স্বাস্থ্য টিপস

ঘাড় ব্যাথার লক্ষণ ও মুক্তি পাওয়ার উপায়

ঘাড় ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে সার্ভিকাল স্পনডাইলােসিস।

সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলােসিস কিঃ

ঘাড় ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারন হল সার্ভিকাল স্পনডাইলােসিস। ব্যাপার টা একটু খুলে বলি। মেরুদন্ডের ক্ষয় (degenerative condition) রােগ হল স্পন্ডাইলােসিস আর মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশের ক্ষয়ে যাওয়া হল সার্ভিকাল স্পনডাইলােসিস। আমাদের মেরুদন্ড হল হাড়, মাংশপেশী, গিঠ ইত্যাদি নিয়ে। কশেরুকা বা ভারটিব্রা গূলাে একটার উপর আরেকটা ইন্টারভারটিব্রাল ডিস্ক এবং অনান্য গিঠ দিয়ে জুড়ে তৈরি হল মেরুদন্ড। দুটো হাড়ের মাঝখানের ডিস্ক, অনান্য গিঠ, লিগামেন্ট সব কিছুই বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্ষয় হতে থাকে।

মেরুদন্ডের হাড় ঘিরে রাখে একটা নালি বা ক্যানাল, (ভারটিব্রাল ক্যানাল) যার ভিতর দিয়ে মস্তিস্ক থেকে নেমে আসে স্পাইনাল কর্ড এবং তা থেকে গাছের শিকড়ের মত নার্ভ গূলাে বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেরুদন্ডের হাড়ে পরিবর্তন হতে থাকে।

ভারটিব্রা বা কশেরুকার মধ্যকার ডিস্কে পানি কমে গিয়ে ভঙ্গুর হয়,উচ্চতা কমে চিপ্টে যায় এবং তা অনেক সময় পিছনে সরে গিয়ে নার্ভের উপর চাপ দিয়ে ব্যাথার সৃষ্টি করে যাকে বলে ডিস্ক প্রােলাপ্স। এই ডিস্ক এর উচ্চতা কমার সাথে সাথে তৈরী হয় ছােটো ছােটো হাড়ের টুকরাে বা অস্টিওফাইট যা। এই টুকরাে গুলােও নার্ভের উপর চাপ দিয়ে ব্যাথার সৃষ্টি করতে পারে।

সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলােসিসের কারনঃ

বয়সঃ বৃদ্ধ বয়সের রােগ এটি। স্পন্ডাইলােসিসের পরিবর্তন শুরু হয় ৪০ বৎসর বয়সের পর থেকে কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে আগে থেকেও। আনুপাতিক হার পুরুষ বা মহিলা রােগীদের মধ্যে প্রায় সমান সমান।

পেশাঃ ঘাড় সামনে ঝুকিয়ে কাজ করতে হয় এমন সব পেশাতে রােগটি বেশী দেখা যায়।যেমন চেয়ার টেবিলে বসে কাজ, কম্পিউটারে কাজ, টাইপ রাইটার ইত্যাদি। ঘাড়ের ঝাকুনি হয় এমন পেশা যেমন নর্তকী, সাইকেলে চলাচল করতে হয় এমন পেশা ইত্যাদি। ঘাড়ে আঘাত এর ইতিহাস থাকে অনেক ক্ষেত্রে।

উপসর্গঃ

প্রধান উপসর্গ হল ঘাড়ে ব্যাথা আর চল্লিশাের্ধ বয়সে ঘাড়ে ব্যাথার প্রধান কারন ও এটি। ঘাড়ের ব্যাথা অনেক সময় কাঁধ থেকে উপরের পিঠে,বুকে , মাথার পিছনে বা বাহু হয়ে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।ঘাড়ের থেকে হাতে নেমে আসা নার্ভের উপর চাপ পড়লে সমস্ত পুরাে হাতেই ব্যাথা হতে পারে। সার্ভিক্যাল স্পন্ডােলাইসিসের সবচে মারাত্মক দিক হল যখন স্পাইনাল কর্ডের উপর চাপ পড়ে।এটা থেকে চার হাত পায়ে দুর্বলতা, হাটতে অসুবিধা,পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া,ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে ।এটি হল সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলােটিক মাইলোপ্যাথিক (Crevical spondylotic myelopathy).

