৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক টাঙ্গাইল শাড়িকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের জন্য আবেদন করে। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (DPDT) তা GI জার্নালে প্রকাশ করে। নিয়ম অনুযায়ী জার্নালে প্রকাশের দু’মাসের মধ্যে কেউ আপত্তি না করায় ৯ এপ্রিল ২০২৪ টাঙ্গাইল শাড়িকে ৩১তম GI পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে সনদ ইস্যু করা হয়। ২৫ এপ্রিল ২০২৪ একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টাঙ্গাইল শাড়িসহ আরও ১৩টি GI সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

টাঙ্গাইল শাড়ির ইতিহাস

সনাতন ধর্মের বসাক সম্প্রদায়কে টাঙ্গাইল শাড়ির মূল কারিগর বলা হয়। মুঘল আমলে যখন বিশ্ব জুড়ে আমাদের মসলিনের জয়জয়কার ঠিক তখন টাঙ্গাইলের বিভিন্ন অঞ্চলের বসাক তাঁতিদের মাধ্যমে টাঙ্গাইল শাড়ির বিকাশ ঘটে। এ তাঁতিগোষ্ঠীর একটি দল সিন্ধু অববাহিকা হয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে প্রবেশ করে। সেখানকার আবহাওয়া ততটা কার্যকরি না থাকার কারণে কিছু অংশ চলে আসে ঢাকার ধামরাইয়ে। তাদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে ভাগ হয়ে একদল চৌহাট্টা চলে আসে।

এরপর ধামরাই ও চৌহাট্টা থেকে কিছু তাঁতি আরও ভালো ও উপযুক্ত স্থান খুঁজতে খুঁজতে টাঙ্গাইলে চলে আসে। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শুরু করে। সে হিসেবে টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পের ইতিহাস শতশত বছরের পুরোনো। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় ও আনুকুল্যে তাঁতশিল্পের বিকাশ ঘটে। মূলত সূক্ষ্ম বুনন পদ্ধতি এবং মিহি হওয়ার কারণে টাঙ্গাইল শাড়ি খ্যাতি লাভ করে।

আরো পড়ুন : বৈশ্বিক প্রাণবৈচিত্র্যের সুরক্ষা ভাবনা

১৯২৩-২৪ সালে কাপড়ে নকশার প্রচলন শুরু হয়। ১৯৩১-৩২ সালে নকশার জন্য জ্যাকার্ড পদ্ধতি উদ্ভাবনের পর শাড়ির পাড় ও জমিনের নকশায় অনেক বেশি বৈচিত্র্য আসে। মূলত পাড়ের নকশা আগে তোলা হয় এবং এর সাথে মিল রেখে জমিনের নকশা তোলা হয়। শুরুতে টাঙ্গাইল শাড়ি ছিল ১০ হাত, পরবর্তীতে ১২/১৩/১৪ হাত শাড়ি তৈরির প্রচলন শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর টাঙ্গাইল শাড়ির প্রধান হাট হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করে টাঙ্গাইল সদরের বাজিতপুর।

বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং এর ভ্রমণকাহিনীতে টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পের কথা উল্লেখ রয়েছে। টাঙ্গাইল জেলার তাঁতবহুল গ্রাম গুলো হলো— বাজিতপুর, সুরুজ, বার্থা, বামনকুশিয়া, পাথরাইল, ঘারিন্দা, গোসাই, তন্দ্রি, নলুয়া, তারটিয়া, জোয়ার, এনায়েতপুর, দেওজান, বেলতা, গড়াসিন, সন্তোষ, নলসুন্দা, কাগমারি, বল্লা, রামপুর, বাংরা, সহদেবপুর, ভুক্তা, আকুয়া, ছাতিহাটি, আইসরা, রতনগঞ্জ, বিষ্ণুপুর ইত্যাদি।

[GIপণ্যের আপডেট : ২৩ মে ২০২৪ পর্যন্ত]

সনদপ্রাপ্ত ৩১টি GI পণ্য

নং নাম নিবন্ধিত
জামদানি শাড়ি ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
বাংলাদেশ ইলিশ ১৩ নভেম্বর ২০১৬
চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
বিজয়পুরের সাদা মাটি ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
দিনাজপুর কাটারীভোগ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
বাংলাদেশ কালিজিরা ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
রংপুরের শতরঞ্জি
১১ জুলাই ২০১৯
রাজশাহী সিল্ক
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭
ঢাকাই মসলিন
২ জানুয়ারি ২০১৮
১০ রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলী আম
 ৯ মার্চ ২০১৭
১১ বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি
৪ জুলাই ২০১৯
১২ বাংলাদেশের শীতলপাটি
১৬ মার্চ ২০২১
১৩ বগুড়ার দই  ১ জানুয়ারি ২০১৮
১৪ শেরপুরের তুলশীমালা ধান ১১ এপ্রিল ২০১৮
১৫ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
১৬ চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
১৭ নাটোরের কাঁচাগোল্লা ৩০ মার্চ ২০২৩
১৮ বাংলাদেশ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
২৫ অক্টোবর ২০১৭
১৯ টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম
৩০ মার্চ ২০২৩
২০ কুমিল্লার রসমালাই
১৬ এপ্রিল ২০২৩
২১ কুষ্টিয়ার তিলের খাজা
১৭ এপ্রিল ২০২৩
২২ রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
২৩ মৌলভীবাজরের আগর ১২ এপ্রিল ২০১৭
২৪ মৌলভীবাজরের আগর আতর ১১ জুলাই ২০১৯
২৫ মুক্তাগাছার মণ্ডা ২ মে ২০২৩
২৬ যশোরের খেজুরের গুড় ২৩ মে ২০২৩
২৭ নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা ২৯ আগস্ট ২০২৩
২৮ রাজশাহীর মিষ্টি পান
৩১ আগস্ট ২০২৩
২৯ গোপালগঞ্জের রসগোল্লা
২২ আগষ্ট ২০২৩
৩০ জামালপুরের নকশিকাঁথা
১৭ জুলাই ২০১৯
৩১ টাঙ্গাইল শাড়ি
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

Related Post

Leave a Comment