পৌরনীতি ও নাগরিকতা

নাগরিকের কর্তব্য :  রাষ্ট্রের নিকট নাগরিকের যেমন অধিকার রয়েছে, অনুরূপ রাষ্ট্রের প্রতিও নাগরিকের কর্তব্য রয়েছে। কর্তব্য পালন ব্যতীত শুধু অধিকার ভােগ করা প্রত্যাশিত নয়। বিভিন্ন অধিকার প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্র নাগরিকদের নিজের প্রতি অনুগত ও দায়িত্বশীল করে তােলে। রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকারের মাধ্যমে নাগরিক জীবন বিকশিত হয়। এর বিনিময়ে রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা, সততার সাথে ভােটাধিকার প্রয়ােগ করা, নিয়মিত কর প্রদান করা, আইন মান্য করা এবং রাষ্ট্রপ্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্ব পালন নাগরিকদের কর্তব্য।

কর্তব্যের শ্রেণিবিভাগ

অধিকার ভােগ করতে গিয়ে নাগরিকরা যেসব দায়িত্ব পালন করে, তাকে কর্তব্য বলে। নাগরিকের কর্তব্যকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক। নৈতিক কর্তব্য ও খ। আইনগত কর্তব্য।

ক. নৈতিক কর্তব্য : নৈতিক কর্তব্য মানুষের বিবেক এবং সামাজিক নৈতিকতা বা ন্যায়বােধ থেকে আসে। যেমন- নিজে শিক্ষিত হওয়া এবং সন্তানদের শিক্ষিত করা, সততার সাথে ভােট দান, রাষ্ট্রের সেবা করা এবং বিশ্বমানবতার সাহায্যে এগিয়ে আসা। এসব কর্তব্য নাগরিকদের বিবেক এবং সামাজিক নৈতিকতা বা ন্যায়বােধ থেকে সৃষ্টি হওয়ায় এগুলােকে নৈতিক কর্তব্য বলে।

আরো পড়ুন :

 

খ. আইনগত কর্তব্য : রাষ্ট্রের আইন দ্বারা আরােপিত কর্তব্যকে আইনগত কর্তব্য বলে । রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য, আইন মান্য ও কর প্রদান করা নাগরিকের আইনগত কর্তব্য। এসব কর্তব্য রাষ্ট্রের আইন দ্বারা স্বীকৃত। নাগরিকদের আইনগত কর্তব্য অবশ্যই পালন করতে হয়। এ কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে শাস্তি পেতে হয়। আইনগত কর্তব্য রাষ্ট্র ও নাগরিকের কল্যাণের জন্য অপরিহার্য। নিমে কয়েকটি উল্লেখযােগ্য কর্তব্য সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে।

১. রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য : দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, সংবিধান, রাষ্ট্রীয় মূলনীতির প্রতি শ্রদ্ধাবােধ প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ পায়। অন্যভাবে বলা যায়, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, সংহতি ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য প্রয়ােজনবােধে নিজের জীবন উৎসর্গ করার অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন।

২. আইন মান্য করা : আমাদের জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হচ্ছে আইন। আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযােজ্য। আইনের অবর্তমানে সমাজ ও জীবন হয়ে উঠে অরাজকতাপূর্ণ । আইনবিহীন সমাজ, রাষ্ট্র ও নাগরিক জীবন কিছুই কল্পনা করা যায় না। নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা 2 নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে। সুতরাং নাগরিকদের আইন মান্য করা কর্তব্য।

৩. কর প্রদান করা : রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সরকারের প্রচুর অর্থের প্রয়ােজন হয়। এ জন্য সরকার নাগরিকদের উপর প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ কর আরােপ করে। কাজেই নিয়মিত ও যথাযথভাবে কর প্রদান করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।

অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক

অধিকার ও কর্তব্য শব্দ দুটি ভিন্ন হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ । নিমে অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক বর্ণিত হলাে

প্রথমত, অধিকার ভােগ করলে কর্তব্য পালন করতে হয়। যেমন- ভােটদান নাগরিকের অধিকার, ভােটাধিকার প্রয়ােগ নাগরিকের কর্তব্য। একটি ভােগ করলে অন্যটি পালন করতে হয়। সুতরাং বলা যায়, অধিকার ভােগের মধ্যে কর্তব্য নিহিত থাকে।

দ্বিতীয়ত, একজনের অধিকার বলতে অন্যজনের কর্তব্য নির্দেশ করে। যেমন- আমার পথ চলার অধিকার আছে- এর অর্থ আমি পথ চলব এবং অন্যজনকেও পথ চলতে দেব। আবার, আমি যখন পথ চলব অন্যজনও আমার পথ চলার সুযােগ করে দিবে। কাজেই অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।

