গত শতকের সত্তর দশক থেকে শুরু। এরপর জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই কোনাে না কোনাে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ অক্টোবর-১৩ নভেম্বর ২০২১ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগাে শহরে অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন বা কপ-২৬। বৈশ্বিক উষ্ণতা রােধে কার্যকর কোনাে সমাধান ছাড়াই শেষ হয়েছে এ সম্মেলন। সম্মেলনের পূর্বাপর নিয়ে আমাদের এ আয়ােজন।
ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিরােধ
সম্মেলনে যােগ দেয় প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা। জলবায়ু সংকট মােকাবিলায় অবকাঠামাে নির্মাণ, কৃষিকাজ, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণের মতাে খাতগুলােতে আগামী এক দশকে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করলে তা থেকে ৭.২ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি এড়ানাে সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মােকাবিলায় উন্নত দেশগুলাের প্রতি বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের। প্রতিশ্রুতি পূরণে আহ্বান জানানাে হলেও মারাত্মক ঝুকিতে থাকা দেশের জন্য মাত্র ৪১৩ মিলিয়ন নতুন অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি মিলে।
এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন
- বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে বাংলাদেশ
- বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি
- দেশের প্রথম স্পেশালাইজড হাসপাতাল
- কৃষকের সুরক্ষায় কিষানি ড্রোন
- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কর্মপরিকল্পনা
- বাংলাদেশের নারী শিক্ষায় মালালা ফান্ড
- জাতীয় কৃষি কাউন্সিল গঠন
- ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরু
- বিশ্বে প্রথম দ্বৈত টিকার অনুমােদন
- যুক্তরাজ্যে নতুন বাণিজ্যনীতি
কয়লা ব্যবহার বন্ধে সম্মত
১৯০টি দেশ ও সংস্থা কয়লার ব্যবহার ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতাে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়লানির্ভরশীল দেশগুলাে এ প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করেনি। এবারের সম্মেলনে পােল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও চিলির মতাে বড় বড় কয়লা ব্যবহারকারী দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়।
বন উজাড় বন্ধের প্রতিশ্রুতি
শতাধিক বিশ্বনেতা ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেন। এবারের জলবায় সম্মেলনে এটিই প্রথম বড় সমঝোতা।আমাজন বনের বড় অংশ কেটে ফেলা হয় ব্রাজিলে। সেই এজিলও প্রতিশ্রুতি দানকারী দেশগুলাের মধ্যে রয়েছে। বন উজাড় বন্ধে সরকারি-বেসরকারি মিলে বরাদ্দ রয়েছে ১,৯২০ কোটি ডলারের তহবিল। গ্লাসগােয় মূল সমঝােতার বাইরে।আরও কয়েকটি চুক্তি সবার নজর কাড়ে। এবারের সম্মেলনে জাতিসংঘ ও ইউরােপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে প্রায় ১০০টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন গ্যাসের নির্গমন গত বছরের তুলনায় ৩০% কমানাের প্রতিশ্রুতি দেয়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন
গ্লাসগাে সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে ও বৈশ্বিক ৪ তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে আগামী বছরের মধ্যে শক্তিশালী পরিকল্পনা প্রকাশ করতে বলা হয়।
জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি বন্ধ
নতুন খসড়া চুক্তিতে কয়লা শক্তি এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি বন্ধ করার আহ্বান রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সব পক্ষকে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ তাদের ২০৩০ সালে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের হ্রাসকৃত লক্ষ্যমাত্রা পুনরায় পর্যালােচনা। এবং এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়ােগ বন্ধের ঘােষণা দেয়।
কার্বন নিঃসরণ কমাতে ঐক্যমত
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ঐকমত্যে পৌছেছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩৪টি দেশ। জাতিসংঘের সহযােগী সংস্থা UNFCCC’র ওয়েবসাইটে ১৩৪টি দেশের নাম প্রকাশ করা হয়।
প্রকৃতি রক্ষায় প্রতিশ্রুতি
যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে ৪৫টি দেশ প্রকৃতিকে রক্ষা করতে টেকসই বিনিয়ােগের ঘােষণা দেয়। UNFCCC জানায়, প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যুক্তরাজ্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের নতুন প্যাকেজ চালু করবে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রায় ১০০টি হাইপ্রােফাইল কোম্পানি ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকৃতির অবক্ষয় বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এর মধ্যে ওভে এনার্জি আগামী বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যে এক মিলিয়ন গাছ লাগানাের প্রতিশ্রুতি দেয়।
বৈশ্বিক মােট কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের দায় ০.৪৭ শতাংশের চেয়ে কম হলেও বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলাের একটি।
– প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ৪ প্রস্তাব
১ নভেম্বর ২০২১ কপ-২৬ সম্মেলনের মূল পর্বে লিডার সামিটে বক্তব্য দেন ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (CVF)-এর সভাপতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তন মােকাবিলায় তিনি বিশ্বনেতাদের সামনে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলাে –
- প্রধান কার্বন নিঃসরণকারীদের অবশ্যই উচ্চাভিলাষী জাতীয় পরিকল্পনা দাখিল এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে
- উন্নত দেশগুলােকে অভিযােজন এবং প্রশমনে অর্ধেক অর্ধেক (৫০ঃ৫০) ভিত্তিতে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে ।
- উন্নত দেশগুলােকে স্বল্প খরচে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলােকে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে।
- সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা ও খরার মতাে দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব নেওয়াসহ জলবায়ু পরিবর্তন -প্রধানমন্ত্রী ইস্যুতে ক্ষতি ও ধ্বংস মােকাবিলা করতে হবে।