স্বাস্থ্য টিপস

রক্ত হলাে এক প্রকার তরল পদার্থ। এর রং লাল। হিমােগ্লোবিন নামক লাল রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতিতে রক্তের রং লাল দেখায়। শরীরের কোনাে স্থানে আঘাতের ফলে বা কেটে গেলে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, এবং সেই ক্ষত হতে যে রক্ত বের হয়, তাকে রক্তক্ষরণ বা রক্তপাত বলে। বিভিন্নভাবে রক্তক্ষরণ হতে পারে যেমন

১। মুখ দিয়ে রক্ত পড়া :

মুখের ভিতরের যেকোনাে অংশ থেকে রক্তপাত হলে বরফ চুষতে হবে। তাহলে রক্তপাত বন্ধ হবে। এরপর রােগীকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে।

২। নাক দিয়ে রক্ত পড়া :

আঘাতজনিত বা অন্য কোনাে কারণে কারাে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করলে তৎক্ষণাৎ তাকে চিত করে শােয়াতে হবে অথবা বসিয়ে মাথা পেছনের দিকে হেলিয়ে রাখতে হবে। কাপড়চোপড় ঢিলা করে দিতে হবে। নাকের সামনে ও ঘাড়ের পিছনে ঠাণ্ডা কমপ্রেস দিতে হবে। তখন মুখ দিয়ে শ্বাসকার্য চালাতে হবে। রক্তপাত বন্ধ হবার পরও কিছুক্ষণ নাকের ছিদ্রপথে তুলাে দিয়ে রাখতে হবে।

৩। শরীরের কোনাে অংশ কেটে গেলে:

কাটা স্থানটি কিছুক্ষণ পরিষ্কার হাতে চেপে ধরতে হবে। রক্ত বন্ধ হলে ব্যাণ্ডেজ দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে। সাধারণত তিনটি উৎস থেকে রক্তপাত হয়। যথা

  • কৈশিক নালি (Capillary)-একটানা স্রোতের ন্যায় রক্ত বের হয়।
  • শিরা (Vein)-গলগল করে রক্ত বের হয় ।
  • ধমনী (Artery)- ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়।

দুর্ঘটনায় বেশির ভাগ রক্তপাত হয় কৈশিক নালি থেকে।

কোনাে বস্তু ঢুকে রক্তপাত:

শরীরে কোনাে বস্তু ঢুকে রক্তপাত হলে যা করবেন-

  • ক্ষতস্থানের দুই পাশ চেপে ধরুন (তবে ক্ষতস্থানের ওপর চাপ দেবেন না)।
  • ক্ষতস্থান ও বস্তুটির ওপর আলতাে করে গজ বা কাপড় মুড়িয়ে দিন।
  • বস্তুটির চারদিকে ক্ষতস্থানের ওপর প্যাড ব্যবহার করে ব্যান্ডেজ বাঁধুন।
  • ক্ষতস্থান থেকে বস্তুটি তুলে ফেলার চেষ্টা করবেন না।
  • হাত বা পায়ের ক্ষেৎরে ক্ষত অঙ্গ উঁচু করে ধরুন।
  • যদি মনে হয়, আঘাতপ্রাপ্ত অঙ্গের হাড় ভেঙে গেছে; তাহলে অঙ্গটি নড়াচড়া বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করুন।
  • হাত বা পায়ের ক্ষেৎরে ঘন ঘন আঙুল ও পায়ের পাতা উষ্ণ আছে কিনা পরীক্ষা করুন।

রক্তপাতের প্রাথমিক চিকিৎসা :

১। রােগীকে বসানাে ও শােয়ানাে যায় এমন স্থানে স্থানান্তর করতে হবে। এতে রক্তপাত আপনা-আপনি কমে যাবে।
২। যে স্থান হতে রক্তপাত হচ্ছে, সে স্থান হৃৎপিণ্ডের সমতার উপর তুলে ধরলে রক্তপাত অনেকটা কমে যাবে।
৩। সামান্য কেটে গেলে ঐ স্থানে রক্ত জমাটবেঁধে আপনা-আপনি রক্তপাত বন্ধ হয়।
৪। কাটা স্থানে বৃদ্ধাঙ্গুলির চাপ প্রয়ােগ করলে অনেক সময় রক্তপাত বন্ধ হয়।
৫। আহত অঙ্গের নড়াচড়া বন্ধ করতে হবে।
৬। রক্তপাতের স্থানে বরফ ব্যবহার করতে হবে।
৭। রক্তপাত বন্ধের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ চাপ দিতে হবে।
৮। ক্ষতস্থান পরিষ্কার কাপড় বা ব্যাণ্ডেজ দিয়ে বাঁধতে হবে।
৯। তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে বাহাসপাতালে নিতে হবে।
১০। বেশি রক্তপাত হলে টুনিকেট ব্যবহার করতে হবে। টুনিকেটঅর্থ হলাে প্রাথমিক বাঁধনকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শক্ত করে তােলা। ক্ষতস্থান ঢিলা করে বেঁধে তার ভিতরে একটি কাঠি বা পেন্সিল ঢুকিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে ঘুরালে বাঁধনটি ক্রমশ শক্ত হয়ে রক্তপাত বন্ধ হয়।

Related Post

Leave a Comment