ভিটামিন ডি

চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভিটামিন ডি এর গুরুত্ব অপরিসীম। ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, অস্টিওপোরোসিস, বেশ কিছু অটোইমিউন রোগ, অন্ত্রের রোগ, সিলিয়াক রোগ, কিডনির রোগ, যকৃতের রোগ এবং প্যানক্রিয়াটাইটিসের মতো বিভিন্ন ক্রনিক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি ব্রেস্টফিড করানো শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও যারা অল্প সময় সূর্যের সংস্পর্শে থাকেন সেই ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা ভিটামিন ডি এর অভাব বুঝতে পারেন না। কারণ এর কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড়ের ঘনত্ব কমে যেমন- অস্টিওপোরোসিস এবং হাড়ে ফ্র্যাকচার, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ক্যানসার এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর মতো রোগ হতে পারে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসাবে ভিটামিন ডি এর লেভেল বছরে অন্তত একবার টেস্ট করানো উচিত।

ভিটামিন ডি এর অভাব এড়াতে খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন- তৈলাক্ত মাছ এবং ডিমের কুসুম। প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে যেতে হবে।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

এটি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসকেও দ্রবীভূত করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে ভিটামিন ডি প্রয়োজন বলে শেষ করা যাবে না।

বয়স বাড়তে থাকলে ত্বকের ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করার ক্ষমতা কমতে থাকে। আর বয়স্কদেরই কিন্তু হাড়ক্ষয়ের সমস্যা বেশি। তাই বয়স হয়েছে বলেই সারা দিন বাড়িতে বসে থাকা ঠিক নয়। নিয়মিত বের হতে হবে এবং গায়ে রোদ লাগাতে হবে। দূষিত বায়ু, ধোঁয়া ইত্যাদি অতিবেগুনি রশ্মিকে শুষে নেয় বা প্রতিফলিত করে। তাই দূষিত শহরে থাকলে মাঝেমধ্যে একটু দূরের গ্রামে বা আউটিংয়ে যাওয়া উচিত।

শরীরের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে কিছু লক্ষণ

  • হঠাৎ করে চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিলে খেয়াল করতে হবে শরীরে ভিটামিন ডি কমে গিয়েছে কি না।
  • হাড়, পেশিতে দুর্বলতা এবং ব্যথা, অস্থিসন্ধিগুলির বিকৃতি এবং দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ হতে পারে।
  • শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম হলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ দেখা দিতে পারে, যা ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে, ভালোভাবে বিশ্রাম নিয়েও যদি অলস এবং ক্লান্ত বোধ হয়, তবে এটি ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণেই হতে পারে।
  • স্থূলকায় ব্যক্তিদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কারণ মেদবহুল কোষগুলো শরীরে ভিটামিন ডি নিঃসরণে বাধা দেয়। আবার হঠাৎ ওজন কমতে থাকা শরীরের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়ার পরও ওজন কমা ভিটামিন ডি-এর অভাব হতে পারে।
  • ভিটামিন ডি-এর অভাবে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। এতে ঘা শুকাতেও অনেকটাই সময় লেগে যায়।
  • অকারণে ক্লান্তিভাব, ঝিমুনি এবং শুয়ে বসে থাকার ইচ্ছে হতে পারে শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাবে।

কার শরীরে কতটুকু ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজন তা নির্ভর করে বয়স অনুযায়ী। পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি ও ১০০০ মাইক্রো গ্রাম ক্যালশিয়ামের চাহিদা থাকে। অন্যদিকে ৭০ এর বেশি বয়স যাদের, তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০ মাইক্রোগ্রাম। বয়স অনুপাতে ভিটামিন ডি-এর চাহিদা ২৫-১০০ মিলিগ্রাম।

Related Post

Leave a Comment