কুফর শব্দের আভিধানিক অর্থ অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, ঢেকে রাখা, গােপন করা, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার মনােনীত দীন ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলাের কোনাে একটিরও প্রতি অবিশ্বাস করাকে কুফর বলা হয়।
কুফর হলাে- ইমানের বিপরীত। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলােতে বিশ্বাসের নাম ইমান। আর এসব বিষয়ে অবিশ্বাস করা হলাে কুফর।
যে ব্যক্তি কুফরে লিপ্ত হয় তাকে বলা হয় কাফির। অর্থাৎ কোনাে ব্যক্তি যদি ইসলামের কোনাে মৌলিক বিষয়ে অবিশ্বাস করে তখন তাকে কাফির বলা হয়। কাফির অর্থ অবিশ্বাসী, অস্বীকারকারী। মানুষ নানাভাবে কাফির বা অবিশ্বাসী হতে পারে। যেমন:
উপরােল্লিখিত কাজগুলাে করার মাধ্যমে মানুষ কাফির হয়ে যায়। এমতাবস্থায় পুনরায় ইমান আনতে ও খাঁটি মনে তওবা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এরূপ ঘৃণ্য কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে।
মানবজীবনে কুফরের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কুফরের ফলে শুধু দুনিয়াতেই নয় বরং আখিরাতেও মানুষকে শশাচনীয় পরিণতি বরণ করতে হবে। এর কতিপয় কুফল নিয়ে উল্লেখ করা হলাে
কুফর মানুষের মধ্যে অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতার জন্ম দেয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনিই আমাদের লালন-পালন করেন। পৃথিবীর সকল নিয়ামত তাঁরই দান। কাফির ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে অবিশ্বাস করে, এসব নিয়ামত অস্বীকার করে। সে আল্লাহ তায়ালার প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়। আল্লাহ তায়ালার বিধি-নিষেধ অমান্য করে। ফলে সমাজে সে অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিচিত হয়।
কাফির ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা, পরকাল, হাশর, মিযান, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি অবিশ্বাস করে। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে মানুষকে তার কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে এরূপ ধারণাও অস্বীকার করে। তার নিকট দুনিয়ার জীবনই প্রধান। সুতরাং দুনিয়ায় ধন-সম্পদের ও আরাম-আয়েশের লােভে সে নানারকম অসৎ ও অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, সুদ-ঘুষ, জুয়া ইত্যাদিতে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে সমাজে পাপাচার বৃদ্ধি পায়।
স্বভাবগতভাবেই মানুষ ভরসা করতে পছন্দ করে। আশা-ভরসা না থাকলে মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। কাফির ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তকদিরে অবিশ্বাস করে। ফলে সে যেকোনাে বিপদে আপদে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ে। মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্যধারণ করতে পারে না। অন্যদিকে তকদিরে বিশ্বাস না থাকায় যেকোনাে ব্যর্থতায় সে চরম হতাশ হয়ে পড়ে। ফলে তার জীবন চরম হতাশাগ্রস্তভাবে অতিবাহিত হয়।
কুফর মানবসমাজে অনৈতিকতার প্রসার ঘটায়। আখিরাত, জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাস না থাকায় কাফির ব্যক্তি নৈতিকতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে না এবং দুনিয়ার স্বার্থে মিথ্যাচার, অনাচার, ব্যভিচার ইত্যাদি যেকোনাে পাপ ও অনৈতিক কাজই সে বিনা দ্বিধায় করতে পারে। নবি-রাসুলগণকে বিশ্বাস না করায় তাঁদের নৈতিক চরিত্র এবং শিক্ষাও সে অনুসরণ করে না। এভাবে কুফরের মাধ্যমে সমাজে অনৈতিকতার প্রসার ঘটে।
কুফরির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রতি অবিশ্বাস, অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতা সৃষ্টি হয়। কাফির আল্লাহ তায়ালার বিধি-বিধান ও আদেশ-নিষেধের কোনাে পরােয়া করে না। বরং আল্লাহ তায়ালা, ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে বিদ্রোহ ও বিরােধিতা করে। ফলে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। আর যার প্রতি আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন, সে যত ক্ষমতা ও সম্পদের মালিক হােক না কেন তার ধ্বংস অনিবার্য।
পরকালে কাফিররা জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভােগ করবে। তারা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন
অর্থ : “যারা কুফরি করবে এবং আমার নিদর্শনগুলােকে অস্বীকার করবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ৩৯)। কুফর একটি মারাত্মক পাপ। সুতরাং এ থেকে সকলেরই বেঁচে থাকা উচিত।
Leave a Comment