ঘাড় নাড়াতে গেলে ব্যাথা লাগে।একিউট ক্ষেত্রে ডাইনে, বায়ে ঘাড় ঘােরান মুস্কিল হয়।ঘাড়ে জ্যাম মেরে ধরে থাকে। ব্যাথার সাথে হতে পারে হাতে, বাহুতে ঝিন ঝিন, সির সির, অবশ ভাব, সূচ ফোটানাের অনুভুতি সাথে হাত দিয়ে কাজ করতে অসুবিধা।

লক্ষনঃ

ঘাড় উপরের পিঠ এবং বাহুতে চাপ দিলে ব্যাথা অনূভুত হয়। ঘাড়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া ব্যাহত হয়। ঘাড় ব্যাথা কখন দুঃশ্চিন্তার কারনঃ

ঘাড়ে ব্যথার সাথে নীচের লক্ষন থাকলে

  • বিনা কারনে হঠাৎ পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে বা নিয়ন্ত্রন করতে অসুবিধা হলে।
  • হাত বা পায়ে অস্বাভাবিক দুর্বলতা
  • জ্বর থাকলে
  • ওজন কমতে থাকলে।
  • ৬ সপ্তাহের বেশী ব্যাথা থাকলে
  • অনান্য নার্ভের সমস্যা যেমন, কথা বলতে অসুবিধা, মাথা ঘােরা, চোখে দেখতে অসুবিধা।
  • রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হলে।

যে সমস্ত প্রশ্ন রােগীর মনে স্বাভাবিকভাবেই জাগেঃ

  • কি কারনে ব্যাথা হচ্ছে?
  • সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলসিস ছাড়া অন্য কোন কারনে উপসর্গ গুলাে হতে পারে কিনা? কি কি পরীক্ষা করা উচিত।
  • চিকিৎসা কি?
  • অপারেশানের দরকার আছে কিনা? থাকলে কি কেন বা কখন।
  • কিভাবে ঘাড়ের যত্ন নেওয়া যেতে পারে।
  • ঘাড়ের বিশ্রাম বা কাজ করা বন্ধ রাখার দরকার আছে কিনা?
  • চিকিতসা করলে ভাল হবে তাে ? হলে পুরােপুরি কিনা?
  • সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলােসিস থেকে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
  • বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানাের দরকার আছে কিনা?

পরীক্ষাঃ

সার্ভিকাল স্পনডাইলােসিস ডায়াগনােসিসের জন্য ঘাড়ের এক্স-রে প্রধান পরীক্ষা। ৩০ উর্ধ বয়সে শতকরা ৫ থেকে ১৫ ভাগ এবং ৭০ উর্ধ বয়সের ৭০ থেকে ১০০% ভাগ লােকের এক্স-রে তে স্পন্ডােলাইসিসের লক্ষন ধরা পড়ে। এক্স রে’র সাথে রােগীর লক্ষনের মিল কম।এক্স রে তে স্পন্ডাইলােসিসের পরিবর্তন ধরা পড়লেও মাত্র ৫% লােক ঘাড় ব্যাথা তে ভােগেন অর্থাৎ অধিকাংশ লােকেরই ব্যাথা হয় না ।অনেকের দেখা যায় এক্সরে তে ক্ষয় অনেক কিন্তু সেই তুলনায় ব্যথা কম আবার সামান্য ক্ষয়ে প্রচুর ব্যাথা হয়ে থাকে অনেকের।

অনান্য পরীক্ষাঃ

  • রক্তের গ্লুকোজ, প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা।

বিশেষ পরীক্ষাঃ

  • ঘাড়ের এম আর আই(MRI), ইলেক্ট্রোমায়ােগ্রাফি( Electromyography nerve conduction study)।

চিকিৎসাঃ

  • ঔষধ : ব্যাথার ঔষধ(Analgesics), মাংশপেশী শিথিল করার ঔষধ (Muscle relaxants), দুশ্চিন্তা কমানাের ঔষধ(Anxiolytics)।
  • ফিজিওথেরাপী : ঘাড়ে টানা বা সার্ভিক্যাল ট্রাকশান(Cervical Traction), শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি(Short Wave Diathermy), ম্যাসাজ(Massage), ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক নার্ভ স্টিমুলেশান(Transcutaneous electric nerve stimulation, TENS)। সার্ভিক্যাল কলার(Cervical Collar)।
  • ঘাড়ের ব্যায়াম

উপদেশ :

  • শক্ত সমান বিছানায় এক বালিশে চিত হয়ে ঘুমাবেন।
  • ঘাড় যাতে বালিশ দিয়ে সাপাের্ট দেয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন।
  • প্রয়ােজন মনে করলে বালিশ নিচে টেনে নামিয়ে নেবেন বা কম উচ্চতার বালিশ ব্যাবহার করবেন।
  • ঘাড় সামনে ঝুকিয়ে বেশিক্ষন কাজ করবেন না)
  • কাজের জায়গায় চেয়ার টেবিল এমন ভাবে রাখবেন যাতে ঘাড় সামনে না ঝুকিয়ে কাজ করতে পারেন।
  • ঘাড়ে গরম সেক দিতে পারেন
  • মাঝে মাঝে ঘাড়ের ব্যায়াম করে নেবেন।

অপারেশান : শতকরা প্রায় একশতভাগ রােগী অপারেশান ছাড়া ভাল থাকেন। অপারেশানের দরকার পড়ে কচিৎ কদাচিত।

Related Post

Leave a Comment