স্বাস্থ্য টিপস

ধনে খাওয়ার উপকারিতা : ধনিয়া বা ধনে আমাদের অতি পরিচিত । অনেকে একে বলে ‘ধন্যা। এটিকে আমরা মসলা হিসেবে চিনি ও জানি। এটাও জানি, ধনে পাতা ও শুকনাে ধনে দুটোই আমরা। তরকারির সাথে খেয়ে থাকি। রান্নার কাজে-এর ব্যবহার প্রায় প্রতিদিন হয়ে থাকে।। ধনেগাছ দেড় থেকে দু’ফুটের বেশি উঁচু হয় না। সাধারণত ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ঝুরঝুরে মাটিতে ধনে বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ১/২ সপ্তাহের মধ্যে এই বীজ থেকে চারা গজায়।

চারাগাছের পাতার ধার কাটা, অসমান কোণ। তবে অনেকটা গােলাকার। এ অবস্থায় মনে হয়, জমিতে যেন সবুজ চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। শীতকালে ধনে গাছে সাদা ছােট ছােট ছাতার মতাে ফুল হয়। আমাদের দেশে ধনের ফলন ভালাে হয়। সাধারণত ধনেপাতা ব্যবহার করা হয়। সালাদ, আচার, সবজি, মাছ ও বিভিন্ন রকম ভর্তাতে। খাবারের পরেও অনেক সময় আমরা ভাজা ধনে চিবুতে পছন্দ করি। এছাড়া ধনেতে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। ধনে ব্যবহার করে আমরা টুকটাক অনেক রােগেরই চিকিৎসা করতে পারি।

দেহের জ্বালা :

অনেক সময় আমাদের শরীরের ভেতরে ও বাইরে জ্বালা বােধ হয়। এক্ষেত্রে ৫/৬ গ্রাম ধনে এক কাপ গরম পানিতে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেকে খালি পেটে খেতে হবে। এতে করে শরীরের জ্বালা কমে আসবে।

পেট ব্যথা : কাঁচা আমের ভর্তা খেলে, অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে বা বেশ কয়েকটা আম এক সাথে মজা করে খেলে পেটে খোঁচা দেয়া ব্যথা হতে পারে। এ অবস্থাতে ১০ গ্রাম ধনে ও ৫ গ্রাম শুকনাে আদা একটু থেঁতাে করে ৪ কাপ। পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। সেটা ২ কাপ থাকতে নামিয়ে হেঁকে এক ঘন্টা অন্তর ৩/৪ বার খেলে উপকার পাওয়া যায়।

আমাশয় :

পিত্তের অসুখের কারণে অনেক সময় অল্প প্রস্রাব হয় ও পায়খানা হয় খুবই পাতলা। পায়খানা করার সময় জ্বালা করে। আর এই মলের রং প্রতিবারেই যেন বদলে যায়- কখনাে ঘাসের মতাে, কখনাে হলদে। আবার কখনােবা পচা পাতার মতাে হয়। এক্ষেত্রে ২৫ গ্রাম ধনে বেটে নিয়ে ২৫ গ্রাম গাওয়া ঘি, আধা পােয়া পানিসহ একটি পাত্রে রান্না করতে হবে। এমনভাবে রান্না করতে হবে, যাতে পানিটা শুকিয়ে যাবে অথচ ভাজা ভাজা হবে না। ওটা নামিয়ে হেঁকে সকালে ও বিকালে দু’বার অর্ধেকটা আর বাকি অর্ধেকটা পরের দিন দু’বারে খেতে হবে। এভাবে ৩/৪ দিন খেলে আমাশয় সেরে যাবে।

শিশুদের কাশি :

দেখা যায়, কাশতে কাশতে শিশুর চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। মনে হয়, যেন দম বন্ধ হয়ে গেল। এই রকম অবস্থায় ২ চা-চামচ আতপ চাল ১০/১২ চা-চামচ পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। সেই পানি ৭/৮ চা-চামচ নিয়ে পানিতে আধা চা-চামচ ধনে বেটে মিশিয়ে নিতে হবে। সে পানিটা হেঁকে নিয়ে আধা চা-চামচ করে ৩/৪ ঘন্টা অন্তর খাওয়ালে ঐ কাশিটা বন্ধ হয়ে যাবে।

বাত :

বাতরক্তে কষ্ট পেলে ধনে .ও সাদা জিরা সমপরিমাণে নিয়ে দুপানি মিশিয়ে বাটতে হবে। তারপর এর ২ গুণ পরিমাণ গুড়ের সঙ্গে ৪ নারকেলের সন্দেশ যেভাবে তৈরি করা হয়, সেই রকম তৈরি করে প্রতিদিন ১০/১২ গ্রাম করে পানিসহ খেতে হবে। এ রকম কিছু দিন খেলে অনেকদিন পর্যন্ত সুস্থ থাকা যাবে।

পিপাসা ও পেটে বায়ু সারাতে :

পিপাসা ও পেটে বায়ু হলে ধনেপাতা ঔষধ হিসেবে কাজ করে । ১০/১২ গ্রাম ধনেপাতা একটু কুটে নিয়ে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। ২ কাপ থাকতে নামিয়ে হেঁকে বার বার ঐ পানিটা খেতে পারলে পিপাসা মিটবে। ১০/১২ গ্রাম ধনে থেঁতাে করে এক গ্লাস গরম পানিতে রাত্রে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন সকালের দিকে অর্ধেকটা ও দুপুরবেলা খাওয়ার ২ ঘন্টা পর বাকি পানিটা খেয়ে নিতে হবে। এতে করে পেটে আর বায়ু হবে না। তবে ৭ দিন খেলে এটাতে স্থায়ী ফল পাওয়া যাবে।

মনে রাখতে হবে, ধনে দেওয়া তরকারির ঝােল খাওয়া গেলেও তলানির অংশটুকু খাওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে। এতে শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এই গেল শরীরের ভেতর দিকের উপকারের কথা।

এছাড়াও এর আছে শরীরের বাইরের উপকারিতা। যেমন, পেটের কামড়ানিতে ধনে আর যব সমান পরিমাণে নিয়ে পানি দিয়ে বেটে পেটে প্রলেপ দিলে এর সুফল পাওয়া যাবে।

চুল পড়া ও খুশকিতেও এর উপকার পাওয়া যায়। ২০০ গ্রাম খাটি তিল তেল নিয়ে তার সাথে ৭/৮ চা-চামচ ধনেপাতা একটু কুটে নিয়ে ঐ তেলে ভিজিয়ে ৭/৮ দিন রেখে সেই তেল মাথায় দিন। এতে খুশকি চলে যাবে। চুল পড়া বন্ধ হবে।

Related Post

Leave a Comment