আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
সামাজিক বিজ্ঞান

যৌতুক প্রথা, যৌতুক প্রথার কারণ ও প্রতিকার

যৌতুক প্রথা বাংলাদেশের সমস্যাগুলাের মধ্যে সর্বাধিক অমানবিক ও বেদনাদায়ক সমস্যা। হিন্দু সমাজে এর উৎপত্তি। হিন্দু আইনে কন্যারা পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না বিধায় পাত্রস্থ করার সময় নগদ অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রী দেওয়ার প্রথা বর্তমান। সময়ের পরিবর্তনে এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের পরিবর্তন হয়ে যৌতুক প্রথার রূপ লাভ করে। ইসলাম ধর্মে যৌতুক প্রথার প্রচলন নেই। কিন্তু হিন্দু সমাজের অনুকরণে মুসলিম সমাজে এ সর্বনাশা প্রথার অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

যৌতুক হল এমন একটি সামাজিক কু-প্রথা যাতে কন্যা পাত্রস্থ করার সময় কনে ও বরপক্ষের মধ্যে দরকষাকষির মাধ্যমে বরপক্ষকে নগদ অর্থ, দ্রব্যসামগ্রী বা অন্য কোনাে আর্থিক সুবিধা দানে কন্যাপক্ষকে বাধ্য করা হয়। যৌতুকের দাবীকে কেন্দ্র করে বিয়ের পর দাম্পত্য কলহ, স্ত্রী-নির্যাতন, স্ত্রী-হত্যা, বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। কন্যাদায়গ্রত দরিদ্র পিতামাতা যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে সর্বস্ব বিক্রি করে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। যৌতুকের লােভে বাংলাদেশে প্রায়ই অসামঞ্জস্য বিয়ে সংঘটিত হয়ে থাকে এবং আত্মহত্যার পেছনে যৌতুক প্রথা অনেকাংশে দায়ী।

যৌতুক প্রথার কারণ :

বাংলাদেশে যৌতুক প্রথার কারণগুলাে নিম্নে বর্ণনা করা হল

অর্থনৈতিক কারণ :

দারিদ্র্য যৌতুক দাবির অন্যতম প্রধান কারণ। পাত্রের আর্থিক দুরবস্থা থেকে মুক্তির জন্য অথবা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় কন্যাপক্ষের কাছে যৌতুক দাবি করা হয়।

পুরুষশাসিত সমাজে মহিলাদের প্রতি ঋণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি :

পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায় মহিলাদের সামাজিক মর্যাদা কম হওয়ায় যৌতুক প্রথার মাধ্যমে তা পূরণের হাতিয়ার হিসেবে এ প্রথা বিস্তার লাভ করেছে।

নারীদের পরনির্ভরশীলতা :

বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীদের কর্মসংস্থানের সুযােগ না থাকায় তারা পর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করে। এই পরনির্ভরশীলতা যৌতুক-প্রবণতা সৃষ্টির সহায়ক।

প্রতিষ্ঠা লাভের মনােভাব:

শিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত ছেলে ও তার অভিভাবকদের নগদ প্রাপ্তির লােভ এবং সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের উপায় হিসেবে যৌতুক প্রথাকে গণ্য করা হয়।

সামাজিক দুর্নীতির প্রভাব :

সামাজিক দুর্নীতি, কালাে টাকা, ঘুষ, চোরাকারবারি এবং অবৈধ টাকা যৌতুক প্রথা বিস্তারের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে দায়ী।

প্রতিকার :

বাংলাদেশ থেকে যৌতুক প্রথার ন্যায় অমানবিক অভিশপ্ত প্রথা উচ্ছেদের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলাে গ্রহণ করা প্রয়ােজন।

  • সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি : এ প্রথার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে হবে যাতে জনগণ এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
  • মহিলাদের অধিকার রক্ষার নিস্মতা বিধান : সংবিধানে মহিলাদের অধিকার রক্ষার জন্য পারিবারিক আইন, উত্তরাধিকার আইন, যৌতুক-বিরােধী আইন, নারী-নির্যাতন আইন প্রণয়ন ও সেগুলাে বাস্তবায়নের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • সামাজিক বর্জন: যৌতুকের দাবিদার যারা তাদের বিয়েতে যােগদান হতে বিরত থাকতে হবে এবং সামাজিক ভাবে এক ঘরে করতে হবে।
  • মহিলাদের কর্মসংস্থান: মেয়েদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
  • যৌতুক-বিরােধী আন্দোলন: বাংলাদেশে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে যৌতুক-বিরােধী আন্দোলন জোরদার করতে হবে।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

One Comment

  1. You wrote well about dowry and the system is still followed by many rich and educated people in our country. They think that they have the ability to gift payment gift or cash to bridegrooms and thus their daughters will be happy with that. Again some provide dowry to get positive feedback from the bridegroom’s family that his father-in-law is a very rich person. In this way this tradition is still going on in our Bangladeshi matrimony.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button