আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
সামাজিক বিজ্ঞান

খিলাফত আন্দোলন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের মনােভাব প্রবল। ভারতীয় মুসলমানগণ এর ব্যক্রিম ছিল না। তারা তুরস্কের সুলতানকে খলিফা বলে মান্য করত এবং মুসলিম জাহানের ঐক্যের প্রতীক বলে মনে করত। খিলাফতের প্রতি কোনাে রকম অবমাননা মুসলমানদের ব্যথিত করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরক জার্মানির পক্ষ নিয়ে মিত্রপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করায় ভারতীয় মুসলমানরা দারুণ অস্বস্তিকর অবস্থার সম্মুখীন হয়। একদিকে তুরস্কের সুলতানের প্রতি ধর্মীয় আনুগত্য, অপর দিকে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করার অর্থ তুরস্কের প্রাচীন ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ খিলাফত প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা।

ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের মনােভাব উপলব্ধি করে আশ্বাস দিয়েছিল যে, তারা তুরস্কের কোনাে ক্ষতি করবে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতবাসীকে স্বায়ত্তশাসন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার দেওয়া হবে। এসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্রিটিশ সরকার এদেশের মুসলমানের অর্থনৈতিক ও নৈতিক সাহায্য পেয়েছিল।

যুদ্ধে মিত্রপক্ষের জয়ের ফলে ব্রিটিশরা তুরস্কের ক্ষতি সাধন করে। তুরস্ককে ভেঙে চুরমার করে মুসলমানদের মনে এক প্রবল আঘাত হানে। এ কারণে তাদের মনে আগুন জ্বলে ওঠে। তুর্কী সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা এবং খিলাফতের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য ১৯১৯ সালে মাওলানা মােহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ নেতৃবর্গ যে আন্দোলন শুরু করেন তা খিলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত।

খিলাফতে প্রথম অধিবেশন দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে তুরস্কের অখণ্ডতা ও খলিফার মর্যাদা রক্ষার দাবি করা হয়। খিলাফতের দ্বিতীয় অধিবেশন লক্ষ্ণৌতে অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা শওকত আলী। এ অধিবেশনে তুরস্ক ও খলিফার ব্যাপারে মুসলমানদের মনােভাব জানাবার জন্য বড়লাট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের প্রস্তাব গৃহীত হয়।

খিলাফতের ব্যাপারে বড়লাট তাঁদেরকে কোনােরূপ আশ্বাস দিতে অসমর্থ হন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে খিলাফত প্রতিনিধিগণ ব্যর্থ হন। তুরস্কের ওপর সেভার্স চুক্তি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে মুসলমানগণ ৩১শে আগস্ট খিলাফত দিবস পালন করেন।

খিলাফত কমিটিতে অসহযােগ কর্মসূচি গৃহীত হয়। খিলাফত আন্দোলন ও অসহযােগ সম্মিলিতভাবে আলী ভ্রাতৃদ্বয় ও গান্ধীজীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। উদ্দেশ্য সিদ্ধির পূর্বেই কয়েকটি মর্মান্তিক ঘটনার জন্য গান্ধীজী অসহযােগ আন্দোলন বন্ধ করে দেন। কিন্তু আলী ভ্রাতৃদ্বয় খিলাফত আন্দোলন চালিয়ে যান। অবেশেষ ১৯২৪ সালে কামাল আতাতুর্ক তুরস্কের খিলাফত উঠিয়ে দিয়ে সাধারণতন্ত্র প্রচলন করলে খিলাফত আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।

ফলাফল: খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এ আন্দোলন মুসলমানদের রাজনৈতিক চেতনাকে জাগ্রত করে তােলে। এ আন্দোলন মুসলমানদেরকে গণআন্দোলনের উপায় শিক্ষা দেয়, বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে একতার মনােভাব জাগিয়ে তােলে। এ আন্দোলন পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের শক্তি বৃদ্ধি করে।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button