ভূমিক্ষয়
মুষলধারায় বৃষ্টির সময় মাটির দিকে লক্ষ কর । দেখবে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা যখন ভূপতিত হয়, তখন বৃষ্টির আঘাতে ছােট ছােট গর্তের সৃষ্টি হয় আর এতে পানি ঘােলা হয়। কাদামিশ্রিত ঘােলা পানি অপেক্ষাকৃত নিচের দিকে ধাবিত হয়। এভাবে বৃষ্টিপাতের সময় কাদামিশ্রিত ঘােলা পানির মাধ্যমে ভূমিক্ষয় হয়। আবার ঝড়-বাতাস বা ঘূর্ণিঝড়ের দিকে লক্ষ কর। দেখবে বাতাসের বেগের সাথে মাটির কণা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে যায়। বাইরে থাকলে তােমার চোখে মুখেও মাটির কণাগুলাে আঘাত করে। অর্থাৎ বাতাস দ্বারাও ভূমিক্ষয় হয় ।এখন হয়তাে বলতে পারবে যে বিভিন্ন কারণে জমির মাটির উপরিভাগ হতে মাটির কণা চলে যাওয়াকে ভূমিক্ষয় বলে।
ভূমিক্ষয় প্রক্রিয়ায় একস্থানের মাটি ক্ষয় হয়ে অপেক্ষাকৃত নিম্নতম স্থানে জমা হয়। ভূমিক্ষয়ের প্রধান কারণগুলাে হচ্ছে বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিবাত্যা, নদীর স্রোত, বনজঙ্গল পরিষ্কার করে চাষাবাদ, পাহাড়ের ঢালে চাষাবাদ ইত্যাদি। ক্রমাগত বৃষ্টিপাতের ফলে মাটি যখন পানি শােষণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন অতিরিক্ত পানি মাটির উপরের স্তরের কিছু মৃত্তিকা কণা বহন করে নিম্ন দিকে প্রবাহিত হয়। পানি প্রবাহের সাথে ভূমির উপরি স্তরের মাটি আলগা হয় এবং নিম্নভূমিতে গিয়ে জমা হয়। তেমনি কর্ষিত জমি হতে বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমেও ধুলার আকারে মাটি দূরদূরান্তে চলে যায় । নদীর স্রোত নদী তীরের পাড় ভেঙে মাটি অন্যস্থানে বহন করে নিয়ে যায় ও চরাঞ্চল গড়ে তােলে। মানুষ যখন বন-জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে ফসলের আবাদ করে তখন ভূমি উন্মুক্ত হয়। আর গবাদিপশুও বিচরণ করে। এতে ভূমির ক্ষয় হয়। একইভাবে পাহাড়ের জঙ্গল কেটে পাহাড়ের ঢালে চাষাবাদ করে। বৃষ্টিপাতের জলস্রোত উপরের স্তরের মাটি উপত্যকায় পরিণত হয়।
ভূমিক্ষয়ের প্রকার
ভূমিক্ষয় দুই প্রকার। যথা: (১) প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয় ও (২) মনুষ্য কর্তৃক ভূমিক্ষয়। নিচে এগুলাের আলােচনা করা হলাে:
১। প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয় : প্রকৃতিতে ব্যাপকভাবে ভূমিক্ষয় হয় । ভূ-সৃষ্টির শুরু থেকেই এর ক্ষয় শুরু হয়েছে। দীর্ঘকালের এই ক্ষয়ের ফলেই নদীর মােহনায় সমুদ্রে চর সৃষ্টি হয়েছে বা দ্বীপ গড়ে উঠেছে। এই ভূমিক্ষয়ের ফলে পৃথিবীর অনেক অঞ্চল উর্বর হয়েছে, আবার অনেক র ক ম অঞ্চল অনুর্বর হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অনবরত ভূমিক্ষয়। হচ্ছে অথচ আমরা তা উপলব্ধি করি না ।
বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত প্রাকৃতিক কারণগুলাের মধ্যে অন্যতম। এগুলাে চলার পথে ভূ-পৃষ্ঠের মাটির কণা বহন করে নিয়ে যায়। এ জন্য যে পরিমাণ মাটির ক্ষয় হয় তা খুবই নগণ্য এবং দৃষ্টিগােচর হয় না। হয়তাে তাই ভূমির এই ক্ষয়কে বলা হয় স্বাভাবিক ক্ষয়। প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয় মাটি গঠন প্রক্রিয়ারই একটি অংশ বলে বিবেচিত হয়। মাটি গঠন ও ভূমিক্ষয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘকাল ভূমিক্ষয়ের ফলে কৃষিকাজ একটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে।
প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয়ের শ্রেণিবিভাগ
ভূমিক্ষয়কে প্রধানত দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা: ক. বৃষ্টিপাতজনিত ভূমিক্ষয় এবং খ. বায়ুপ্রবাহজনিত ভূমিক্ষয়।
ক. বৃষ্টিপাতজনিত ভূমিক্ষয় : বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশে ব্যাপক ভূমিক্ষয় হয়। এই ভূমিক্ষয়কে নিচের চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়;
- আস্তরণ ভূমিক্ষয়
- রিল ভূমিক্ষয়
- নালা বা গালি ভূমিক্ষয়
- নদী ভাঙন
নিচে এই ভূমিক্ষয়গুলাের আলােচনা করা হলাে
i) আস্তরণ ভূমিক্ষয় : যখন বৃষ্টির পানি বা সেচের পানি উঁচু স্থান থেকে ঢাল বেয়ে জমির উপর দিয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় তখন জমির উপরিভাগের নরম ও উর্বর মাটির কণা কেটে পাতলা আব্রণের বা আস্তরণের মতাে চলে যায়। একেই বলা হয় আস্তরণ ভূমিক্ষয়। বৃষ্টির ফলে যে ভূমিক্ষয় হয় তা সহজে চোখে পড়েনা । কিন্তু কয়েক বৎসর পর বােঝা যায় যে জমির উর্বরতা হ্রাস পেয়েছে। আর এর কারণ হলাে আস্তরণ ভূমিক্ষয়।
ii) রিল ভূমিক্ষয় : রিল ভূমিক্ষয় আস্তরণ ভূমিক্ষয়েরই দ্বিতীয় ধাপ। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে পানি বেশি হলে জমির ঢাল বরাবর লম্বাকৃতির রেখা সৃষ্টি হয়। যা অনেকটা হাতের রেখার মতাে। এই ছােট ছােট রেখা কালক্রমে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বড় হতে থাকে। বৃষ্টির পানির স্রোতধারায় উর্বর মাটি জমি থেকে স্থানচ্যুত হয় ফলে জমি উর্বরতা হারায় এবং কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারেও অসুবিধার সৃষ্টি করে।
iii) নালা বা গালি ভূমিক্ষয় : এই ভূমিক্ষয় আস্তরণ ভূমিক্ষয়ের তৃতীয় ধাপ। অর্থাৎ রিল ভূমিক্ষয় থেকেই নালা বা গালি ভূমিক্ষয়ের উদ্ভব। দীর্ঘকাল ধরে রিল ভূমিক্ষয়ের ফলে এর ছােট ছােট নালাগুলাে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর ফসলের মাটিও বেশি ক্ষয় হতে থাকে । একসময় এগুলাে নর্দমা বা ছােট নদীর মতাে দেখায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যত বেশি হবে নালা বা গালি ভূমিক্ষয় ততই বেশি হবে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে এরূপ ভূমিক্ষয় দেখা যায়।
