকে সংগৃহীত শব্দের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান হয়।

এক পাশের ব্যক্তি শব্দ ও ছবির প্রতি উত্তরে অন্য পাশের ব্যক্তির শব্দ ও ছবি প্রেরণের মাধ্যমে মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং সম্পন্ন হয় । ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য যে সব উপাদানগুলো প্রয়োজন তা হলো- মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার, ওয়েব ক্যামেরা, ভিডিও ক্যাপচার কার্ড, মডেম ও ইন্টারনেট সংযোগ।

আরো পড়ুন :

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনায় বায়োমেট্রিক সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। বায়োমেট্রিক্স হচ্ছে ব্যক্তি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে মানুষের কতগুলো জৈবিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করা হয়।

  • জৈবিক বা শারীরিক বৈশিষ্ট্য: ফিংগার প্রিন্ট, হ্যান্ড জিওমেট্রি, আইরিস বা রেটিনা স্ক্যান, ফেইস রিকগনিশন, ডিএনএ।
  • আচরণগত বৈশিষ্ট্য: ভয়েস রিকগনিশন, সিগনেচার ভেরিফিকেশন, টাইপিং কি-স্ট্রোক ।

বায়োমেট্রিক সিস্টেম একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। এর জন্য আগে থেকে একটি সফটওয়্যার তৈরি করে নিতে হয় এবং যে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বায়োমেট্রিক ব্যবহার করা হবে তার জন্য উপযুক্ত হার্ডওয়্যার অর্থাৎ স্ক্যানিং ডিভাইস প্রয়োজন হয়।

বায়োমেট্রিক সিস্টেম দুটি পর্যায়ে কাজ করে : প্রথমত, কোনো ব্যক্তির বায়োমেট্রিক ডেটা বায়োমেট্রিক ডিভাইস দ্বারা স্ক্যান করে ভেরিফিকেশনের জন্য ডেটাবেজে রেখে দেয়া হয়। দ্বিতীয়ত, ভেরিফিকেশনের সময় উক্ত ব্যক্তির স্ক্যানকৃত বায়োমেট্রিক ডেটা, ডেটাবেজে রক্ষিত ডেটার সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। যদি নতুন স্ক্যানকৃত ডেটা ডেটাবেজে রক্ষিত ডেটার সাথে পুরোপুরি মিলে যায় তাহলে সিস্টেমটি উক্ত ব্যক্তিকে চিনতে পারে। আর না মিললে উক্ত ব্যক্তিকে চিনতে পারেনা।

উদ্দীপকে উল্লেখিত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ফিংগার প্রিন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে যা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পরে আবার কন্ঠস্বরও রেকর্ড করা হচ্ছে যা আচরণগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পরে। এ দুটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে শারীরিক বৈশিষ্ট্যের বায়োমেট্রিক সিস্টেমে আচরণগত বৈশিষ্ট্যের বায়োমেট্রিক্স সিস্টেম হতে অধিক কার্যকর। কারণ মানুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্যসমূহ সহজে পরিবর্তীত হয় না। পক্ষান্তরে আচরণগত বৈশিষ্ট্যসমূহ পরিবর্তনশীল। সুতরাং বলা যায় উদ্দীপকে উল্লেখিত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত আঙুলের ছাপ বা ফিংগার প্রিন্ট পদ্ধতির বায়োমেট্রিক্স, কন্ঠস্বরের মাধ্যমে নিবন্ধিত বায়োমেট্রিক সিস্টেমের চেয়ে অধিক কার্যকর।

Related Post

Leave a Comment