চোখের গােলকের সাদা অংশ এবং চোখের পাতার ভিতরের অংশ পাতলা একটি স্বচ্ছ পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকে যার নাম কনজাঙ্কটিভা (Conjunctiva) আর এর প্রদাহ বা inflammation ই হলাে চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভাইটিস। আমাদের সমাজে এটি খুবই একটি পরিচিত রােগ যার বহুবিধ চিকিতসা পদ্ধতি অল্পবিস্তর সবাই জানেন। আমরা আশেপাশে যে কনজাঙ্কটিভাইটিস এর রােগীদের দেখে থাকি সেটা সচরাচর ভাইরাসের আক্রমনে হয় তবে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, এলার্জী বা আঘাত পাবার কারনেও এ রােগ হতে পারে। যেকোনাে বয়সের নারী পুরুষের এ রােগটি যেকোনাে সময় হতে পারে তবে অপরিস্কার বা নােংরা জীবন যাপন পদ্ধতি এরােগ হতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
সাধারণ ভাবে এ রােগটি ঋতু পরিবর্তনের সময় দেখা দেয় । অর্থাৎ শীত শেষে গরম যখন পড়তে থাকে সে সময় এই রােগ দেখা দেয় । একই সাথে এ সময় অন্যান্য ভাইরাস ঘটিত রােগ যেমন সর্দি-কাশি বা ঠান্ড জ্বর দেখা দেয়।
সরাসরি হাতের স্পর্শ, ফোমাইট, বাতাস, এমনকি হাত-মুখ ধােয়া ও অজু-গােসলের সময় পুকুর, নদী বা সুইমিংপুলের পানির মাধ্যমেও জীবাণুগুলাে ছড়াতে পারে। কনজাংকটিভাইটিসে আক্রান্ত চোখে আঙুল বা হাত লাগালে হাতে লেগে থাকা জীবাণু রুমাল, তােয়ালে, গামছা, টিস্যু পেপার, কলম, পেনসিল, বইয়ের পাতা, খাতা, টেবিল, চেয়ার, দরজার সিটকিনি, কলের ট্যাপ ইত্যাদিতে লেগে থাকতে পারে। এগুলােকে তখন চিকিৎসার পরিভাষায় বলে ফোমাইট।
রুমাল, তােয়ালে, গামছা, টিস্যু পেপার দিয়ে আক্রান্ত চোখ মুছলেও এগুলােতে জীবাণু লেগে থাকবে। এসব ফোমাইটের মাধ্যমেও জীবাণু ছড়িয়ে যেতে পারে অন্যের চোখে। এবং এসব কারণে একজনের চোখ ওঠা রােগ হলে তা মহামারি আকারে অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। শিশু বা বৃদ্ধ কেউই বাদ যায় না।
তবে স্কুল বা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনেকে একসঙ্গে থাকে বলে তাদের একজনের কনজাংকটিভাইটিস হলে অন্যদের মধ্যে রােগটা ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হলে চোখ ওঠার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে শুরু করে সাত-আট দিন বা চিকিৎসা শুরু করার দু-তিন দিন পর্যন্ত এ রােগ অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটাকে বলে সংক্রমণের সময়কাল।
আর ভাইরাসজনিত কারণে হলে রােগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগে থেকে শুরু করে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাত থেকে ১০ দিন পর পর্যন্ত ভাইরাসগুলাে অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে। জীবাণু ঢােকার পাঁচ-সাত দিন পর চোখ ওঠার লক্ষণ প্রকাশ পায়। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কনজাংকটিভাইটিস যদিও তেমন কঠিন রােগ নয়, সাত থেকে ১০ দিনে ভালাে হয়ে যায়, তবু এ রােগটি একেবারে কম কষ্টকর নয়।
চোখ ওঠা বা কনজাংকটিভাইটিস প্রতিরােধের উপায় আছে। সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধােয়া প্রতিরােধের খুব একটা ভালাে উপায়। যার চোখ উঠেছে, সেও যেমন ঘন ঘন হাত ধােবে; যার হয়নি, রােগীর সংস্পর্শে আসা এমন সুস্থ লােকেরও তেমনি ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিতে হবে।
রােগীর ব্যবহৃত রুমাল, তােয়ালে, গামছা, টিস্যু পেপার, চোখের ড্রপ, চোখের কসমেটিকস ইত্যাদি অন্যে ব্যবহার না করার মাধ্যমেও রােগটি প্রতিরােধ করা যাবে অনেকাংশে। আর রােগীর ব্যবহৃত রুমাল, তােয়ালে, গামছা ইত্যাদি ধুয়ে ফেলতে হবে তাৎক্ষণিকভাবে। টিস্যু পেপার ফেলে দিতে হবে নিরাপদ স্থানে।
রােগী বা সুস্থ সবারই চোখে হাত বা আঙুল না লাগানাে অথবা চোখ না কচলানাে—এসব অভ্যাসও প্রতিরােধে ভূমিকা রাখবে বেশ। চোখ ওঠা চোখে ভুলে আঙুল দিলে বা কচলালে সঙ্গে সঙ্গেই হাত ভালাে করে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাতে বিভিন্ন বস্তুতে রােগজীবাণু লেগে যাওয়ার আশঙ্কা কমে, কোনাে বস্তুকে ফোমাইটে রূপান্তর করার আশঙ্কা কমে। আর প্রয়ােজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাও জরুরি।
ভাইরাস জনিত চোখ ওঠার জন্য সাধারণ ভাবে তেমন কোনাে ওষুধের দরকার পড়ে না । কারণ এ জাতীয় চোখ ওঠা সাতদিনের মধ্যেই ভাল হয়ে যায় । তারপরও চিকিৎসক কখনাে কখনাে এ জাতীয় চোখ ওঠার জন্য এন্টিবায়ােটিক ড্রপ দিয়ে থাকেন। এটা দেয়া হয় সর্তকতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ।
ভাইরাস জনিত চোখের রােগের ফলে অন্য কোনাে সংক্রমণ যেনাে হামলা করতে না পারে সে জন্যেই এই এন্টিবায়ােটিক প্রদান করা হয়। এ ছাড়া চোখ ওঠা ছাড়াও যদি জ্বর বা গলা ব্যাথা জাতীয় উপসর্গ থাকে তবে তার জন্য চিকিৎসক ওষুধ প্রদান করবেন। এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে যদি চোখ উঠে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক অবশ্যই এন্টিবায়ােটিক প্রদান করবেন। এ ছাড়া প্রয়ােজনীয়। আরাে ওষুধ দিবেন।
চোখ উঠলে গরম পানির সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়। চোখ ওঠার সাথে সাথে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চান। না । কিন্তু সাতদিনের মধ্যে চোখ ওঠা না গেলে অবশ্য চোখের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এ ছাড়া চোখে ওঠার পর স্টেরয়েড জাতীয় কোনাে ওষুধ চোখে দেয়া যাবে না। তাতে মারাত্মক কুফল দেখা দিতে পারে । আর কারাে চোখ উঠলে তাকে যতােটা সম্ভব একা থাকতে দিতে হবে।
আর এটি করতে হবে চোখের রােগের বিস্তার প্রতিহত করার জন্য । চোখ উঠলে কেউ কেউ শামুকের পানি সহ নানা ধরণের টোটকা চিকিৎসা করেন। এ জাতীয় চিকিত্সা থেকে অবশ্যই বিরত। থাকতে হবে। না হলে অন্ধ হওয়ার আশংকা সহ নানা ধরণের মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিতে পারে
Leave a Comment