প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্থ প্রদেশে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সকল কাজের জন্য প্রাদেশিক শাসন বিভাগ আইনসভার কাছে দায়ী থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে প্রাদেশিক সরকারের শাসনকার্য পরিচালনা করা। হল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন তিনটি নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথমত, সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস্ত বিষয়ের ওপর কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ থাকবে না। দ্বিতীয়ত, প্রদেশগুলােতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি প্রদেশ আত্মনির্ভরশীল হবে।
১৯৩৫ সালের প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের কার্যকারিতা
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বাস্তবে প্রদেশগুলােতে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গভর্নর জেনারেলের আদেশ-নির্দেশ পালনই ছিল প্রাদেশিক গভর্নরের প্রধান কাজ। গভর্নরগণ ব্রিটিশ রাজ্যের প্রতিনিধি বলে প্রাদেশিক আইনসভার কাছে দায়ী থাকেন না।
ভারত সচিব প্রাদেশিক গভর্নরদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। আইনসভার সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন সীমিত ছিল। আই. সি. এস (I.C.S) এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা নিয়ােগের ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারের কোনাে ক্ষমতা ছিল না। গভর্নরগণ গভর্নর জেনারেলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।
গভর্নর জেনারেল প্রাদেশিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতেন এবং জরুরি পরিস্থিতিতে প্রদেশে কেন্দ্রীয় আইন জারি করতেন। যেকোনাে অজুহাতে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা ও আইনসভা ভেঙে দিতে পারতেন। বাস্তবক্ষেত্রে এসব পরিস্থিতির জন্য ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে প্রবর্তিত স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছিল। এতদসত্ত্বেও বলা যেতে পারে যে, ১৯৩৫ সালের আইন প্রদেশে যথেষ্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
প্রাদেশিক নির্বাচন
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ১৯৩৭ সালে কার্যকর হয়। ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান তিনটি দল যথা কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও কৃষক-প্রজা পার্টি অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনে মুসলিম লীগ ৪০টি আসনে, কৃষক-প্রজা পার্টি ৩৫টি আসনে, স্বতন্ত্র মুসলমান ৪১টি আসনে এবং স্বতন্ত্র হিন্দু ১৪টি আসনে বিজয়ী হয়। স্বতন্ত্র মুসলমান সদস্যের মধ্যে কয়েকজন মুসলিম লীগে ও কয়েকজন কৃষক-প্রজা পার্টিতে যােগ দেন। ফলে মুসলিম লীগের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০টি এবং কৃষক-প্রজা পার্টির আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫টিতে। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে কোনাে একক রাজনৈতিক দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।