বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট নিয়ােগ প্রস্তুতির ধারাবাহিক আলােচনায় আমাদের আজকের বিষয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। বাংলাদেশের আকাশ সীমা সুরক্ষার অতন্দ্রপ্রহরী এই বাহিনী সম্মান, আকর্ষণীয় সুযােগ-সুবিধা এবং রােমাঞ্চকর ক্যারিয়ারের পাশাপাশি দেশ সেবার সুযােগ পাওয়া যায় বলে বিমান বাহিনীতে ক্যারিয়ার গড়া হাজারাে তরুণ-যুবকের প্রাণের স্বপ্ন।
গঠনের ইতিহাস
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ-কালে রয়েল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের বিমান ও অন্যান্য সম্পদ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। রয়েল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের সবগুলি প্রশিক্ষণ স্থাপনাই ছিল পাকিস্তান ভূখণ্ডের মধ্যে। প্রায় সব মুসলিম বিমান সেনাই পাকিস্তানে চলে আসে এবং পাকিস্তান এয়ার ফোর্সে যােগ দেয়। তাদের মধ্যে বেশ কিছু বাঙালি বিমান সেনাও ছিলেন এবং তাদের কেন্দ্র করেই পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে বাঙালি সেনাদল গড়ে ওঠে।
আরো পড়ুন : প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কিত বিগত পরীক্ষায় আসা প্রশ্নাবলি
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অধিকাংশ বাঙালি সদস্য বাহিনী ত্যাগ করে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ একটি অটার বিমান, একটি ড্যাকোটা বিমান ও একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার এবং পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পক্ষ ত্যাগকারী বাঙালি বৈমানিক, কারিগরি পেশার বিমানসেনা ও অসামরিক বৈমানিকদের সমন্বয়ে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে ‘কিলাে ফ্লাইট’ নামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক অবদান এবং আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৬ জন বীর উত্তম, ১ জন বীর বিক্রম এবং ১৫ জন সদস্যকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
ঘাঁটিসমূহ | |
নাম | অবস্থান |
বিএএফ ঘাটি জহুরুল হক | চট্টগ্রাম |
বিএএফ ঘাটি খাদেমুল বাশার | ঢাকা সেনানিবাস |
বিএএফ ঘাটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান | যশাের |
বিএএফ ঘাটি বঙ্গবন্ধু | কুর্মিটোলা |
বিএএফ ঘাটি পাহাড় কাঞ্চনপুর | টাঙ্গাইল |
বিএএফ ঘাটি কক্সবাজার |
কক্সবাজার |
আরো পড়ুন : আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস
একাডেমি
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি (BAEA) একটি প্রশিক্ষণ ও সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি যশাের এর মতিউর রহমান এয়ার ফোর্স বেস-এ অবস্থিত। ১৯৭৪ সালের নভেম্বরে ঢাকার কুর্মিটোলায় বিএএফ ক্যাডেটস ট্রেনিং ইউনিট (CTU) নামে একাডেমিটির কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে CTU যশােরে স্থানান্তরিত হয়। সময়ের ক্রমবর্ধমান প্রয়ােজনের সাথে ১৯৮২ সালের এপ্রিলে CTU কে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। একাডেমি (BAFA) হিসেবে পুনঃনামকরণ করা হয়। নতুন নিয়ােগ প্রাপ্ত ক্যাডেটরা তিন বছরের প্রশিক্ষণের পর বিভিন্ন শাখায় কমিশন লাভ করে।
জাদুঘর
বিমান বাহিনী জাদুঘর ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম বিমান জাদুঘর। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস, সাফল্য ও উন্নয়নের ক্রমবিকাশকে সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ এ জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়।
FACT FILE |
|
নারী কর্মকর্তা যােগদান
নারীরা কর্মকর্তা হিসেবে ২০০০-এর দশক থেকেই বিমান বাহিনীতে যােগ দিতে পারেন। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ দেশের প্রথম বৈমানিক হিসেবে দুইজন নারী কর্মকর্তা নাইমা হক এবং তামান্না-ই লুতফী যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে উড়েন। ২৫ নভেম্বর ২০২০ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে প্রথমবারের মতাে ৬৪ জন নারী বিমানসেনা হিসেবে প্রাথমিক রিন্ট প্রশিক্ষণ শেষ করে। দেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে প্রথম নারী। বৈমানিক হিসেবে ‘সাের্ড অব অনার’ পান ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদ।
আরো পড়ুন : পদ্মা সেতু সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ যত তথ্য
লিভিং ঈগল
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্য গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম ‘লিভিং ঈগলস’ স্বীকৃতি পান। বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে অনন্য সব অর্জনের স্বীকৃতি। হিসেবে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং। ঈগলস’ এর একজন হিসেবে তাকে এ স্বীকৃতি দেয়। তিনি একমাত্র । সামরিক পাইলট, যিনি যুদ্ধে চারটি বিমান বাহিনীর (বাংলাদেশ, জর্ডান, ইরাক, পাকিস্তান) জন্য কাজ করেন। সাইফুল আজম একক ব্যক্তি হিসেবে। আকাশপথের যুদ্ধের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করার রেকর্ডটিও অর্জন করেন।
৮৭ BAFA কোর্স |
|