এমন অনেক দুঃখ আছে যাকে ভােলার মতাে দুঃখ আর নেই
নিঃসন্দেহে দুঃখ বেদনার। আমরা মানুষমাত্রই তাই। চাই শুধু আনন্দ, সুখ, ভােগে নিজেকে পরিপূর্ণ রাখতে। আর সুখের স্মৃতি তিল তিল করে স্মৃতির মন্দিরে জমা রেখে দুঃখের কণ্টকিত দিনগুলােকে ভুলে যেতে চাই। দুঃখের মতাে দুঃখের স্মৃতিচারণও আপাতচক্ষে বড় কষ্টের, বড় যন্ত্রণার কথা ভেবে পাশ কাটিয়ে যেতে চাই। কিন্তু সুখ-দুঃখের সংমিশ্রণেই মানুষের জীবন পূর্ণ। হাসি-অশ্রু এত বর্ণময় বলেই কোনাে মানুষের জীবনই ছকে বাঁধা নয়। দুঃখের, বেদনার স্মৃতি জীবনপট থেকে মুছে মানুষ যদি কেবল সুখস্মৃতিটুকু বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়াসী হয়, তবে তার জীবনে পূর্ণচ্ছেদ নেমে আসে। ছায়া যেমন মানুষকে কখনাে। পরিত্যাগ করে না, সেই রকম দুঃখের স্মৃতিও সুখের সময় মানুষকে কখনাে পরিত্যাগ করে না। সুখদুঃখের স্বরূপ নির্ণয় করা মানুষের পক্ষে যতটা কঠিন, ততােধিক কঠিন দুঃখকে, দুঃখের স্মৃতিকে চিরতরে বিসর্জন দেয়া। দুঃখের মাঝেই যেন লুকিয়ে রয়েছে কিছুটা সুখের ইঙ্গিত, কিছুটা সুখের ঐশ্বর্য। আগুনের পরশমণির ঘেঁয়ায়, অন্তরের তীব্র জ্বালায় এ জীবন শুধু যে পুণ্যময় হয়ে ওঠে তাই নয়- তার স্মৃতি অবিরত হয়ে ওঠে কর্মপ্রেরণা, উদ্দীপনা ও অগ্রগতির পাথেয়। যত দুঃখ জীবনে আমরা পাই আসলে তাই যে সুখ এবং সুখ বলে যাকে আঁকড়ে ধরতে চাই তা যে মনের অসুখ। কারণ, সমস্যা ও কষ্টের গভীরে পড়েই আমরা ঈশ্বর কতইনা বেশি ব্রতী হই। আর যদি এমনটি না হতাে তাহলে আমরা ঈশ্বরকেই ভুলে যেতাম। তাই বিচক্ষণ মানুষ দুঃখস্মৃতিকে সুখস্মৃতির সম-মর্যাদায় স্বাগত জানান এভাবে, মাঝে মাঝে প্রাণে তােমার পরশখানি দিও। দীর্ঘ সংগ্রামের পর মানুষ যখন সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন তখন তিনি তাই যন্ত্রণাময় অতীতের দিনগুলােকে ভুলতে চান না, চেষ্টাও করেন না। সে দিনগুলাের মধ্যেই যে লুকিয়ে রয়েছে তার সাফল্য।
এই বিভাগের আরো ভাবসম্প্রসারণ :
- কীর্তিমানের মৃত্যু নাই
- পথ পথিকের সৃষ্টি করে না পথিকই পথ সৃষ্টি করে
- অর্থসম্পত্তির বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনাে বিনষ্ট হয় না
- অসি অপেক্ষা মসী অধিকতর শক্তিমান
- অনুকরণের দ্বারা পরের ভাব আপন হয় না অর্জন না করলে কোন বস্তুই নিজের হয় না
- অর্থই অনর্থের মূল
- অধর্মের ফল হইতে নিষ্কৃতি নাই
- মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়