কিশাের-কিশােরী কর্তৃক সংঘটিত আইন ও সমাজবিরােধী কার্যাবলিকে কিশাের অপরাধ বলা হয়। অপরাধ-বিজ্ঞানী এ, ভি, জন এর মতে, “কিশাের অপরাধী হল নির্দিষ্ট বয়ঃসীমার মধ্যে দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গকারী ও সামাজিক নিয়ম লজ্জনকারী।” বাংলাদেশে সাধারণত ৭-১৬ বছরের কিশাের-কিশােরীদের কিশাের অপরাধীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ অপরাধের প্রধান প্রধান লক্ষণ হল স্কুল পালানাে, শিক্ষক ও গুরুজনকে অমান্য করা, পথে-ঘাটে, সিনেমা হলে ও অন্যান্য চিত্তবিনােদন কেন্দ্রে মারপিট বাধানাে, পথচারী বিশেষ করে মেয়েদের সাথে অশালীন ব্যবহার করা, উদ্দেশ্যহীনভাবে যেখানে সেখানে ঘােরাফেরা করা, জুয়া খেলা, পরীক্ষার হলে নকল করা, মদ্যপান করা, খুন করা, রাজনৈতিক দলের প্ররােচনায় বিভিন্ন অপরাধকর্মে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি।
কিশাের অপরাধ বৃদ্ধির কারণসমূহ :
বাংলাদেশে দিন দিন কিশাের অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রবণতা যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে এ সমাজের ধ্বংস অনিবার্য। নিম্নে কিশাের অপরাধের কারণ বর্ণনা করা হল।
ভৌগোলিক কারণ :
বাংলাদেশে কিশাের অপরাধ প্রবণতার সাথে ভৌগােলিক অবস্থান, ঋতুচক্র প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। ঘরে ফসল তােলার সাথে সাথে কিশাের অপরাধ বৃদ্ধি পায়। আবার বর্ষাকালে কিশাের অপরাধ কমে যায়।
টিপূর্ণ মানসিক বিকাশ :
বাংলাদেশে বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিবেশে অধিকাংশ শিশুরই মানসিক বিকাশ সুন্দরভাবে হয় না বিধায় তারা অপরাধী হয়ে বেড়ে ওঠে।
দারিদ্র্য:
দারিদ্র কিশাের অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অভাবী শিশু-কিশােররা তাদের মৌল চাহিদা মেটাতে না পেরে বিভিন্ন অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়।
পিতামাতার অসংগতিপূর্ণ আচরণ :
পিতামাতার মধ্যে দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, ব্যক্তিত্বের সংঘাত ইত্যাদির প্রভাবে শিশু-কিশােররা অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। তাছাড়া পিতামাতার স্নেহবঞ্চিত ছেলেমেয়েরা যে অপরাধী হয় একথা নিশ্চিত।
শহরায়ন ও শিলায়ন :
শহরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাবে সনাতন মূল্যবােধ, প্রথা, নিয়মনীতিতে ভাঙন ধরে। ফলে শিশু-কিশােররা পারিবারিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়।
চিত্তবিনােদনের অভাব :
শিশু-কিশােরদের সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য চিত্তবিনােদনের অভাব থাকায় শিশু কিশােররা বিদেশী কুরুচিপূর্ণ আমােদ-প্রমােদের উপকরণের প্রভাবে ক্রমশ অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়।
অনুকরণ ও মেলামেশায় প্রভাব :
কথায় আছে “সৎসঙ্গে সর্গ বাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ।” ভালাে বন্ধুর সাথে মিশলে ভালাে এবং উহ্খল ও খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মিশলে একজন কিশাের অপরাধীতে পরিণত হতে পারে।
প্রতিকার :
বাংলাদেশে কিশাের অপরাধ মােকাবেলা করতে হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়ােজন
- সুস্থ পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি করে শিশু-কিশােরদের সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
- প্রতিটি শিশু যাতে শিক্ষা লাভ করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ উন্নত করতে হবে।
- দারিদ্র্য ঘােচাতে হবে। দারিদ্র্যের কারণে যাতে তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ না করে তার জন্য “শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি ব্যাপকভাবে চালু করতে হবে।
- সুস্থ চিত্তবিনােদনের ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে শিশু-কিশােরদের মানসিক গঠন সঠিকভাবে হয়।
- শিশুরা যেহেতু অনুকরণপ্রিয়, তাই তারা যেন সৎসঙ্গে মিশে এবং অসৎসঙ্গ এড়িয়ে চলে সেদিকে নজর দিতে হবে।
- শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে।
- প্রতিবন্ধী ও মানসিকভাবে অসুস্থ শিশুদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
- শিশু-কিশােররা যাতে যােগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সে জন্য “জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করতে হবে।