![পৌরনীতি ও নাগরিকতা](https://bcspreparation.net/wp-content/uploads/2021/05/পৌরনীতি-ও-নাগরিকতা-780x470.jpg)
বাংলাদেশের সংবিধান
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সংবিধান তৈরির জন্য ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। উক্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন ড. কামাল হােসেন। এ খসড়া কমিটির প্রথম অধিবেশন বসে ১৯৭২ সালের ১৭ই এপ্রিল। এ কমিটি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান তৈরি করে এবং তা গণপরিষদে উত্থাপিত হয়। ১৯শে অক্টোবর থেকে ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত গণপরিষদে সংবিধানের খসড়া পাঠ করা হয়। গণপরিষদে বিভিন্ন সদস্যের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দানের পর অবশেষে পরিমার্জিত হয়ে উক্ত সংবিধান ৪ঠা নভেম্বর ১৯৭২ সালে গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে তা কার্যকর হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ নিমে বর্ণনা করা হলাে
১. লিখিত দলিল : বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত দলিল। এর ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এটি ১১টি ভাগে বিভক্ত । এর একটি প্রস্তাবনাসহ সাতটি তফসিল রয়েছে।
২. দুস্পরিবর্তনীয় : বাংলাদেশের সংবিধান দুস্পরিবর্তনীয়। কারণ, এর কোনাে নিয়ম পরিবর্তন বা সংশােধন করতে জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতির প্রয়ােজন হয়।
আরো পড়ুন :
- বাংলাদেশ সরকারের স্বরূপ ও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ
- বাংলাদেশের সংবিধানের সংশােধনীসমূহ
- বাংলাদেশের সংবিধান ও বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
- উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
- অলিখিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
- লিখিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
- সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ
- সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি
- সংবিধানের ধারণা ও গুরুত্ব
- আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ
- পৌরনীতি ও নাগরিকতা | পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরিসর বা বিষয়বস্তু
- পরিবার কি | পরিবারের শ্রেণিবিভাগ | পরিবারের কার্যাবলি
- রাষ্ট্র কাকে বলে? রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ও কি কি ?
৩. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি : জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এসব মূলনীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
৪. মৌলিক অধিকার : সংবিধান হলাে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা কী কী অধিকার ভােগ করতে পারব তা সংবিধানে উল্লেখ থাকায় এগুলাের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে । যেমন- জীবনধারণের অধিকার, চলাফেরার অধিকার, বাকস্বাধীনতার অধিকার, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, ধর্মচর্চার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি।
৫. সর্বজনীন ভােটাধিকার : বাংলাদেশের সংবিধানে সর্বজনীন ভােটাধিকার প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, পেশা ইত্যাদি নির্বিশেষে ১৮ বছর বয়সের এ দেশের সকল নাগরিক ভােটাধিকার লাভ করেছে।
৬. প্রজাতান্ত্রিক : সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণের পক্ষে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।
৭. সংসদীয় সরকার : বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার হাতে শাসনকার্য পরিচালনার ভার অর্পণ করা হয়। এ সরকারব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদ তার কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকে।
৮. এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র : বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মতাে কোনাে অঙ্গরাজ্য বা প্রাদেশিক সরকার নেই। জাতীয় পর্যায়ে একটিমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা সমগ্র দেশ পরিচালিত হয়।
৯. আইনসভা : বাংলাদেশের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট। এটি সার্বভৌম আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। এর নাম জাতীয় সংসদ। বর্তমানে জাতীয় সংসদ ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। সংসদের মেয়াদ ৫ বছর।
১০. সর্বোচ্চ আইন : বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে দেশের প্রচলিত কোনাে আইনের সংঘাত সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে সংবিধান প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ যদি কোনাে আইন সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যহীন হয়, তাহলে ঐ আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততােখানি বাতিল হয়ে যাবে।
১১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : বাংলাদেশের সংবিধানে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের বিধান রয়েছে।