নীচ যদি উচ্চভাসে সুবুদ্ধি উড়ায়ে হেসে
সব জিনিসের মর্যাদা সবাই বােঝে না। তাই যথাযথ স্থানে যথাযােগ্য ব্যক্তি অধিষ্ঠিত না হলে সত্য, সুন্দর, মঙ্গল ধূলিস্মাৎ হয়। সেখানে স্থান করে নেয় অত্যাচার, জুলুম ও দুর্নীতি। সমাজে ভালাে-মন্দ উভয়ের অবস্থান পাশাপাশি রাত ও দিনের মতাে। তাই দেখা যায় একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি ভাবা যায় না। আলাে প্রজ্জ্বলিত হলে যেমন অন্ধকার থাকে না। তেমনি অন্ধকার প্রবল হয় আলাের । অভাবে। তখন পথিক পথ হারায়, ভুবনের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়, তেমনি সমাজে উঁচু-নীচু, ভালাে-মন্দ, মানঅপমান বিদ্যমান। যারা উঁচু সম্মান, গৌরবের অধিকারী তারা সমাজের সকল কলুষতা দূর করে, পঙ্কিলতা মুছে দিয়ে আবিলতা দূর করে সমাজকে সত্য, সুন্দরের পরশপাথরে শােভিত করে তােলে। মানুষের প্রত্যাশা ও চাহিদানুযায়ী স্বর্গীয় সমাজ গড়ে তােলে। আর এর জন্য প্রয়ােজনে তারা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিতেও দ্বিধা করে না। তারা মহৎ, সুতরাং তারা বােঝে মহত্ত্বের মূল্য, কল্যাণের প্রয়ােজন, মানবতার মুক্তি। তাই তারা যেমন প্রাণপণ চেষ্টা করে তা প্রতিষ্ঠা করে, আবার তা টিকিয়ে রাখার জন্যও তেমনি জীবন বাজি রাখে। অন্যদিকে যারা হীন নীচু, মানবতাহীন, সংকীর্ণমনা, তারা সৎ, ন্যায়, কল্যাণ আদর্শের মর্ম বােঝে না বরং এগুলাে শুনলে তাদের যেন গায়ে জ্বালা ধরে, তারা তাদের কলুষ মনােবৃত্তি বাস্তবায়নে হীনপ্রবৃত্তিকে লাগামহীন ঘােড়ার মতাে ছেড়ে দেয়। শুধু স্বার্থপরতা, সংকীর্ণমনা মনােভাব তাদেরকে পরিচালিত করে। আর যা ভালাে ঐশ্বরিক গুণাবলী, মানবীয় গুণাবলী তাদের চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তারা তখন সেগুলােকে পদদলিত, মথিত ও সমূলে উৎপাটনে ব্রতী হয় এবং বাস্তবায়নের জন্য নীতিহীন একটি দানবে পরিণত হয়। ফলে সমাজ-সভ্যতা এক চরম সংকটে নিপতিত হয়। যেমন হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনী শত শত লাইব্রেরি পুড়িয়ে উল্লাস করত, জ্ঞানী-গুণীদের বিনা কারণে হত্যা করত। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যেমন একাত্তরের ২৫ মার্চে চরম উল্লাস ও উৎসাহে নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল আমাদের বুদ্ধিজীবী সমাজের। আর এরই প্রতিবাদে যুগে যুগে মানব-মানবতা ও আদর্শপ্রেমিকরা রুখে দাঁড়িয়েছে, জীবন বাজি রেখেছে। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের সভ্যতা আজও টিকে আছে এবং টিকে থাকবে। তাই আমাদের উচিত সৎ, যােগ্য, উপযুক্ত লােককে যথাযথ স্থানে বসানাে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, দুর্বলকে ক্ষমতা দেয়া আরাে বেশি ভয়ংকর। এ জন্য অনুপযুক্ত ও নীচ প্রকৃতির লােকের ক্ষমতায় আরহণ যথেচ্ছাচার জীবনের সূচনা ঘটায়, আর জন্ম দেয় নষ্ট ইতিহাসের।
এই বিভাগের আরো ভাবসম্প্রসারণ :
- কীর্তিমানের মৃত্যু নাই
- পথ পথিকের সৃষ্টি করে না পথিকই পথ সৃষ্টি করে
- অর্থসম্পত্তির বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনাে বিনষ্ট হয় না
- অসি অপেক্ষা মসী অধিকতর শক্তিমান
- অনুকরণের দ্বারা পরের ভাব আপন হয় না অর্জন না করলে কোন বস্তুই নিজের হয় না
- অর্থই অনর্থের মূল
- অধর্মের ফল হইতে নিষ্কৃতি নাই
- মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়