চাকরি প্রত্যাশী আবেদনকারীর শিক্ষা, দক্ষতা এবং কর্ম-অভিজ্ঞতার আনুষ্ঠানিক উপস্থাপনই হলাে জীবনবৃত্তান্ত বা Curriculum Vitae (CV)। চাকরিপ্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের প্রথম সুযােগ হলাে জীবনবৃত্তান্ত। তাই একটি ভালাে সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত সঠিকভাবে প্রস্তুত করা অনেক জরুরি।
আদর্শ জীবনবৃত্তান্তের বৈশিষ্ট্য
একটি আদর্শ জীবনবৃত্তান্তের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটি যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত হবে ও সকল তথ্য স্পষ্ট করে দেওয়া থাকবে। ভাষার ব্যবহার হবে খুব সাবলীল ও অর্জিত দক্ষতাগুলাে ভালােভাবে উল্লেখ করতে হবে।
শিরােনাম
সিভির প্রথম অংশে প্রার্থীর মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক সনদপত্রে যে নাম আছে সে অনুসারে, পুরােনাম লিখতে হবে। ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে স্পষ্ট কিন্তু সংক্ষিপ্ত আকারে লিখতে হবে যেখানে প্রার্থীকে চিঠির মাধ্যমে পাওয়া যাবে। এর সাথে দিতে হবে মােবাইল নম্বর এবং ই-মেইল এড্রেস।
আরো পড়ুন : সফল মানুষদের সাধারণ ১৫টি বৈশিষ্ট্য
পেশাগত লক্ষ্য
যে পদে আবেদন করবেন, তার সাথে সম্পৃক্ত রেখে আপনি কোম্পানিকে কী দিতে পারবেন সেটার ওপর গুরুত্বারােপ করে লিখতে হবে। এ অংশে ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার লক্ষ্য, আপনার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরবেন।
শিক্ষাগত যােগ্যতা
এ অংশে আপনার শিক্ষাগত যােগ্যতার বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। ডিগ্রির নাম, বিষয়, ফলাফল, প্রতিষ্ঠান, সময়কাল সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখতে হবে। সেক্ষেত্রে সম্প্রতি যে পরীক্ষায় পাস করেছেন সেটা দিয়ে শুরু করে ক্রমপর্যায়ে বাের্ডের পরীক্ষা পর্যন্ত লিখুন। কোনাে বৃত্তি, পুরস্কার বা শিক্ষাগত সম্মান না পেয়ে থাকলে উল্লেখ করুন।
কর্মসংস্থানের ইতিহাস
এ অংশটিতে আপনি যদি পূর্বে চাকরি করে থাকেন তাহলে সে সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতে পারেন। আপনি পূর্বে কোন পদে কতদিন কাজ করেছেন, তা উল্লেখ করুন।
বিশেষ যােগ্যতা
শিক্ষাগত যােগ্যতা ছাড়া আপনার অন্যান্য যােগ্যতাসমূহ এ অংশে উল্লেখ করতে হবে। কম্পিউটারের দক্ষতা এখনও প্রতিটি চাকরির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কম্পিউটারে যে যে দক্ষতা আছে, সেগুলাে সংক্ষেপে তুলে ধরবেন। এছাড়াও যে পদের জন্য আবেদন করেছেন তা মাথায় রেখে অন্য কোনাে বিষয়ে যদি আপনি পারদর্শী হয়ে থাকেন তা সংক্ষেপে যুক্ত করুন এ অংশে।
আরো পড়ুন : নেতৃত্বে দক্ষতা লাভের উপায়
ব্যক্তিগত তথ্য
এ অংশে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, ধর্ম, জাতীয়তা, বৈবাহিক অবস্থা এবং রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করুন।
ছবি যুক্ত করা
জীবনবৃত্তান্তে আপনি যে ছবি ব্যবহার করবেন সেটি অবশ্যই সদ্য তােলা হতে হবে। ছবিতে আপনার চেহারা ভালাে করে বােঝা যায় এমন ছবি ব্যবহার করুন।
Mentor’s Speech |
James Alexander Saymour Innes একজন ব্রিটিশ উদ্যোক্তা ও বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত পরামর্শক। নিখুঁতভাবে সিভি লেখার জন্য The CV Book তার একটি বিখ্যাত বই। এ বইয়ে চাকরি প্রার্থীর ইন্টারভিউ পাওয়ার সম্ভাবনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সিভি লেখার বাধ্যতামূলক বিষয়গুলাে লেখা ও উপস্থাপন নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। সিভির সাধারণ ভুলগুলি এড়ানাের জন্য কোন কোন বিষয়ে সতর্ক হতে হবে তা এ বইয়ে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। |
ভাষাগত দক্ষতা
কোন কোন ভাষার ওপর আপনার দখল আছে অর্থাৎ কোন কোন ভাষায় আপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলতে ও লিখতে পারেন সেটি এ অংশে উল্লেখ করতে পারেন। ভাষাগত দক্ষতা আপনাকে একধাপ এগিয়ে রাখতে পারে। তাই এ অংশে আপনার ভাষাগত দক্ষতা সংক্ষেপে উল্লেখ করুন।
প্রশিক্ষণ
যেসকল বিষয়ে বা কাজে আপনি ট্রেনিং প্রাপ্ত সেসকল তথ্য সুন্দরভাবে জীবনবৃত্তান্তে উপস্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নিয়ােগকর্তা সবসময় অভিজ্ঞতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
আরো পড়ুন : এইচএসসি’র পর ক্যারিয়ার ভাবনা
স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ
আপনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যে কাজ বা সংগঠনে যুক্ত তার তথ্য লিখতে হবে। কতদিন ধরে কাজ করছেন, কোন পদে কাজ করছেন তা লিখুন।
রেফারেন্স
সিভিতে রেফারেন্স অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার দেওয়া তথ্যগুলাে সম্পর্কে যেন দ্বিতীয় কোনাে ব্যক্তি থেকে জানা যায়, সেজন্যই এ রেফারেন্সের ব্যবস্থা। আপনাকে চেনেন এমন দুজন বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজের শিক্ষককে জানিয়ে তাকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করুন। তাদের নাম, কোন পদে কাজ করেন, ফোন নম্বর ইত্যাদি সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
স্বাক্ষর ও তারিখ
সিভিতে উল্লেখ্য সব তথ্য সঠিক ও নির্ভুল তা লিখতে হবে। লেখার নিচে আপনার স্পষ্ট স্বাক্ষর ও তারিখ থাকতে হবে। নিয়ােগকর্তা আপনার তথ্য যাচাই করার আইনগত অধিকার রাখেন, তাই কোনাে ভুল তথ্য দেবেন না।