মহাত্মা গান্ধী অহিংস ও অসহযােগ আন্দোলনের জনক। এ একটি উল্লেখযােগ্য নিরস্ত্র বা সত্যাগ্রহ আন্দোলন। অসহযােগের মাধ্যমে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে সরকারকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করার জন্য সর্বপ্রকার অসহযােগিতা করাই এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল। ১৯১৯ সালে ‘মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন-সংস্কার আইন এ দেশবাসী গ্রহণ করেনি।
ভারতের সকল রাজনৈতিক দল এ শাসন-সংস্কার আইনকে অসম্পূর্ণ, অসন্তোষজনক এবং নৈরাজ্যজনক বলে ঘােষণা করেন। ইতিমধ্যে রাওলাট আইন নামে এক দমনমূলক আইন বিধিবদ্ধ হয়। এ আইনের ফলে সরকার যেকোনাে ব্যক্তিকে বিনা বিচারে আটক রাখতে পারতেন। এ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিভিন্ন স্থানে হরতাল, শশাভাযাত্রা, প্রতিবাদ সভা পালিত হয়।
এসব পরিস্থিতিতে গান্ধীজী অসহযােগ আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯২০ সালে কংগ্রেসের এক বিশেষ অধিবেশনে অসহযােগ প্রস্তাব পাস ও অনুমােদিত হয়। প্রথমদিকে গান্ধী এ আন্দোলনে ‘সত্যাগ্রহ’ নীতি গ্রহণ করেন। হিন্দু-মুসলিম একতাবদ্ধ হয়ে অসহযােগ আন্দোলনকে তীব্র করে তােলে।
এ আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল সরকারি খেতাব ও অবৈতনিক পদ বর্জন করা, সরকারে বেসরকারি পদগুলাে থেকে ইস্তফা দেওয়া, পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ এবং খাজনা বন্ধ করা। ছাত্রছাত্রীরা স্কুল, কলেজ বর্জন করেছিল। দেশবাসী বিলেতি দ্রব্যও বর্জন করেছিল। মতিলাল নেহেরু, চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখ আইনজীবীগণ আইন-ব্যবসা ত্যাগ করেন।
১৯২১ সালে গান্ধীর নেতৃত্বে খিলাফত ও অসহযােগ আন্দোলন যৌথ আন্দোলনের রূপ নেয়। এ মিলিত আন্দোলন সারা ভারতে এক গণআন্দোলনে পরিণত হয়। উভয় আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল খেলাফত রক্ষা ও ভারতের স্বাধীনতা অর্জন। শেষ পর্যন্ত এ আন্দোলন সশস্ত্র রূপ নেয়।
লর্ড রিডিং কঠোর হতে এ আন্দোলন দমন করতে বদ্ধপরিকর হয়ে গুলি ও লাঠি ব্যবহার করেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা চৌরিচৌরা থানায় আগুন লাগিয়ে ২১ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মেরে ফেলে। এ ঘটনায় গান্ধী মর্মাহত হন এবং অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এ আন্দোলন দেশপ্রেমের জন্ম দেয়। জনসাধারণের মধ্যে অভাবনীয় জাগরণ সৃষ্টি করে। এ আন্দোলন সকল ধর্মের ভারতবাসীকে একই জাতীয়তাবােধের আদর্শে সংঘবদ্ধ করে।