iv) নদীভাঙন : নদীভাঙন বাংলাদেশের ভূমিক্ষয়ের একটি উল্লেখযােগ্য কারণ। চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ, গােয়ালন্দ প্রভৃতি অঞ্চলে প্রতি বছরই। নদীভাঙনে শত শত হেক্টর জমি নদী গর্ভে বিলীন। হচ্ছে। বর্ষার শুরুতে কিংবা বর্ষার শেষে নদীতে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে নদীতীরের কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
খ) বায়ু প্রবাহ জনিত ভূমিক্ষয় :
গতিশীল বায়ু প্রবাহ কর্তৃক এক স্থানের মাটি অন্যত্র বয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে বাত্যাজনিত ভূমিক্ষয় বলে । যেসব এলাকা সমতল, তুলনামূলকভাবে গাছপালা কম এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কম, সেসব এলাকায় বাত্যাজনিত কারণে ভূমিক্ষয়ের প্রকোপ দেখা যায়। বেলে ও বেলে দোআঁশ মাটি আলগা ও হালকা । কাজেই প্রবল বেগে বায়ুবাহিত হলে এসব মাটি সহজেই উড়ে যায়। আর যে স্থানে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ একেবারেই কম সে স্থানের বাত্যাজনিত ভূমিক্ষয় আরও বেশি। মরুভূমিতে বায়ুপ্রবাহ উর্বর অঞ্চলে বালি নিক্ষেপ করে অনুর্বর করে তােলে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে দিনাজপুর – রাজশাহী অঞ্চলে চৈত্র – বৈশাখ মাসে বায়ু প্রবাহজনিত ভূমিক্ষয়ের প্রকোপ সামান্য দেখা যায় । এর ফলে বায়ু প্রবাহে আবাদি জমির উর্বরতা কমে যায়।
২। মনুষ্য কর্তৃক ভূমিক্ষয় : মানুষের বাঁচার জন্যে খাদ্যের প্রয়ােজন। খাদ্য উৎপাদনের জন্য মানুষ ( মাটিকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে আসছে কৃষি সভ্যতার – সূচনালগ্ন থেকে। ভূমিকৰ্ষণ, পানি সেচ, পানি নিষ্কাশন। ইত্যাদি কাজ কৃষিকাজের মূল অংশ। এ কাজগুলাে দ্বারা মাটিকে প্রতিনিয়ত উৎপীড়ন করা হচ্ছে। ফলে ভূমিগুলাে প্রাকৃতিক শক্তির তথা বৃষ্টি ও বাতাসের নিকট উন্মােচিত করছে এবং ক্ষয় হচ্ছে। মাটিকে যত ব্যবহার করা হবে ততই এর ক্ষয় হতে থাকবে। অনাচ্ছাদিত মাটি বৃষ্টি, বায়ু, বন্যা, এগুলাের আক্রমণের শিকার । পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষের ফলে বা ধাপ করে চাষ করার ফলে মাটি আলগা হয়ে যায়। মুষলধারায় বৃষ্টির ফলে সেখানকার মাটিতে পাহাড়ি ধস নামে। এতে বিপর্যয় আকারে ভূমিধস হয়। শুধু তাই নয়- এতে জান মালেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাছাড়া গবাদিপশু বিচরণকালে অনেক ধুলাবালি উড়ে যায়। মেঠোপথে চলার সময়ও ধুলাবালি উড়ে।
ভূমিক্ষয়ের ক্ষতির বিভিন্ন দিক
ভূমিক্ষয়ের ক্ষতিকারক দিকগুলাে নিম্নরূপ:
- ভূমিক্ষয়ের কারণে জমির পুষ্টিসমৃদ্ধ উপরের স্তরের মাটি অন্যত্র চলে যায়। ফলে মাটির উর্বরতার ব্যাপক অপচয় হয়।
- ভূমিক্ষয়ের ফলে মাটিতে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে ফসলের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে।
