মাদারীপুর

প্রাচীনকালে মাদারীপুরের নাম ছিল ইদিলপুর। ইদিলপুর চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের একটি উন্নত জনপদ ছিল। তখন এ অঞ্চলের প্রশাসনিক নাম ছিল নাব্যমন্ডল। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকে ইদিলপুর ও কোটালীপাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। সেন রাজাদের পতনের পর চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বরিশাল বিভাগ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট জেলা চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অধীনে ছিল।

ফরিদপুর মাদারীপুরের প্রথম ঐতিহাসিক নাম ফতেহাবাদ। ১৭৫৭ সালে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্যদিয়ে এদেশে ইংরেজ শাসনের সূত্রপাত ঘটে। ১৮৫৪ সালে মহকুমা ও থানা সৃষ্টি হলে ‘মাদারীপুর’ নাম প্রশাসনিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে বাংলা বিভক্ত হয়ে, পূর্ববাংলা পাকিস্তানের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। মাদারীপুর ১৮৫৪ সালে মহকুমা হিসেবে ঘোষিত হওয়ার দীর্ঘদিন পর ১ মার্চ ১৯৮৪ জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায় ৷

সাধারণ তথ্যাবলি

  • প্রতিষ্ঠা : ১ মার্চ ১৯৮৪
  • সীমানা : উত্তরে ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ, পূর্বে শরিয়তপুর, পশ্চিমে ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ এবং দক্ষিণে গোপালঞ্জ ও বরিশাল জেলা
  • আয়তন : ১,১২৫.৬৯ বর্গ কিমি
  • জনসংখ্যা : ১২,৯৩,০২৭ জন
  • জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার : ০.৯২% সাক্ষরতা (৭ বছর ও তদূর্ধ্ব) : ৭৪.৯৩%
  • ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) : ১,১৪৯ জন
  • প্ৰধান নদনদী : আড়িয়াল খাঁ, কুমার, লোয়ার কুমার, কাঁটা কুমার, কৃত্তীনাশা, পদ্মা, বিল পদ্মা, ময়নাকাটা, টরকী।

প্রশাসনিক কাঠামো

  • উপজেলা : ৫টি। মাদারীপুর সদর, শিবচর, কালকিনি, রাজৈর ও ডাসার
  • থানা : ৫টি
  • পৌরসভা : ৪টি। মাদারীপুর সদর, শিবচর, কালকিনি ও রাজৈর
  • ইউনিয়ন : ৫৯টি
  • জাতীয় সংসদের আসন : ৩টি

[box type=”info” align=”” class=”” width=””]জেলা ব্র্যান্ডিং : রস খেজুর, খেজুর গুড় দক্ষিণের দার মাদারীপুর[/box]

খেজুরের রস, খেজুরের গুড় এবং বাংলাদেশের দক্ষিণের প্রবেশদ্বার মাদারীপুর একটি | চমৎকার নকশার অংশবিশেষকে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের লোগো হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

নামকরণ

পঞ্চদশ শতাব্দীর সুফি সাধক কুতুব-ই-জাহান হযরত বদিউদ্দীন আহমেদ জিন্দা শাহ মাদার (র.) এর নাম অনুসারে মাদারীপুর জেলার নামকরণ করা হয়। শাহ মাদার (র.) ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সিরিয়া হতে সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসনকালে (১৩৫১-১৩৮৮ সাল) ভারতে পরবর্তীতে বঙ্গের নানা স্থানে ভ্রমণ করেন।

চতুর্দশ শতাব্দীর কোনো এক সময়ে বঙ্গের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণের এক পর্যায়ে তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের উত্তর সীমান্তে গভীর অরন্যের যে স্থানটিতে তিনি ক্ষণিকের অতিথি হয়ে সহযাত্রীদের নিয়ে যাত্রা বিরতি বা বিশ্রাম গ্রহণ করেন সে স্থানটিতে তার নামানুসারে হযরত শাহ মাদার (র.) এর দরগাহ শরীফ নামকরণ করে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাত হয়।

সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিক্রমপুরের জমিদার ভূমিহীন প্রজাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে চন্দ্রদ্বীপের স্মৃতিবিজড়িত ঐ স্থানটিকে কেন্দ্ৰ করে সরকার মাদারণ অঞ্চল নামে আখ্যায়িত করে ফসলি জমি ও আবাসন গড়ে তোলেন। যা পরবর্তীতে নগরায়নে রুপ নিতে থাকে এবং নাম হয় মাদারণ গ্রাম- ইউনিয়ন। এ ‘মাদারণ’ থেকেই মাদারীপুর নামের উৎপত্তি হয় ৷

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

হাজী শরীয়তুল্লাহ, পীর মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া, কংগ্রেস সভাপতি অম্বিকাচরণ মজুমদার, কবি ও সাহিত্যিক আজিজুর রহমান আজিজ, চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, সাবেক নৌপ্রধান মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন আহমেদ, ১৯তম প্রধান বিচারপতি এ. বি. এম. খায়রুল হক, নকুল কুমার বিশ্বাস, গলফার সিদ্দিকুর রহমান, ভারোত্তলক মারিয়া আক্তার, ফনী ভূষণ মজুমদার, ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী।

জানেন কি : মাদারীপুর

  • আয়তনে : দেশের ৫৫তম
  • ঢাকা বিভাগের : ১০ম
  • জনসংখ্যায় : দেশের ৫১তম
  • ঢাকা বিভাগের : ১২তম
  • সাক্ষরতায় : দেশের ২৪তম

মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুর

সেক্টর > ২ ও ৮নং

হানাদার মুক্ত দিবস
  • ২৫ নভেম্বর : শিবচর
  • ৮ ডিসেম্বর : কালকিনি, রাজৈর ও ডাসার
  • ১০ ডিসেম্বর : মাদারীপুর সদর

উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান

  • সদর > আউলিয়াপুর নীলকুঠি • আলগী কাজী বাড়ি মসজিদ • পর্বতের বাগান • ঝাউদি গিরি • শকুনী দিঘি।
  • কালকিনি > সেনাপতির দিঘি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি।
  • শিবচর > পদ্মা বহুমুখী সেতু, হাজী শরীয়তুল্লাহর মাজার • ভাস্কর্য ‘প্রবাহমান ৭১’।
  • রাজৈর > হযরত শাহ মাদারের দরগাহ • অন্নপূর্ণা মন্দির।

Related Post

Leave a Comment