আরো পড়ুন : তথ্য অধিকার আইন | তথ্য প্রাপ্তির প্রক্রিয়া | তথ্য প্রদান পদ্ধতি

তৃতীয়ত, আমরা রাষ্ট্রপ্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভােগ করি। তার বিনিময়ে আমাদের কর্তব্য পালন করতে হয়। যেমন- রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা, আইন মান্য করা, কর প্রদান করা ইত্যাদি কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই আমরা রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকার ভােগ করি ।

চতুর্থত, সমাজের সদস্য হিসেবে আমরা শিক্ষালাভের অধিকার ভােগ করি এবং সমাজের কল্যাণে আমাদের অর্জিত শিক্ষাকে প্রয়ােগ করে সমাজের উন্নয়ন করি। শিক্ষালাভ আমাদের অধিকার, অর্জিত শিক্ষা প্রয়ােগ করা কর্তব্য। সুতরাং বলা যায়, অধিকার ও কর্তব্য সমাজবােধ থেকে উৎপত্তি লাভ করে।

মূলত অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ । একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি ভােগ করা সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, অধিকার কর্তব্যের মধ্যেই নিহিত।

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। কোন অধিকারটি নাগরিকের সামাজিক অধিকারের অ
ক) সম্পত্তি ভােগের
খ) ভােটাধিকারের
গ) মজুরি লাভের
ঘ) নির্বাচিত হওয়ার

২। সমাজভেদে কোন অধিকারটির ভিন্নতা দেখা যায়?
ক) সামাজিক
খ) রাজনৈতিক
গ) অর্থনৈতিক
ঘ) নৈতিক

৩। অধিকার ভােগ করতে হলে প্রয়ােজন
i. সঠিকভাবে ভােটাধিকার প্রয়ােগ ।
ii. সরকারি কাজে সহযােগিতা করা
iii. অন্যকে পথ চলতে সাহায্য করা

নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i ও ii
খ) ii ও iii
গ) i ও iii
ঘ) i, ii ও iii

অনুচ্ছেদটি পড়ে ৪ ও ৫ নং প্রশ্নের উত্তর দাও : জনাব হাফিজের মানিকগঞ্জে একটি দিয়াশলাই কারখানা আছে। তিনি তাঁর কারখানার আয়ের উপর প্রতি বছর সরকার নির্ধারিত কর পরিশােধ করেন।

৪। জনাব হাফিজের দায়িত্বটিকে কী বলা যায়?
ক) নৈতিক অধিকার
খ) আইনগত অধিকার
গ) নৈতিক কর্তব্য
ঘ) আইনগত কর্তব্য

৫। জনাব হাফিজের উক্ত দায়িত্বটির সাথে নিচের কোনটি অধিক সম্পর্কযুক্ত?
ক) রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি
খ) রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা
গ) নাগরিকের সামাজিক অধিকার রক্ষা
ঘ) নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা

সৃজনশীল প্রশ্ন

১। ক’ ইউনিয়নে প্রায় ৮০% লােক শিক্ষিত। উক্ত ইউনিয়নের নির্বাচনে নাগরিকগণ ‘X’ ও ‘Y’ ব্যক্তির মধ্যে ‘X’ ব্যক্তিকে সৎ ও যােগ্য বলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ‘X’ ব্যক্তির এলাকার একটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক নিয়ােগের ক্ষেত্রে তার ভাইয়ের ছেলে প্রার্থী হলেও যােগ্য প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি নিয়ােগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন।
ক. প্রায় কত বছর পূর্বে প্রাচীন গ্রিসে নাগরিক ধারণার উদ্ভব হয়?
খ. দ্বৈত নাগরিকতা কী ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘ক’ ইউনিয়নের নাগরিকদের মধ্যে কোন ধরনের কর্তব্যপরায়ণতা লক্ষ করা যায়-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘x’ ব্যক্তি সুনাগরিক-সত্যতা যাচাই কর।

২। পিযুশ চক্রবর্তী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কানাডা চলে যান। তিনি কানাডার ভাষা শিখে সরকারি চাকরিতে যােগদান করে সততার পরিচয় দেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে কানাডার সরকার তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করে। বাংলাদেশ থেকে কানাডায় বিমানে যাওয়ার পথে কানাডার আকাশ সীমার মধ্যে তাঁর স্ত্রীর রাহুল নামে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
ক. বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত তথ্য অধিকার আইনটি কত তারিখে রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে?
খ. নাগরিকের অধিকার বলতে কী বােঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. রাহুল কোন দেশের নাগরিক হবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পিযুশ চক্রবর্তী কী শুধু কানাডারই নাগরিক? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও।

Related Post