দেশের ব্যাংকিং খাতে অবদান রাখার সুযােগ, সামাজিক মর্যাদা, আর্থিক নিরাপত্তা, উন্নত কর্মপরিবেশ ও দ্রুত পদন্নোতির সুবিধাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্যারিয়ার বহুল কাক্ষিত; তুমুল প্রতিযােগিতাপূর্ণও বটে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার বা সহকারী পরিচালক পদে নিয়ােগের জন্য যথাযথভাবে আবেদন করার পাশাপাশি প্রস্তুতির খুঁটিনাটি জানা থাকা প্রয়ােজন।
যেকোনাে বিভাগে/বিষয়ে পড়াশােনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরিতে আবেদন করা যায় কি না?
শিক্ষার্থীদের মনে শুরুতেই যে প্রশ্নটি উকি দেয় তা হলাে-‘আমি কি যেকোনাে বিষয়ে পড়াশােনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে আবেদন করতে পারব? এককথায় উত্তর হলাে-পারবেন, যদি বিজ্ঞপ্তির চাহিদা অনুযায়ী, যেকোনাে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি থাকে।
তবে, অবশ্যই সাতকের ফলাফল আবেদনের শেষ তারিখের আগেই প্রকাশিত হতে হবে। এক্ষেত্রে, মাধ্যমিকের পর থেকে অন্তত ২টিতে প্রথম শ্রেণি বা ন্যূনতম জিপিএ/সিজিপিএ থাকা। আবশ্যক এবং কোনাে পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণি থাকা চলবেনা।
স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশােনার বিষয় চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু প্রভাব ফেলে?
অনেকেই ভেবে থাকেন ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি বা ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পায় বা প্রতিযােগিতার। দৌড়ে এগিয়ে থাকে।
আসলে ‘একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কোনাে। বিষয় না। নিয়ােগ পরীক্ষা সবার জন্যই লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ পরীক্ষায় ভালাে করাটাই প্রধান বিবেচ্য। তবে সরাসরি ব্যাংকিং পেশা সংশ্লিষ্ট বিষয় পড়াশােনার কারণে কেউ যদি পরীক্ষায়। ভালাে করেন বা মৌখিক পরীক্ষায় ভালাে করেন সেটা ভিন্ন কথা।
ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড’-এর হয়েও এ ব্যাংকের চাকরিতে যােগদানের পর পেশাগত পড়াশােনার সুযোগ কতটুকু?
স্নাতক পর্যায়ে পড়াশােনার বিষয় ভিন্ন হওয়ার কারণে চাকরির শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও তা কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি পেশা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর পড়াশােনা। ওপ্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযােগ আছে। যেমন-বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার পর ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এ পূর্ণকালীন এমবিএম করার সুযােগ রয়েছে।
এছাড়া দেশের বাইরে বিভিন্ন সংস্থার বৃত্তির আওতায় স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রেষণে বা শিক্ষা ছুটিতে মাস্টার্স ও পিএইচডি করাও সম্ভব। তাছাড়া ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যও ব্যাংক ও অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে পড়াশােনা করতে হয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির নিয়ােগ পরীক্ষা কয় ধাপে এবং কীভাবে অনুষ্ঠিত হয়?
সাধারণত তিনধাপে নিয়ােগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নম্বর বণ্টনে ভিন্নতা থাকলেও গুরুত্ব বিবেচনায় প্রত্যেকটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ। সব নিয়ােগ প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপ নকআউট ভিত্তিক প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এ অংশে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি অংশ থেকে সাধারণত ৮০-১০০টি প্রশ্ন করা হয়।
প্রিলিমিনারি ধাপে উত্তীর্ণ হতে পারলেই কেবল ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযােগ পাওয়া যায়। লিখিত অংশে বাংলা ও ইংরেজিতে রচনা, সংক্ষিপ্ত অনুবাদ, প্যাসেজ থেকে প্রশ্নোত্তর, ভুল সংশােধনের ওপর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষায় নম্বর বিচারে এগিয়ে থাকলেই কেবল মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পাবেন। নিয়ােগ পরীক্ষার শেষধাপে ভালাে করতে পারলে লিখিত অংশের নম্বরসহ চুড়ান্ত মনােনয়ন তালিকায় স্থান পেতে পারেন।
পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কখন থেকে কীভাবে পড়াশােনা শুরু করব?
এককথায় এখনই শুরু করুন। এজন্য সবচেয়ে সহজ পথ হলাে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন দেখে পড়াশােনা শুরু করে দেওয়া। অবশ্য যারা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন তাদের বিষয়টা আলাদা; তারা হাতে সময় নিয়ে বিষয়ভিত্তিক পড়াশােনা চালিয়ে যেতে পারেন।
যাদের হাতে সময় কম, একাডেমিক পড়াশােনা কিংবা অন্যকোনাে, চাকরিতে কর্মরত তারা শুরুতেই বিগত বছরের প্রশ্নগুলাে দেখে এগােতে পারেন। মানসম্মত বইয়ের পাশাপাশি নিয়মিত ইংরেজি ও বাংলা দৈনিকের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাতাসহ সাম্প্রতিক কলামগুলাে নিয়মিত পড়লে তথ্যজ্ঞান বাড়ার পাশাপাশি বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়বে।
এছাড়া বাজেট, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, পরিসংখ্যান এবং বিভিন্ন সূচক-রিপাের্ট সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। শুভ কামনা সবার জন্য।