আমরা আমাদের চারপাশে অনেক রকম গতি দেখতে পাই, কোনাে কিছু নড়ছে, কোনাে কিছু কাঁপছে, কোনাে কিছু ঘুরছে, কোনাে কিছু সরে যাচ্ছে—এই সবই হচ্ছে নানা রকম গতির উদাহরণ। সম্ভাব্য গতির কোনাে শেষ নেই কিন্তু আমরা ইচ্ছে করলে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ গতির কথা আলাদা করে। বলতে পারি।
এটি সবচেয়ে সহজ গতির উদাহরণ। কোনাে কিছু যদি সরলরেখায় যায় তাহলে তার গতিটি হচ্ছে সরলরৈখিক গতি। কোনাে কিছুকে সমতলপৃষ্ঠে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলে সেটা সরলরেখায় যেতে থাকে। একটা বলকে উপর থেকে ছেড়ে দিলে সেটা সােজা নিচের দিকে পড়ে, কাজেই সেটাও রৈখিক গতি।
কোনাে কিছু যদি একটা নির্দিষ্ট বিন্দুর সমদূরত্বে থেকে ঘুরতে থাকে তাহলে সেটাকে বলে ঘূর্ণন গতি। বৈদ্যুতিক পাখা, ঘড়ির কাঁটা এগুলাে ঘূর্ণন গতির উদাহরণ হলেও চমকপ্রদ একটা উদাহরণ হচ্ছে আকাশের চাঁদ। চাঁদকে কোনাে কিছু দিয়ে পৃথিবীর সাথে বেঁধে রাখা নেই তবু এটা পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে, শুধু তাই নয়, এটা টুপ করে পৃথিবীতে পড়েও যাচ্ছে না!
কোনাে কিছু যদি এমনভাবে চলতে থাকে যেন বস্তুর সকল কণা একই সময় একই দিকে যেতে থাকে তাহলে সেটা হচ্ছে চলন গতি। আমরা আমাদের চারপাশে মাঝে মাঝে এরকম অনেক উদাহরণ দেখতে পাই। কোনাে কিছু যখন সােজা (রৈখিক গতি) যায় তখন তার উদাহরণ দেখা খুব সহজ। গাড়ির ঘূর্ণায়মান চাকা বিবেচনায় না আনলে সােজা এগিয়ে যাওয়া একটা গাড়ি চলন গতির উদাহরণ, তখন গাড়ির প্রতিটি বিন্দু একই সময় একই দিকে একই দূরত্ব অতিক্রম করছে।
চলন গতি সােজা হতেই হবে এমন কোনাে বাধ্যবাধকতা নেই কিন্তু আঁকাবাঁকা পথে চলন গতির উদাহরণ সহজে পাওয়া যাবে না। একটা প্লেনের প্রতিটি বিন্দুকে একই গতিপথে যেতে হলে সেটিকে কীভাবে যেতে হবে দেখানাে হয়েছে। দেখেই বুঝতে পারছ আঁকাবাঁকা চলন গতি পাওয়া ও কেন এত কঠিন।
কোনাে গতিশীল বস্তু যদি নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি নির্দিষ্ট বিন্দু দিয়ে একই দিকে একইভাবে অতিক্রম করে তাহলে সেটাকে পর্যায়বৃত্ত গতি বলা যায়। আমাদের হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন পর্যায়বৃত্ত কারণ সেটি নির্দিষ্ট সময় পর পর একইভাবে একই দিকে স্পন্দিত বা গতিশীল হয়। পর্যায়বৃত্ত গতি বৃত্তাকার (ফ্যানের পাখা), উপবৃত্তাকার (সূর্যকে ঘিরে হ্যালির ধূমকেতুর কক্ষপথ), কিংবা সরলরৈখিক (স্প্রিংয়ে ঝুলিয়ে রাখা দুলতে থাকা বস্তু) হতে পারে। ঘূর্ণন গতি একটি বিশেষ ধরনের পর্যায়বৃত্ত গতি।
একটি বিশেষ ধরনের পর্যায়বৃত্ত গতি হচ্ছে সরল স্পন্দন গতি। স্পন্দন গতির বেলায় একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর দুই পাশে বস্তুটি স্পন্দিত হয়। বস্তুটি একেবারে স্থির অবস্থা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে গতিশীল হয়। কেন্দ্রবিন্দুতে সর্বোচ্চ গতিতে পৌঁছায় তখন এর গতি কমতে থাকে। গতি কমতে কমতে এটি এক সময় থেমে যায় তখন এটি গতিপথ পরিবর্তন করে বিপরীত দিকে গতিশীল হয়। বিপরীত দিকে সর্বোচ্চ গতিশীল হওয়ার পর আবার এর গতি কমতে থাকে, এক সময় পুরােপুরি থেমে আবার আগের দিকে ধীরে ধীরে গতিশীল হয় এবং এভাবে চলতেই থাকে।
আমাদের চারপাশে স্পন্দন গতির অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। স্প্রিং থেকে দুলিয়ে দেওয়া একটা বস্তুর গতি হচ্ছে স্পন্দন গতি। দোলনায় দুলতে থাকা শিশু কিংবা ঘড়ির পেন্ডুলাম এর উদাহরণ।
আমরা যখন কথা বলি তখন বাতাসের অণু এই গতি দিয়ে শব্দকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমরা এতক্ষণ বিশেষ কয়েক ধরনের গতির কথা বলেছি, কিন্তু এই গতিগুলাের কারণটি কোথাও বলিনি। পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে যে, এটি শুধু যে বস্তুর বিচিত্র গতির কারণটি খুঁজে বের করবে তা নয় এর গতিটি সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে।
তুমি কি গতির কারণটি অনুমান করতে পারবে?
Leave a Comment