আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
বাংলাদেশ বিষয়াবলী

চিরন্তন স্মৃতিতে আমাদের ভাষাশহিদ

একুশে ফেব্রুয়ারি জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল ও অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর দিন । ১৯৫২ সালের এই দিনটি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। রক্তের বিনিময়ে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা ও মায়ের ভাষা, যা বাংলা ভাষাকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি ।

ইতিহাসে শহিদদের আত্মদান

মূলত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৭ সালেই ভাষা আন্দোলনের শুরু। ১৯৫২ সালে এই আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয় পরিণতির পথে, যা বাংলা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করে। সে বছরের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দীন পল্টন ময়দানের জনসভায় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কেবল উর্দু’ হবে বলে ঘোষণা দেন। ফলে ৩১ জানুয়ারি বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি সভায় গঠিত হয় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’।

আরো পড়ুন : বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ যত সমুদ্রপথ

পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি সমগ্র দেশে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভের আয়োজন করে। সরকার সে-দিনটিতে ১৪৪ ধারা জারি করলে ছাত্র-জনতা তা ভঙ্গ করে মিছিল ও সমাবেশ করেন। সে দিন ও পরের দিন পুলিশের গুলিতে শহিদ হন রফিক, জব্বার, বরকত, সালাম ও শফিউর। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন অব্যাহত ছিল । সে বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়। সংবিধানের ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলাকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয় ।

ভাষাশহিদ যাঁরা

দেশে ভাষাশহিদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন ৫ জন। ২০০০ সালে তাঁদের সবাইকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয় । স্বীকৃতিপ্রাপ্তরা হলেন—

আবুল বরকত

১৯২৭ সালের ১৬ জুন মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে তাঁর জন্ম । ডাক নাম আবাই। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ঢাকায় আসেন। ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করে এমএ শেষ পর্বে ভর্তি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন বরকত। তাঁকে সমাহিত করা হয় আজিমপুর গোরস্থানে ।

রফিকউদ্দিন আহমদ

১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিংগাইরের পারিল বলধারা গ্রামে তাঁর জন্ম। ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ তিনি। মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় তিনি ঢাকায় এসে পিতার মুদ্রণ শিল্প ব্যবসায় জড়িত হন। তিনিও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর সমাধিস্থল আজিমপুর গোরস্থান ।

শফিউর রহমান

১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগর গ্রামে জন্ম শফিউরের। তিনি কলকাতা গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আইকম পাশ করেন। দেশবিভাগের পর ঢাকায় এসে হাইকোর্টের হিসাব রক্ষণ শাখায় কেরানি পদে যোগ দেন। ২২ ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডে আন্দোলনরতদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে শফিউর আহত হন। সে-দিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। এরপর সমাহিত হন আজিমপুর গোরস্থানে ।

আবদুস সালাম

১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার মাতুভূঁইয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর গ্রামে (বর্তমানে সালামনগর) সালামের জন্ম । আর্থিক অনটনে দশম শ্রেণির পড়াশুনা এগোতে পারেননি ৷ দেশভাগের পর ঢাকায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টর অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগে পিয়ন পদে যোগ দেন। থাকতেন নীলক্ষেত ব্যারাকের ৩৬/বি নং কোয়ার্টারে। ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ৭ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সালাম। এই শহিদকে সমাহিত করা হয় আজিমপুর গোরস্থানে।

আবদুল জব্বার

১৯১৯ সালের ১০ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে জন্ম নেন জব্বার। পনেরো বছর বয়সে ভালো রোজগারের আশায় বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে যান। সেখানকার জাহাজঘাটে এক ইংরেজ সাহেবের সান্নিধ্যে এলে তাঁর সহায়তায় চাকরি নিয়ে বার্মায় (মিয়ানমারে) চলে যান। সেখান থেকে দেশে ফেরেন বারো বছর পর। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যান্সার-আক্রান্ত শাশুড়িকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হয়ে এই হাসপাতালেই মারা যান জব্বার। আজিমপুর গোরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা
হয়।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে ভাষাশহিদ হিসেবে অহিউল্লাহ ও আবদুল আউয়ালের নামের উল্লেখ রয়েছে। তবে একুশের শহিদ হিসেবে তাঁদের স্বীকৃতির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button