- ক্রমাগত ভূমিক্ষয়ের কারণে নদী-নালা, হাওর-বিল ভরাট হয়ে যায়। ফলে দেশে প্রায়ই বন্যার প্রাদুর্ভাব ঘটে। এতে ফসল, পশুপাখি, বাড়িঘরের অনেক ক্ষতি হয়।
- ভূমিক্ষয়ের বিরাট অংশ নদীতে জমা হয়। এতে নদীর গভীরতা কমে যায় এবং নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
- প্রবাদ আছে যে উর্বর মাটির ক্ষয় মানে সভ্যতার ক্ষয়। ভূমিক্ষয়ের কারণ অনেক কারণেই ভূমিক্ষয় হয় ।
উপরের ভূমিক্ষয়ের প্রকার থেকেও অনুধাবন করা যায় ভূমিক্ষয়ের কারণ কী কী । নিচে ভূমিক্ষয়ের কারণগুলাে উল্লেখ করা হলাে।
- বৃষ্টিপাত
- ভূমি ঢাল
- মাটির প্রকৃতি
- শস্যের প্রকৃতি
- জমি চাষের পদ্ধতি
- নিবিড় চাষ
- বায়ু
মানুষের কার্যাবলি
বৃষ্টিপাত : বৃষ্টিপাত চাষাবাদের জন্য যেমন ভালাে আবার ভূমিক্ষয়ের প্রধান কারণ। বৃষ্টিপাতের তীব্রতা, সংখ্যা ও পরিমাণ ভূমিক্ষয়কে প্রভাবিত করে। মুষলধারায় বৃষ্টি হলে বৃষ্টির ফোঁটা বড় হয় এবং মাটিতে সজোরে আঘাত করে আর এতে মাটির কণা আলগা হয়। মাটি যখন পানি শােষণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন অতিরিক্ত পানি একটি প্রবাহ সৃষ্টির মাধ্যমে উপর থেকে অপেক্ষাকৃত নিচের দিকে ধাবিত হয়। যাওয়ার পথে পানির সঙ্গে আলগা ও নরম মাটি স্থানান্তরিত হয়। পানির বেগ যত বেশি হবে মাটির ক্ষয়ও তত বেশি হবে।
ভূমির ঢাল : অধিক ঢালু মাটিতে অধিক বেগে পানি নিচের দিকে ধাবিত হয়। এজন্য পার্বত্য এলাকায় সমতল এলাকার চেয়ে ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এলাকায় সাধারণত জুম চাষ করা হয়। ফলে জুম চাষে এলাকার মাটি আলগা হয় এবং বৃষ্টিপাতের ফলে এই মাটি বৃষ্টির পানির সাথে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে চলে যায়। কয়েক বছরের মধ্যে জুম চাষের স্থানটি অনুর্বর হয়ে পড়ে।
মাটির প্রকৃতি : ভূমিক্ষয় মাটির কাঠামাে, বুনট ও জৈব পদার্থের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে। বেলেদোআঁশ মাটি অধিক সচ্ছিদ্রতা বলে সম্পূর্ণ বৃষ্টির পানি সহজেই শুষে নিতে পারে। তাই এই মাটির ভূমিক্ষয় কম। কিন্তু কাদা ও ভারী মাটি সচ্ছিদ্রতা কম থাকায় এর শােষণক্ষমতাও কম। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেও মাটির উপরে পানি জমে যায় এবং ভূমির ক্ষয় করে মাটি নিচের দিকে ধাবিত হয়।
চাষ পদ্ধতি ও শস্যের প্রকৃতি : পাহাড়ি জমিতে ঢালের আড়াআড়ি চাষ না করে যদি ঢালের বরাবর চাষ করা হয়, তবে বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিক্ষয় হয়। খাড়া পাহাড়ের গায়ে ধাপ সৃষ্টি করে ফসলের চাষ করা হয় । কিন্তু যদি তা না করে সাধারণভাবে জমি চাষের চেষ্টা করা হয় তবে পাহাড়টি ভূমিধস বা ভূমিক্ষয়ের শিকার হয়। জমি ঘন ঘন চাষ করলেও ভূমিক্ষয় হয়। যেসব ফসল মাটি ঢেকে রাখে, সেগুলাে মাটিকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। যেমন চিনাবাদাম, মাসকলাই, খেসারি ইত্যাদি। কিন্তু আখ, ভুট্টা, ধান, গম ইত্যাদি প্রাথমিক পর্যায়ে মাটিকে ঢেকে রাখেনা। ফলে ভূমিক্ষয় হয়।
