টুকরো সংবাদ

তেল ও কয়লার পর বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহৃত জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস। বাংলাদেশে এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের আদ্যোপান্ত নিয়ে আমাদের এ আয়ােজন-

গ্যাস

আমাদের চারপাশে যতবস্তু আছে, তাপ্রধানত তিন ধরনের কঠিন, তরল ও বায়বীয়। সাধারণ তাপমাত্রায় যেসকল পদার্থ বায়বীয় অবস্থায় থাকে তাদেরকে গ্যাস বলা হয়। গ্যাসের উদাহরণ হলাে—H2,N2, CO2, CH4, ইত্যাদি। অন্যদিকে খনিতে প্রাপ্ত গ্যাসকে প্রাকৃতিক গ্যাস বলে। প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণত মাটির ১,৫০০-৪,০০০ ফুট নিচে অবস্থান করে। কূপ খননের মাধ্যমে উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল উপাদান মিথেন হলেও এর সাথে অল্প পরিমাণ ইথেন, প্রােপেন, উচ্চতর কার্বনের শিকল যুক্ত অংশ, কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, হাইড্রোজেন সালফাইড ও অন্যান্য পদার্থও থাকে।

ব্যবহার

শিল্প কারখানা, গৃহস্থালি কাজে, পরিবহন খাতসহ বিভিন্ন কাজে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ এবং সার উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এটি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের কারণ হলাে কোনাে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রাপ্যতা সহজলভ্য হলে এ গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন তুলনামূলক কম খরচে হয়।

তেল-গ্যাস ব্লক

তেল-গ্যাস ব্লক বলতে নির্দিষ্ট এলাকা অথবা খণ্ডাংশকে বােঝানাে হয়। যেখানে তেল বা গ্যাস অথবা এক ব্লকে তেল ও গ্যাস উভয়ই ভিন্নভিন্নভাবে থাকতে পারে।

রূপান্তরক্রিয়া

প্রাকৃতিক গ্যাসকে বিষ্মিতাপমাত্রা ও চাপে CNG (Compressed Natural Gas), LNG (Liquefied Natural Gas), LPG (Liquefied Petroleum Gas), পেট্রোল, ডিজেল, কেরােসিন এবং অকেটন ইত্যাদি পণ্যে রূপান্তর করা যায়।

গ্যাসে শীর্ষ দেশ

  • রিজার্ভ : রাশিয়া
  • উৎপাদন : যুক্তরাষ্ট্র
  • ব্যবহার : যুক্তরাষ্ট্র
  • আমদানি : জার্মানি
  • রপ্তানি : রাশিয়া

GECF : গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলাের ফোরাম

  • প্রতিষ্ঠা : ২০ মে ২০০১; তেহরান, ইরান।
  • GECF’র পূর্ণরূপ : Gas Exporting Countries Forum
  • GECFর সনদ গৃহীত হয়: ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮।
  • সদস্য দেশ : ১১টি— আলজেরিয়া, বলিভিয়া, মিসর, ইরান, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা, কাতার, রাশিয়া, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগাে ও নিরক্ষীয় গিনি।
  • সদর দপ্তর : দোহা, কাতার।

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস

বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস। ১৯১০ সালে দেশের ভূখণ্ডে প্রথম গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন ব্রা হয়। ১২ মে ১৯৫৫ সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় এবং ১৯৫৭ সালে প্রথম গ্যাস উত্তোলন হয়।

  • দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)।
  • পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধানে নিয়ােজিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ
  • পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রােডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (BAPEX)।
  • পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি, মজুত, বিপণন ও বিতরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (BPC)।
  • গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়াম পণ্য নিয়ন্ত্রণকরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন (BERC)।
  • প্রাকৃতিক গ্যাস বেশি ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
  • ঢাকায় সরবরাহকৃত গ্যাস আসে তিতাস গ্যাসক্ষেত্র থেকে।
  • প্রথম রান্নার জন্য গ্যাস সংযােগ দেওয়া হয় প্রখ্যাত লেখক শওকত ওসমানের বাসায় (১৯৬৮ সালে)।
  • শিল্প খাতে প্রথম গ্যাস সংযােগ দেওয়া হয় ১৯৬০ সালে (ছাতক গ্যাসক্ষেত্র থেকে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডে)।
  • প্রথম গ্যাস পাইপলাইনের নাম হরিপুর থেকে এনজিএফ : পাইপলাইন।
  • ঢাকার প্রথম গ্যাস পাইপলাইনের নাম তিতাস থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট।
  • বর্তমানে দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মােট ব্লক ৪৮টি; যার মধ্যে স্থলভাগে ২২টি।
  • পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২৮টি জেলায়— ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কিশােরগঞ্জ, নেত্রকোণা, জামালপুর, শেরপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নােয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, রাজশাহী ও ভােলা।
দেশের গ্যাস সেক্টর
বিষয় সংখ্যা/নাম
গ্যাসক্ষেত্র ২৮টি
উৎপাদনরত গ্যাসক্ষেত্র ২০টি
উৎপাদনরত মােট কৃপের সংখ্যা ১০৪টি
সর্বশেষ আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র জিকিগঞ্জ, সিলেট
বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র (মজুরে দিক থেকে) তিতাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
দৈনিক উৎপাদনে শীর্ষ গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা, হবিগঞ্জ

Related Post

Leave a Comment