100 English Essay For Juniors

কীর্তিমানের মৃত্যু নাই

সময় অনন্ত, জীবন সংক্ষিপ্ত। সংক্ষিপ্ত এ জীবনে মানুষ তার মহৎ কর্মের মধ্য দিয়ে এ পৃথিবীতে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকে। আবার নিন্দনীয় কর্মের মাধ্যমে এই জগতে অনেকে বেঁচেও মরে থাকে। কেননা ব্যক্তি, পরিবার তাকে ভালােবাসে না; সমাজ, দেশ ও জাতি তাকে শ্রদ্ধা করে না, স্মরণ করে তার মৃত্যুতে কারাে যায়-আসে না।

মানুষ মাত্রই জন্ম-মৃত্যুর অধীন। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলে একদিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবেএটা চিরন্তন সত্য। আর মৃত্যুর মধ্য দিয়েই সে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেয়। কিন্তু পেছনে পড়ে থাকে তার মহৎ কর্মের ফসল। যে কর্মের জন্য সে মরে যাওয়ার পরও পৃথিবীতে যুগ যুগ বেঁচে থাকে। মানুষের জীবনকে দীর্ঘ বয়সের সীমারেখা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। জীবনে কেউ যদি কোনাে ভালাে কাজ না করে থাকে তবে সে জীবন অর্থহীন, নিফল। সেই নিষ্ফল জীবনের অধিকারী মানুষটিকে কেউ মনে রাখে না। নীরব জীবন নীরবেই ঝরে যায়। পক্ষান্তরে, যে মানুষ জীবনকে কর্মমুখর করে রাখে এবং যার কাজের মাধ্যমে জগৎ ও জীবনের উপকার সাধিত হয় তাকে বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। সেই সার্থক মানুষের কাজের অবদান বিশ্বের বুকে কীর্তিত হয়ে কৃতী লােকের গৌরব প্রচারিত হতে থাকে। কীর্তিমান ব্যক্তির যেমন মৃত্যু নেই, তেমনি শেষও নেই। কারণ এ পৃথিবীতে সে নিজস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব। কীর্তিমানের মৃত্যু হলে তাঁর দেহের ধ্বংস সাধন হয় বটে, কিন্তু তাঁর সৎ কাজ এবং অম্লানঈর্ত পথিবীর মানুষের কাছে তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তার মৃত্যুর শত শত বছর পরেও মানুষ তাকে স্মরণ কার। তাই সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা তার কর্ম-সাফল্যের ওপর নিশীল। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মানুষ পৃথিবীতে আসে এবং সে সময়সীমা পার হওয়ার সাথে সাথে। সে বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে। এ নির্দিষ্ট সময়সীমায় সে যদি গৌরবজনক কীর্তির স্বাক্ষরে জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলতে সক্ষম হয়, মানবকল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করে, তবে তার নশ্বর দেহের মৃত্যু হলেও তাঁর স্বকীয় সত্তা থাকে মৃত্যুহীন। গৌরবােজ্জ্বল কৃতকর্মই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে যুগ থেকে যুগান্তরে।

মানুষের দেহ নশ্বর কিন্তু কীর্তি অবিনশ্বর। কেউ যদি মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করে, তবে মৃত্যুর পরেও তাঁর এ কীর্তির মধ্য দিয়ে সে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরকাল বেঁচে থাকে।

এই বিভাগের আরো ভাবসম্প্রসারণ :

Related Post