১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগােতে হে মার্কেটে শ্রমজীবী মানুষ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় নামলে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শ্রমিক মারা যান। সেই ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর ১ মে সারা বিশ্বে পালিত হয় মহান মে দিবস। অকুতােভয় শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানাতেই আমাদের এ সংখ্যার বিশেষ আয়ােজন।
১৮৮৪-৮৫ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকা ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে সােচ্চার হয়ে উঠে। কিন্তু শ্রমিকদের এ দাবি মালিকপক্ষ উপেক্ষা করায় ১ মে ১৮৮৬ শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ, কাজের উন্নত পরিবেশ তৈরি করাসহ শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে ‘হে’ মার্কেটের শিল্প শ্রমিকেরা ধর্মঘটের ডাক দেন। এদিন শিকাগাে শহরকে কেন্দ্র করে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ শ্রমিক মিশিগান এভিনিউ-এর মিছিলে যােগদানের প্রস্তুতি নেয়।
আরো পড়ুন : Current Affairs May 2022 কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স মে ২০২২
৩ মে ধর্মঘট আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ দিনে ম্যাক করমিক নামের এক প্রতিষ্ঠানের ফসল কাটার । শ্রমিকরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শ্রমিক সভা : করে। সভা চলাকালীন পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়, যাতে ঘটনাস্থলে ৬ শ্রমিক নিহত ও বহু শ্রমিক আহত হয়। এর প্রতিবাদে ৪ মে শিকাগাের ‘হে’ মার্কেট চত্বরে বিশাল এক শ্রমিক সমাবেশ চলাকালীন একটি বােমা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের পর পুলিশবাহিনী শ্রমিকদের ওপর বেপরােয়া লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়।
সভায় উপস্থিত এক কিশাের শ্রমিক তখন তার গায়ের জামা খুলে রক্তে ভিজিয়ে লাল জামাটি উড়িয়ে দেয়। পতাকা হিসেবে তাই পৃথিবীতে আজও শ্রমিকদের পতাকাটি সেই কিশােরের রক্তে রাঙানাে লালে লাল। পরবর্তীতে ২১ জুন ১৮৮৭ বিচারের নামে এক প্রহসন শুরু হয়। ৯ অক্টোবর ঘােষিত হয় বিচারের রায়। যেখানে আরও ৬ জনকে ফাঁসি ও ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এর ফলে বিশ্বের শ্রমিকরা আরও ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে ও শিকাগাের এ আন্দোলন ক্রমশ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। দুনিয়ার মজদুর এক হও’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে বিশ্বের সকল শ্রেণির শ্রমিকই এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘােষণা করে। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্ৰম সংগঠনের (ILO) সম্মেলনে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় ৮ ঘণ্টা ও সপ্তাহে ১ দিন ছুটির ব্যবস্থা করে প্রথম শ্রম আইনটি তৈরি করা হয়।
দাস সমাজ থেকে বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজ পর্যন্ত শােষিত-নির্যাতিত শ্রমিক শ্রেণি, যাদের শ্রম, ঘাম আর রক্তে আধুনিক সভ্যতার বিকাশ, সেই শ্রমিক শ্রেণির অনেক ইতিহাসই আমাদের অজানা।
আরো পড়ুন : Recent General Knowledge Bangladesh and International Affairs
শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার দুর্বার আন্দোলনের এক রক্তস্নাত স্মৃতি। বিজড়িত দিনের সূচনা দিন এ মে দিবস। এরও আগে থেকে শুরু হওয়া অগ্নিমুখ শ্রম আন্দোলনকে তার বিজয়ী রূপদানে এক অদম্য শক্তি এনে দেয় ঐতিহাসিক এ দিন। সেদিনের স্মৃতিকে বুকে লালন করে শােককে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মানসিক শক্তি পেয়েছে সমগ্র বিশ্ব। তাই সকল শ্রমিক ভাইবােনদের প্রতি অকৃত্রিম ভালােবাসা এবং গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
Leave a Comment