আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
টুকরো সংবাদ

বাংলাদেশের ঈদগাহ পরিচিতি

ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার নামাজ আদায়ের জন্য সাধারণত শহরের বাইরে বা শহরতলীতে যে বড় ময়দান ব্যবহৃত হয়, তাই ‘ঈদগাহ’ নামে পরিচিত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাংলাদেশের ঈদগাহ নিয়ে আমাদের এ আয়ােজন।

ঈদ মােবারক
ঈদ মােবারক বা ঈদ মুবারক মুসলিমদের একটি শুভেচ্ছা বাক্য, যেটি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহায় পরস্পরকে বলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়ে থাকে। ‘ঈদ’ শব্দের অর্থ আনন্দ বা উদ্যাপন, আর ‘মােবারক’ শব্দের অর্থ কল্যাণময়। সুতরাং ‘ঈদ মােবারক’ শব্দের অর্থ হলাে ঈদ বা আনন্দ উদ্যাপন কল্যাণময় হোক।

জাতীয় ঈদগাহ

বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগাহ ঢাকা জেলার সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই এ স্থানটি ছিল ঝােপ-জঙ্গলে পূর্ণ। এখানে ছিল একটি পুকুর। হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে রয়েছে একটি মাজার। সেই মাজারে ওরসের আয়ােজন হতাে ওই পুকুরপাড়ে। ১৯৮১-৮২ সালের দিকে সেই ঝােপ-জঙ্গল কিছুটা পরিষ্কার করা হয়। জায়গাটি একটু পরিচিত হয়ে উঠলে সেখানে ছােট পরিসরে শামিয়ানা টানিয়ে ঈদের নামাজ পড়ানাে শুরু হয়। ১৯৮৫ সালের দিকে পুকুরটি ভরাট করা হয়। পরে ১৯৮৭৮৮ সালের দিকে সরকার এ স্থানকে জাতীয় ঈদগাহ হিসেবে। ঘােষণা করে। জাতীয় ঈদগাহ মাঠের আয়তন ২,৭০,২৭৭ বর্গফুট। জাতীয় ঈদগাহে একটি জামাতে অন্তত এক লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে।

গাের-এ-শহীদ ঈদগাহ

গাের-এ-শহীদ ঈদগাহ বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগের সময় হতে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে স্থায়ী কোনাে মিম্বার সেখানে নির্মাণ করা হয়নি। ২০১৫ সালে জেলা প্রশাসন স্থায়ী ঈদগাহ মিম্বার নির্মাণের কাজ শুরু করে। ২০১৭ সালের ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় দিনাজপুরের গাের-এ-শহীদ ঈদগাহের। প্রথম বছরেই এতে মুসল্লির। সংখ্যা হয় প্রায় দুই লাখ। পরের বছর এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ; পাচ লাখে। এ ঈদগাহে প্রায় ৭ লাখ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন। দিনাজপুরের গাের-এ-শহীদ। ঈদগাহই বর্তমানে দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ।

শােলাকিয়া ঈদগাহ

শােলাকিয়া ঈদগাহ কিশােরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ। ১৭৫০ সাল থেকে কিশােরগঞ্জের ঐতিহাসিক শােলাকিয়া ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এতষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম জামাতে এই মাঠে। একসঙ্গে ১,২৫,০০০ অর্থাৎ সােয়া লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সােয়া লাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সােয়া লাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয় শােলাকিয়া। বর্তমানে এ মাঠের মূল আয়তন ৬.৬১ একর। ২০১৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত এটাই ছিল দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ। শােলাকিয়ার ঈদগাহে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ মুসল্লি।

আরো পড়ুন

ধানমন্ডির মােগল ঈদগাহ

১৬১০ সালে সুবে বাংলার রাজধানী হয় ঢাকা। সুবেদারের বাসস্থান এবং অন্য রাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যালয়ও ছিল এখানেই। সেই সময়ে তাদের জন্য বাংলাদেশের প্রাচীন ঈদগাহটি তৈরি হয় ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার সাতমসজিদ রােডে। বাংলার সুবেদার শাহ সুজার প্রধান অমাত্য মীর আবুল কাসেম ১৬৪০ সালে এটি তৈরি করেন। সেই আমলে ঈদের দিন এই ঈদগাহটিতে শুধু মােগলরাই নামাজ পড়তেন। ইংরেজ আমলে জরাজীর্ণ ও জঙ্গলাকীর্ণ অবস্থায় ছিল ঈদগাহটি। উনিশ শতকের শেষের দিকে শহরের মুসলমানরা এখানে ঈদের নামাজ পড়ত। এই ঈদগাহটিতেও বাংলাদেশের অন্য মােগল স্থাপত্যগুলাের মতাে পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছে। বন্যা বা বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য চার ফুট ভূমি উচু করে ঈদগাহটি নির্মাণ করা হয়।

জমিয়াতুল ফালাহ ঈদগাহ

চট্টগ্রাম মহানগরীর ওয়াসা মােড় এলাকায়। রয়েছে জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ। এই মসজিদের সামনে বিশাল মাঠ। চারপাশে সীমানা প্রাচীর রয়েছে মাঠজুড়ে। এই মাঠটি ২০১৩ সালে ঢালাই করে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

শাহ মখদুম ঈদগাহ

রাজশাহী শহরের দরগাহপাড়ায় অবস্থিত শাহ মখদুম ঈদগাহ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরপরই রাজশাহী নগরীর কেন্দ্রস্থল পদ্মার তীরঘেঁষে রাজশাহী হজরত শাহ মখদুম (রহ.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে ঈদগাহের ভূমি উচু ও সমতল করা হয়। এরপর আধুনিক স্থাপত্যের পাচ ফুট উঁচু বেষ্টনী প্রাচীর নির্মাণ করা হয়।

সিলেটের শাহি ঈদগাহ

সপ্তদশ শতাব্দীতে দিল্লির মসনদে বসেন ম্রাট আওরঙ্গজেব। তার শাসনকালে সিলেটে মােগল ফৌজদার হিসেবে নিয়ােগ পান ফরহাদ খা। তিনি এ ঈদগাহ নির্মাণে উদ্যোগী হন। সরাসরি তার তত্ত্বাবধানে মােগল । স্থাপত্যরীতিতে এ ঈদগাহের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। সিলেট শহরের ব্যস্ততম আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে টিলাগড়মুখী সড়কের মাঝামাঝি এ স্থাপনার অবস্থান। স্থাপনার নামানুসারে পুরাে এলাকাই এখন শাহি ঈদগাহ এলাকা নামে পরিচিত। ২০০২ সালে ঈদগাহের তিন দিকে তিনটি বিশাল তােরণ নির্মাণ করা হয়।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button