বায়ু প্রবাহ : যে অঞ্চলে গাছপালা কম সে অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ দ্বারা ভূমিক্ষয় হয়। বাংলাদেশের রাজশাহী দিনাজপুর অঞ্চলে এরূপ ভূমিক্ষয় হয়।
মানুষের কার্যাবলি : ভূমিক্ষয়ের প্রকৃত কারণ মানুষ নিজে। ক্ষুধার অন্ন যােগাড় করতে মানুষ জঙ্গল পরিষ্কার করতে শুরু করে। তাতে মাটির উপরিভাগ উন্মুক্ত হয় এবং ভূমিক্ষয়েরও সূচনা হয়। তাছাড়া মানুষ ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নির্মাণ করেও কৃষিজমি বিনষ্ট করছে এবং ভূমিক্ষয় করছে।
ভূমিক্ষয়রােধের কার্যকরী উপায়সমূহ
কৃষিকাজের অন্যতম একটি প্রযুক্তি হলাে ভূমিক্ষয়রােধ করা। এই প্রযুক্তি ভূমিক্ষয়রােধের কতগুলাে পদ্ধতির সমষ্টি। পদ্ধতিগুলাে হচ্ছে
পানিপ্রবাহ হ্রাসকরণ
- ভূমিক্ষয় কমাতে পানি প্রবাহের বেগ কমানাে জরুরি। বিভিন্নভাবে পানি প্রবাহের বেগ কমানাে যায় । যথা, বাঁধ বা আইল দিলে পানির বেগ কমে আসে, মাটি পানি শােষণের সময় পায় ও ভূমিক্ষয় রােধ হয়।
- রিল ভূমিক্ষয়ের ফলে যে ছােট ছােট নালার সৃষ্টি হয় তা ভরাট করে সমান করে দিলে পানির বেগ কমে যাবে এবং ভূমিক্ষয় রােধ হবে।
- বড় নালার মধ্যে আগাছা জন্মাতে দেওয়া এবং শেষ প্রান্তে খুঁটি পুতে তারের জাল বাঁধলে পানির বেগ কমে যাবে।
- উপরন্তু তারের জালের মূলে খড়কুটা ফেললে পানির বেগ একেবারেই মন্থর হবে এবং ভূমিক্ষয় রােধ হবে।
পানি নিষ্কাশনের সুবন্দোবস্তকরণ
জমিতে পানি জমা থাকলে এর সাথে বৃষ্টির পানি যােগ হলে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয় এবং জমির মাটি আলগা হয়ে সরে যায়। কাজেই কৃষিজমি কয়েক খণ্ডে ভাগ করে প্রতি খণ্ড হতে পানি সরালে ভূমির এরূপ ক্ষয়রােধ করা সম্ভব হবে।
জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধিকরণ
জমিতে জৈব পদার্থ অধিক মাত্রায় প্রয়ােগ করলে মাটির দানাবন্ধন ভালাে হয়। বৃষ্টির পানি মাটিকে ক্ষয় না করে সহজেই নিচের দিকে চলে যেতে পারে। যে জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম সে জমির মাটি সহজেই ক্ষয় হয়।
পাহাড়ে ধাপে ধাপে ফসল চাষ করা
জুম চাষের ফলে পাহাড়ের মাটি সহজেই আলগা হয় ও ভূমিক্ষয় হয় । জুম চাষ না করে যদি পাহাড়ের গায়ে চতুর্দিক ঘিরে সমতল সিঁড়ি বা ধাপ করে চাষাবাদ করা হয় তা হলে বৃষ্টির পানি পাহাড়ের মাটির ক্ষয় করতে পারবে না।
কন্টোর পদ্ধতিতে চাষ করা
এই পদ্ধতিতে পাহাড়ের ঢালের আড়াআড়ি সমম্বিত লাইনে জমি চাষ করা হয়। ঢালের আড়াআড়ি জমি চাষ হয় বলে বৃষ্টির পানির গতি কম হয়। মাটি স্থানান্তরিত না হয়ে ফসলের গােড়ায় আটকে থাকে।