জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে-
চির স্থির কবে নীর, হায়রে জীবন নদে?
জন্ম হয় মৃত্যুর জন্য অর্থাৎ জন্ম হলে মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শ থেকে করও নিস্তার নেই। কোনো না কোনো সময়ে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করতেই হবে। মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। এজন্যই বলা হয়, মানুষ মরণশীল। উদ্ধৃত কবিতাংশের প্রতিধ্বনিত হয়েছে ‘জন্মিলে মরিতে হবে’। পৃথিবীতে কেউই মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পারেনি। তাই কেউ মৃত্যুহীন বা অমরও হতে পারেনি। এজন্যেই কবিতাংশে স্বীকৃত হয়েছে ‘অমর কে কোথা কবে’।
দেহের নড়াচড়া, চঞ্চলতা, কাজকর্ম, আবেগ-অনুভূতির বিচিত্র প্রকাশ- এসব কেবল দেহের বেঁচে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। জীবন যতক্ষণ আছে ততক্ষণই হিংসা-বিদ্বেষ, দণ্ড-অহংকার, হাসি-কান্না, মান-অভিমান, উপহাস-অবজ্ঞার পালা চলে। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আভিজাত্য-বিলাসিতা পর্ব শেষ হয়ে যায় নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। জীবন-নদে নীর চিরস্থায়ী নয়, ঠিক পদ্মপাতার জলের মতো টলমল অবস্থা তার। যেকোনো মুহুর্তে ঝরে পড়তে পারে পদ্মপাতার জল। জীবনটাও ঠিক তেমনি স্থির নয়- চিরস্থায়ী নয়, বরং অস্থায়ী। অথচ এই অস্থায়ী স্বল্পায়ুর মধ্যে মানুষ অমরত্ব খোঁজে। সুন্দর পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্য বিদায় নিতে চায় না। বেঁচে থাকতে চায় অনন্তকাল। আনন্দের মধ্যে, সুখের মধ্যে, শান্তির স্পর্শ নিয়ে চিরজীবী হতে চায়। মানুষের এই চাওয়ার যেন শেষ নেই। তাই মৃত্যুর পরও পৃথিবীতে আবার ফিরে আসার স্বপ্ন দেখে। একবারও মনে করতে চায় না তার মৃত্যু হবেই, একবারও ভাবতে চায় না মৃত্যু অনিবার্য। তাই বেঁচে থাকার বিকল্প পথ খুঁজে। এমন কীর্তি রেখে যেতে চায় যাতে মানুষ তাকে মনে রাখে চিরদিন।
বস্তুত মানবসমাজে সেই মানুষই প্রশংসিত হয় লোকে যাকে বিস্মৃত হয় না, ‘মনের মন্দিরে সদা সেবে সর্বজন’। এটা মৃত্যুকে ভুলে থাকার জন্য সান্ত্বনাবিশেষ। কিন্তু চির বাস্তবতা হলো, যেহেতু জন্ম হয়েছে তাই মৃত্যু হবেই। চিরকালের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পেয়ে অমর হওয়া অবাস্তব কল্পনা মাত্র।