কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি

তার আগে চলুন সােশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম এর সাথে পরিচিত হয়ে নেই। উইকিপিডিয়াতে সােশ্যাল মিডিয়া এর একটি সংজ্ঞা দেওয়া আছে। Andreas Kaplan এবং Michael Heinlein নামের দুইজন মার্কেটিং গুরু এর মতে, ‘ইন্টারনেট ভিত্তিক কিছু এপ্লিকেশন যা ২য় প্রজন্মের ওয়েবের ভাবাদর্শ ও প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি এবং একই সাথে ব্যবহারকারী দ্বারা সৃষ্ট কন্টেন্ট তৈরিতে এবং বিনিময়ে অনুমতি দেয়।”

সংজ্ঞাটা একটু কঠিন হয়ে গেল তাই না? আসলে আমি যখন এটা বাংলায় অনুবাদ করেছিলাম তখন আমারও মনে হয়েছে এই সব কি জিনিস!!! সােজা কথায় সােশ্যাল মিডিয়া হল এমন কিছু সফটওয়্যার বা সাইট যা দুইজন কিংবা দুইয়ের অধিক মানুষের মধ্যে যােগাযােগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। সাধারণত অনলাইনে যেসব সাইটে প্রশ্ন-উত্তর আদান প্রদান করা যায়, ভিডিও দেখার সাইট, ব্লগিং, পডকাস্টিং সাইট গুলাে, ফটো শেয়ারিং, মুভি রিভিউ এর সাইট, সােশ্যাল নেটওয়ার্কস কিংবা অনলাইন ফোরাম গুলােকেই এককথায় সােশ্যাল মিডিয়া বলা হয়। অর্থাৎ যেসব সাইটে মানুষজন ভার্চুয়ালি মিলিত হয় এবং মতামত প্রকাশ করতে পারে সে জায়গাটাই হচ্ছে সােশ্যাল মিডিয়া।

এখন নিশ্চয়ই সবাই মনে মনে ভাবছেন ‘ধুর এটা তাে আগেই জানতাম’ এখন আসা যাক সােশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ব্যাপারে। freebase.com এর মতে, সােশ্যাল মিডিয়াতে কোন বিষয়ে কিংবা বস্তুর প্রতি মনােযােগ আকর্ষণ করার পদ্ধতিই হচ্ছে সােশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। কিভাবে আমরা সােশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের ব্র্যান্ড/প্রােডাক্ট/সার্ভিস কিংবা market offering কিভাবে উপস্থাপন করব এবং কি করলে সেগুলাে সবাইকে আকর্ষিত করবে সেটাই ধাপে ধাপে আমরা শিখব। প্রচলিত মিডিয়া বলতে আমরা যা বুঝি তার সাথে সােশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর সুক্ষ কিন্তু স্পষ্ট একটি পার্থক্য রয়েছে।

যখন আপনি টিভি কিংবা পেপারে অর্থের বিনিময়ে আপনার ব্যাবসার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন ভােক্তাদের কাছে তা তুলে ধরার জন্য সেখানে সােশ্যাল মিডিয়াতে আপনার নিজেকে ভােক্তাদের কাছে পৌঁছানাের জন্য মিডিয়া তৈরি করে নিতে হবে। যেটা হতে পারে ব্লগ লিখে, ফেসবুকে এড দিয়ে কিংবা বিভিন্ন ফোরামে আলােচনার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়ে। ইন্টারনেট জগতে যদি আমরা আমাদের পণ্য কিংবা ব্র্যান্ডকে আরও সামাজিক ভাবে উপস্থাপন করতে পারি তাহলে প্রচলিত মার্কেটিং এর থেকে আরও সহজে এবং কার্যকর ভাবে গ্রাহক/ভােক্তাদের সাথে যােগাযােগ স্থাপন করতে পারব।

প্রচলিত মাকেটিং বা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং

প্রচলিত মার্কেটিং বা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর সাথে সােশ্যাল মিডিয়ার কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যেমনঃ

  • ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং অপেক্ষাকৃত স্থির। বিলবাের্ড কিংবা প্রিন্ট এডে যা থাকে তা পরিবর্তন করা যায় না। অপরদিকে সােশ্যাল মার্কেটিং dynamic অর্থাৎ গতিশীল। প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তন হতে পারে, সেটা নির্ভর করে আপনার সােশ্যাল মিডিয়া পলিসি কিংবা লক্ষ্যর উপর।
  • ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ আপনি সাথে সাথে একশন নিতে পারবেন না, সােশ্যাল মার্কেটিং এ সুযােগ রয়েছে। যেমন আপনি চাইলেই একটি প্রিন্ট/সংবাদপত্র বিজ্ঞাপনের ম্যাসেজ এডিট করে নিতে পারবেন না, সােশ্যাল মিডিয়ায় কিন্তু এই সুযােগটা রয়েছে।
  • ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ ফিডব্যাক পাবার সুযােগ নেই। টিভি তে এড দেখে নিশ্চয়ই গ্রাহকরা আপনাকে ফোন কল কিংবা SMS দিয়ে রিপ্লাই জানাবে না। সােশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ কিন্তু এটা সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট।
  • কোন নির্দিষ্ট গ্রুপ কিংবা বিশেষ টার্গেটকে ফোকাস করে আগানাে ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ প্রায় অসম্ভব, অন্যদিকে সােশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ আপনি যে কাউকে টার্গেট করে আগাতে পারবেন।
  • ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং সর্বত্র বিরাজমান, অন্যদিকে সােশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সেখানেই ভােক্তাদের খুঁজে নেয় যেখানে ভােক্তাদের দরকার। যেমনঃ কোথায় ঘুরতে যাবেন কিংবা এই ইদে কি পােশাক পড়বেন সেটা জানার জন্য গুগল/ ফেসবুকে সার্চ দিলে কিন্তু এর সাথে সম্পর্কিত অনেক সাজেশন কিংবা বিজ্ঞাপন দেখায়।
  • কারা কারা আমার বিজ্ঞাপনটি দেখেছে কিংবা কাদের কাছে আমার বিজ্ঞাপনের ম্যাসেজ যাচ্ছে তা নির্ণয় করা প্রচলিত মার্কেটিং ব্যাবস্থায় প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আপনি চাইলে খােজ রাখতে পারেন আপনার সাইট কিংবা facebook পেইজের track history চেক করলেই।
  • ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং সারা পৃথিবীজুড়েই বিসৃত, কিন্তু সােশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শুধুমাত্র সােশ্যাল মিডিয়া/ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী পর্যন্ত বিস্তৃত।

Related Post

Leave a Comment